ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমিরাতে তিন মাসের মধ্যে কর্মী নিয়োগ শুরু হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

আমিরাতে তিন মাসের মধ্যে কর্মী নিয়োগ শুরু হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে ১৯ ক্যাটাগরিতে কর্মী নিয়োগ শুরু হবে। তার আগে দুই দেশের মধ্যে গঠন হবে নতুন যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি। এই কমিটি ঠিক করবে কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ হবে। কর্মী নিয়োগে কোন জনশক্তি রফতানিকারকের ভূমিকা থাকবে না। ফলে এই বাজারে সিন্ডিকেট হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ১৯ ক্যাটাগরিতে লোক নেয়ার বিষয়ে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তার অধীনে দুই দেশকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। আর এই কমিটি ঠিক করবে কীভাবে কত খরচে লোক যাবে। অভিবাসন ব্যয় (মাইগ্রেশন কস্ট), মেডিক্যাল থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি ঠিক করবে। এই বাজারে সিন্ডিকেট হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণে এখানে কোন জনশক্তি রফতানিকারকের ভূমিকা থাকবে না। দুই দেশের মধ্যে গঠিত কমিটিই সব কিছু দেখবে। তবে জনশক্তি পাঠাতে যদি ওয়ার্কিং কমিটি মনে করে জনশক্তি রফতানিকারকদের দরকার- সে ক্ষেত্রে তাদের এখানে সংযুক্ত করা হতে পারে। নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী তিন মাসের মধ্যে এই ১৯ ক্যাটাগরিতে কর্মী পাঠাতে পারব। তবে কোন কোন এজেন্সিকে দায়িত্ব দেয়া হবে সেটিও এখনো চূড়ান্ত নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমাদের কর্মী কিন্তু সব সময়ই যাচ্ছে। কিন্তু নতুন ১৯ ক্যাটাগরিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে এমওইউ সই হয়েছে। আমি সবাইকে বলব এই ১৯ ক্যাটাগরিতে আমিরাতে যাওয়ার জন্য কেউ যেন কাউকে টাকা না দেন। ১৯ ক্যাটাগরির সবই গৃহকর্মী। গৃহকর্মীরা অনেকটা বিনা টাকায় দেশটিতে যাচ্ছেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ এখন থেকেই কার্যকর হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরাটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, ‘তদ্বির সেন্টার’ অর্থাৎ ‘ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের’ মাধ্যমে বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগ করা হবে। ‘তদ্বির সেন্টারটি’ ইউএই সরকারের মানবসম্পদ ও এমিরাটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে সরাসরি কাজ করবে। এ কাজে ওই দেশের অন্য কোন রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির কোন ভূমিকা থাকবে না। তারা যদি মনে করে এজেন্সি দিয়ে কর্মী নিয়োগ করবে তাহলেই কেবল সম্ভব। অন্যথায় কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করার সুযোগ পাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কর্মীরা যাবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। যদি চাহিদা বেশি থাকে তাহলে আমরা জনশক্তি রফতানিকারক নিয়োগ করব। কিন্তু এ সব কিছুই হবে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তে। চুক্তির আলোকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যেতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার, বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজাসহ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ। সংবাদ সম্মেলনে সচিব নমিতা হালদার বলেন, আমিরাতের শ্রমবাজার খোলার আলোচনায় বারবার সামনে নিয়ে এসেছে আমাদের দুর্বলতাগুলো। তারা বার বার বলার চেষ্টা করেছে কোন অপরাধী যেন দেশটিতে না যায়। এ কারণে তারা চুক্তি করতে বার বার পিছিয়ে গেছে। নানা কথা আমাদের শুনতে হয়েছে। এরপরও আমরা ১৯ ক্যাটাগরিতে গৃহকর্মী পাঠানোর চুক্তি করতে পেরেছি। হয়তো আমাদের চাওয়া পূরণ হয়নি। কারণ বড় সেক্টরগুলোতে তারা কোন চুক্তি করতে রাজি হয়নি। অবশ্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সার্ভিস ও নির্মাণ সেক্টরে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারব। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যে ১৯টি ক্যাটাগরিতে কর্মী যাবেন সেগুলো হচ্ছে, হাউজমেড (গৃহকর্মী), প্রাইভেট সেইলর (ব্যক্তি মালিকানাধীন জাহাজের নাবিক), ওয়াচম্যান এ্যান্ড সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্তাকর্মী), হাউস হোল্ড শেফার্ড (রাখাল), ফ্যামিলি চোফার (গাড়িচালক), পার্কিং ভ্যালে ওয়ার্কার্স (গাড়ি পার্কিংয়ের কর্মী), হাউসহোল্ড হর্স গ্রুমার (ঘোড়া পালার সহিস), হাউস ফ্যালকন কেয়ারটেকার এ্যান্ড ট্রেইনার (বাজপাখি পালক), ডমেসটিক লেবার (গৃহভৃত্য), হাউস কিপার (গৃহ তত্ত্বাবধায়ক), প্রাইভেট কোচ, বেবি সিটার (শিশু পরিচর্যাকারী, হাউসহোল্ড ফার্মার (কৃষি কর্মী), গার্ডেনার (মালি), প্রাইভেট নার্স (ব্যক্তিগত সেবিকা, প্রাইভেট পিআরও (ব্যক্তিগত সহকারী), প্রাইভেট এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ার (কৃষিবিদ), কুক (পাচক)। আরব আমিরাতে বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে অপরাধে জড়িয়ে এক হাজার কর্মী এখন বিভিন্ন কারাগারে আছে বলেও জানান প্রবাসীকল্যাণ সচিব। বেশ কিছু নেতিবাচক কর্মকা-ের কারণেই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারটি খুলতে আমাদের অধিক চেষ্টা করে যেতে হচ্ছে। যেসব বাংলাদেশী কারাগারে আছে তাদের ৫৬ জন খুনের মামলার আসামি ও ১৪ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে। তবে বাকিদের দেশে ফেরাতে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে দেশটিতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বড় অঙ্কের রোহিঙ্গা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণেই আজ বিভিন্ন বাজার নষ্ট হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমিরাতের মন্ত্রী আমাদের বলেছেন, অতীতে অনেক বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এ কারণে তারা ৫০০ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি বাতিল করেছে। সেই ৫০০ এজেন্সি বন্ধ করে দিয়েছে একটি মাত্র এক্সিকিউটিভ অর্ডারে। এখন তারা কর্মী নিয়োগের জন্য শুধুমাত্র ‘তাকবির সেন্টারের’ মাধ্যমে নিয়োগ করবে।
×