ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আত্ম-সমবেদনাই সহানুভূতি

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

আত্ম-সমবেদনাই সহানুভূতি

রুবেল রেহান ॥ সহানুভূতি কি? এটা এমন এক অনুভূতি যখন আপনার সামনে কেউ কাতরাচ্ছে আর আপনি তাকে সহায়তা করার জন্য উদগ্রিব। তবে আত্মকেন্দ্রীকতার ধারণা স্বার্থপরতা হিসেবে পরিণত হচ্ছে। যাই হোক স্বার্থপরতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সহানুভূতিশীল মানসিকতা প্রকাশ করা জরুরী। কারণ, সম্ভব সত্ত্বেও আপনি কাউকে তো নর্দমায় ফেলতে পারেন না, যদিও তারা হয়ত আপনার কোন একটি আশা পূরণ করতে পারেনি। এজন্য বড়জোড় আপনি তাদেরকে নিন্দা করতে পারেন। নিজেকে জানার মাধ্যমে আত্ম-সমবেদনা আপনার প্রাণোচ্ছ্বলতা এবং এর স্থায়িত্বতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। যেন আপনার আত্ম-সমবেদনা একটি কম্বলবেষ্টিত নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে আর আপনি মনে করতেই পারেন যে আমি যদি আরও ঝুকি নিতে পারতাম! স্বার্থপরতার কারণ কিন্তু সহানুভূতির চর্চা থেকেই, যা থেকে আপনি ভাল অনুভব করেন। যখন নিজের অথবা অন্য কারও কষ্টে সাড়া দেন তখন কিন্তু আপনি স্বাভাবিকভাবেই পরিচর্যার মুডে চলে যান, যা আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে অপিটিস ও অক্সিটোসিন ও হরমোনের চাপ থেকে রক্ষা করে। ভাল বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক হলো এক প্রকার হরমোন বিনিময়ের ফলাফল, যা বিশ্বাস, সহানুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার হৃদস্পদন্দন হ্রাস পায় অনেকটা রক্তচাপ কিংবা কোরটিসল এর মতো, যা আপনাকে আরও সুস্থ রাখতে সহায়ক। মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা আমাদের অনুভূতিগুলোকে মিশিয়ে ফেলি। যদি অভ্যাস আর রাগ আমাদের আকড়ে ধরে ফেলে তবে এটা নিশ্চিত যে এর প্রতিফলন আমাদের স্বাভাবিক চলাচলে প্রভাব ফেলবে। নেতিবাচক পরিস্থিতে এটা অক্সিটোসিন পাস বা গ্রহণ করা অসম্ভব। এতে আপনার স্নায়ুকোষ বন্ধ হবে এবং আপনি চাইলেও ব্যাখ্যা করতে পারবেন না দুইটার মধ্যে, কোনটা সহায়তাকারী অথবা সঙ্কটপূর্ণ, নিষ্ঠুর অথবা দয়ালু। আপনার অনুভূতিই পালাবে আসলে কি আপনি আত্মরক্ষাকারী, ভ্রমবাতুলতার রোগী নাকি বিপজ্জনক। একটা অভিব্যক্তি আছে, যদি আপনি একটি তীর ছোড়েন তবে আপনি কেবল একটি টান অনুভব করবেন। এটা উদ্বিগ্নের কোন বিষয় না তীরটা কে বা কারা ছুড়লো, কেন ছুড়ল বা তারা কী আবারও ছুড়বে? শুধু তা বের হতে দাও, ব্যাস। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা মনে করে তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে তখন তারা দ্রুত প্রতিশোধ স্পৃহায় মেতে ওঠে। দুর্ভাগ্যবশত, এই আকাক্সক্ষা পুরণে এগিয়ে আসে তার বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবার। যার শেষটা হয় কোন আদালতে। আর সবসময় ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তাদের শরীরের বিষাক্ত রাসায়নিকই বৃদ্ধি করে না স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে। এর প্রভাব অন্যদের তুলনায় তাদের আরও ক্ষতির সম্মুখীন করে। আর এটাই হলো প্রতিষেধক সমবেদনা। সহানুভূতি শব্দটি ল্যাটিন Compati থেকে আগত যার অর্থ সুসামঞ্জস্য। তবে এর অর্থ শুধু এই নয় যে, আপনি কাউকে একটা হলমার্ক কার্ড পাঠালেন, আর তার ওপর একটি কান্নারত বাচ্চার ছবি এবং ভেতরে লেখা আপনি আসলে কতটা দুঃখিত, সহানুভূতিশীল। সহানুভূতি- এর প্রথম ধাপ হলো অন্যজনের ব্যথা অনুভব করা। দ্বিতীয় ও বৃহত্তম ধাপ হচ্ছে তার ব্যথা থেকে উত্তরণের প্রেরণা জোগানো। আর এটা সত্যিই কাজে দেবে যে আপনি শুধু তার ব্যথা দেখছেনই না তা সারানোর উপায়ও খুঁজছেন। যদি আমি ব্যথা অনুভব করি আর আপনি কেবল তা অনুভবই করেন তাতে আমার অবস্থার তো পরিবর্তন হবে না। আপনি কিভাবে আমার এই ব্যথাতুর অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেন? যদি আমার ব্যথায় আপনি আরও ব্যাথায় ভুগেন? সেক্ষেত্রে আমার সমস্যা মোকাবেলায় আবার আপনাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আমরা কখনও কখনও ভুল কারণে অন্যের সমস্যা অনুভব করতে যাই। আসলে আমরা নিজেদেরই জানি না আসলে কি করতে চাই এবং কেন চাই! নিজেরাই নিজেদের বিভ্রান্তিতে ফেলি। কিন্তু মন যখন করুণাময় হয় তখন কোন নিয়ম মানতে চায় না। যে কোন সময় যে কারও জন্য সাহায্যে এগিয়ে যাই, এটাই যথেষ্ট। হয়ত আপনি তার জন্য কিছু করতে পারলেন না তথাপিও তার দিক থেকে সে ভাল অনুভবই করে। অন্তত তার অসময়ে আপনি সঙ্গে আছেন, এটাও কি যথেষ্ঠ নয়! ততক্ষণ অন্য কারো জন্য করুণা বা সহানুভূতি দেখানো সম্ভব হবে না, যতক্ষণ না আমরা নিজের প্রতি করুণা বা সহানুভূতি দেখাব। একজন মা শিখিয়ে থাকেন কিভাবে তার সন্তানরা সুস্থ থাকবে আর এটা সে করতে পারে নিজে শান্ত থাকতে পারে বলেই। অন্যথায় দুজনই হারিয়ে যেত। বেশিরভাগ মানুষ যখন আত্মকেন্দ্রের বিষয়ে ভাবেন তখন তারা কেবল নিজেদের সমালোচনার চাবুকে পিটিয়ে নিজেকেই জর্জরিত করে। তারা নিজেদের ধিরে ধিরে মেরুদ-হীন করে তোলে। বিষণœতায় এতটাই মগ্ন থাকে যে কেউ আবার ভাবে তাদের থেকে তাদের পোশা প্রাণীটিও বেশি ভাল আছে! এজন্য আমাদের শিখতে হবে কিভাবে আমরা হৃদয়বান কিংবা সহানুভূতিশীল হব। আর এটা কিন্তু এমনিতে হবে না, যদি না আমরা তা শিখি। আর না হলে মর্মান্তিক ও পশুবর্গের আচরণে আবার ফিরে যেতে বেশি সময় লাগবে না। সূত্র : ডেইলি মেইল
×