ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার পরে আগামী ২৫ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছেন। সিডনিতে ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’- শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেবেন। আগামী ২৬ -২৮ এপ্রিল এই সামিট হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে আজ সোমবার ঢাকায় ফিরছেন। দেশে ফেরার পর তিনি সিডনিতে আয়োজিত এই সামিটে যোগ দেবেন। অস্ট্রেলিয়া সফর ঘিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। উইমেন সামিটে অংশ নেয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সম্মেলনের সাইড লাইন বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে। ১৯৯০ সাল থেকে প্রতিবছর গ্লোবাল উইমেন সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবছর টোকিওতে এই সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার এই সামিটের আয়োজক অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রায় এক হাজারের বেশি প্রতিনিধি এই সামিটে অংশ নেবেন। বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানও এই সামিটে যোগ দেবেন। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। নারীর অগ্রযাত্রায় বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নারীর ক্ষমতায়তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রশংসা করে আসছে। সে কারণেই সিডনির এই সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই সামিটে বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রার বিষয়টি তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়ায় উইমেন সামিটে যোগ দিতে গেলেও দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বৈঠকের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া সফর সামনে রেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত অনুবিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে এর আগে একটি চিঠি পাঠানো হয়। পরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত) এস এম মাহবুবুল আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের লিখিত ইনপুট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিতও করেছে। সে অনুযায়ী আলোচনার জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন ত্যাগ ॥ উত্তম চক্রবর্তী লন্ডন থেকে জানান, জাতিসংঘের পর কমনওয়েলথ সম্মেলনেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদস্যভুক্ত ৫৩টি দেশের পূর্ণ সমর্থন আদায় করে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৭ টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফর সঙ্গীরা। আজ সোমবার সকালে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডন ত্যাগের আগে হোটেলের সামনে এবং বিমানবন্দরে বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। এর আগে সৌদি আরবে গাল্ফ শিল্ড ওয়ানের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ৬ দিনের সফরে গত সোমবার মধ্যে রাতে লন্ডনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে প্রধানমন্ত্রী দু’দিনব্যাপী কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। এবারের কমনওয়েলথ সম্মেলনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন ও সফলতা হলো রেহিঙ্গা ইস্যুতে কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ঐক্যমতে নিয়ে আসা এবং তাদের পূর্ণ সমর্থন আদায় করা। জাতিসংঘের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনেও নিপীড়িত-নির্যাতিন রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্ট্রিন ট্রুডোসহ বড় বড় দেশগুলোর নেতারাও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ এবং বিশাল পরিমাণ উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র মানবিক কারণে দেশটিতে আশ্রয় প্রদানের বিষয়ে প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। একইসঙ্গে এ ইস্যুতে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম কর্ম অধিবেশনেই প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর দেশের অবস্থান এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পরও মিয়ানমার সরকার তাদের বিপুল পরিমাণ এই জনগোষ্ঠীকে ফেরত নিতে গড়িমসির বিষয়টিও কমনওয়েলথভুক্ত নেতাদের সামনে তুলে ধরে এ বিষয়ে সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদাত্ত আহ্বান জানান। সমাপনী দিনে অর্থাৎ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গৃহীত কমনওয়েলথ সম্মেলনে ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত লন্ডন ঘোষণার ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। গৃহীত যৌথ ঘোষণায় মিয়ামনারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করারও তাগিদ দেয় কমনওয়েলথ। শুধু কমনওয়েলথ সম্মেলনই নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি উঠে আসে। দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত তার পূর্বের অবস্থান থেকে অনেক দূর সরে এসেছে। দেশটি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনেও সহযোগিতা করে আসছে। এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠকে বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনের পার্টিতেও যোগ দেন। এ দিকে লন্ডনে বিএনপির হাতেগোনা কয়েক নেতাকর্মীর সন্ত্রাসী কর্মকা-, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ওপর হামলার চেষ্টা এবং সবশেষ সফরে আসা একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। শনিবার যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে পালিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে দেশটির সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেশে থাকতেও সন্ত্রাসী কর্মকা- করেছে, এখন লন্ডনে বসেও সন্ত্রাসী কর্মকা- ও ষড়যন্ত্র করছে। তবে যেভাবেই হোক তাকে (তারেক রহমান) আমরা দেশে ফেরত আনবই। লন্ডন থেকে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে হোটেল ক্লারিজে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে সৌজন্য সাক্ষাত দেন। এ সময় তাদের মধ্যে রাজনীতি, আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা হয়।
×