ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসা দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসা দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। রবিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ দলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানান। এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়া সব সুবিধা ভোগ করছেন। কারাগারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বাড়তি কিছু করতে হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হবে। বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এই চিকিৎসা যেহেতু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর, অতএব উপযুক্ত স্থানে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করা হোক। আমরা বলেছি যে, ইউনাইটেড হাসপাতালে আগেও ওনার পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন সেই ডাক্তারদের প্রতি তার আস্থা আছে। তাই চাইলেই তারা সেখানে চিকিৎসা করাতে পারেন। এতে অন্য কারও অনুমতির দরকার হয় না। এজন্য কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই যথেষ্ট। নজরুল ইসলাম বলেন, ধীরে ধীরে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কারাবিধি মেনে খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং তিনি সুস্থ আছেন। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ায় খালেদা জিয়া এখন চলতে পারেন না। কয়েক মাস আগে লন্ডনে ওনার অপারেশন হয়েছে। একটা চোখ অনেক লাল হয়ে গেছে। ওনার অর্থোপেডিক প্রবলেম আছে, দুই পায়েই রড বসানো। উনি হাঁটতে পারছেন না, দুর্বল বোধ করছেন খুব বেশি। নানা রকমের কমপ্লিকেশন আছে। নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যা বলেছি সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য পজেটিভ। তিনি আইজি প্রিজন সাহেবকে সেখানে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। ওনার সামনেই কথা হয়েছে। যেখানে খালেদা জিয়ার ভাল চিকিৎসা বা পরীক্ষা করা সম্ভব সেখানে তা করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মতির কথা জানিয়েছেন। এখন আমরা অপেক্ষা করব আইজি প্রিজন সাহেব কী ব্যবস্থা নেন। নজরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি নেয়া প্রয়োজন। সেটা জেলখানায় সম্ভব নয়। অন্য কেউ এসে শিখিয়ে দিয়ে যাবে আর জেলখানায় নার্সরা তা করবে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ফিজিওথেরাপিতে কোন ভুল হলে সেটা বরঞ্চ স্বাস্থ্যের জন্য, রোগের জন্য আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেজন্য আমরা বলেছি, প্রফেশনাল ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। নজরুল বলেন, আমরা বলেছি খালেদা জিয়া যদি দোতলা থেকে নিচে নামতে না পারেন, তাহলে তার মহিলা আত্মীয়-স্বজনদের দোতলায় উঠে তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা উচিত। আশা করছি তারা সেটা করবেন। কারণ মানুষ অসুস্থ হলে আত্মীয়-স্বজনদের দেখলে খুশি হয়, রোগের উপশম হয়। বন্দী অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার নজির আছে- এ বিষয়ে কি বলবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, এই প্রশ্ন আসে কেন আমি বুঝি না। কারণ তার চিকিৎসা আমরা এখানকার হাসপাতালেই করার কথা বলছি। এখানেই যদি চিকিৎসা হয়ে যায় তাহলে অন্য আর প্রশ্ন আসবে কেন? নজরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আমরা আরও আলোচনা করেছি খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমরা যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে যাতে কোথাও বাধা সৃষ্টি করা না হয়। উনি বলেছেন, এটা উনি সংশ্লিষ্টদের বলবেন। আমরা ২৫ এপ্রিল প্রেসক্লাব কিংবা বিএনপি অফিসের সামনে মানববন্ধন করতে চাই। আমরা বলেছি, সেটা আমরা যাতে করতে পারি, যেন কোন বাধা সৃষ্টি না হয়। এছাড়া আমরা শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক জনসভা করার জন্যও পুলিশের অনুমতি চেয়েছি। আমরা বলেছি, আপানারা তাদের বলে দেবেন যাতে অনুমতি আমরা পাই। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস, এই দিবস পালনে কাউকে বাধা দেয়া উচিত হবে না। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়া সব সুবিধা ভোগ করছেন। কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বাড়তি কিছু করতে হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সবার সঙ্গে দেখা করতে চান না। খালেদা জিয়া মাঝে মাঝে বলছেন তিনি সবার সঙ্গে দেখা করবেন না। উনাকে যেন দেখা করতে আসা লিস্টটা আগে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সে অনুযায়ী তিনি যার সঙ্গে দেখা করতে চান তার সঙ্গে দেখা করবেন। জেলকোড অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। যেমন ৭, ১০, কিংবা ১৫ দিন পর পর দেখা করতে হয়। তবে আমি সঠিক সময়টা জানি না। সেই নির্ধারিত সময় পর পর কিন্তু খালেদা জিয়ার আত্মীয় বা রাজনৈতিক নেতারা দেখা করছেন। কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে বিএনপি নেতাদের দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আগেই কতগুলো রোগে ভুগছিলেন। আর্থাইটিস, স্পন্ডিলাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস- এসব রোগে তিনি ভুগছিলেন। জেলখানার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে আমরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন সেগুলোর বিষয়ে আমরা একের পর এক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপরও তিনি কয়েকজন ডাক্তারের কথা বলছিলেন, যেসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তার চিকিৎসা সেবা দিতেন। তিনি জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছিলেন। আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা করেছি। তারা দেখেছেন ও আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার শরীরে আর্টিফিসিয়াল নি (কৃত্রিম হাঁটু) সংস্থাপিত আছে। এ ধরনের মেটাল শরীরে থাকলে নাকি সব মেশিনে তারা এমআরআই করতে পারে না। এ জন্য বিশেষ এমআরআই মেশিন লাগে। এটি তারা আমাদের জানিয়ে গেছেন। এই এমআরআই মেশিনটি ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে, এ জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের জন্য তারা রিকোয়েস্ট করেছেন। এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রয়েছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা যা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুই নেতাকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বলেছি, আমাদের যা যা করার তা করছি। সামনে যা প্রয়োজন হবে সেটাও আমরা করব। জেলকোড অনুযায়ী হবে, জেলকোডের বাইরে যদি কিছু করতে হয় সেটা আমরা পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেব। পরামর্শ হচ্ছে ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ। আশাকরি তারা ডায়াগনোসিসের জন্য যেসব বিষয় বলেছেন আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সেসব ব্যবস্থা করব। বিএনপির ২৫ এপ্রিল মানববন্ধনে বাধা না দেয়া ও ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশের অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবকিছু স্পষ্ট। আমরা সব সময় বলে আসছি কোন পলিটিক্যাল পার্টি এমন কিছু করবেন না যাতে আইনশৃঙ্খলার বিঘœ ঘটে। সেক্ষেত্রেই আমরা বিধিনিষেধ আরোপ করি। তারা মিটিং করতে পারবে কি পারবে না সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমাদের যা করণীয় আমরা তা করছি। আমি তাদের বলেছি যিনি অনুমতি দেবেন সেই ডিএমপি কমিশনারকে আপনারা লিখিতভাবে জানান। যদি কোন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বা অন্য কোন অবস্থা না থাকে তবে উনি অবশ্যই ব্যবস্থা করবেন। আমি বলেছি শান্তিপূর্ণ যেসব কর্মসূচী দেবেন সেগুলোর কোনটাতেই পুলিশ কমিশনার বাধা দেবেন না। বন্দী অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নজির আছে, এ বিষয়টি সরকারের মাথায় আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের যেসব চিকিৎসার কোনটার জন্যই তো তিনি ঘন ঘন বিদেশে যাননি। এমন নজির তো নেই। তিনি দেশে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
×