ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে নানা গুজব

উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চান খালেক ॥ মঞ্জুর স্বপ্ন গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চান খালেক ॥ মঞ্জুর স্বপ্ন গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, বাগযুদ্ধ, তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি নির্বাচনী রণকৌশল নির্ধারণ এবং ইশতেহার তৈরির কাজও প্রায় সম্পন্ন করেছেন। কেসিসি’র উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা ও নগরবাসীর সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির অঙ্গীকার নিয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছেন। অপর দিকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ‘গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি’ সেøাগান সামনে রেখে নগরবাসীর সামনে নিজের স্বপ্ন-ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে ইশতেহার দিতে চান। ইতোমধ্যে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ১৯ দফা ইশতেহার চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আগের চেয়ে দ্বিগুণ বরাদ্দ আনবেন এমন প্রত্যাশা রেখে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে। তার ইশতেহারর প্রস্তাবনায় ৩১ দফা রয়েছে। চূড়ান্ত করার সময় এর কিছু হেরফের হতে পারে। তবে শীঘ্রই ইশতেহার তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে। তার ইশতেহার নগরীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, মশক নিধন, মাদক মুক্ত করা, জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ খাল অবৈধ দখলমুক্ত করণ, রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ একগুচ্ছ অঙ্গীকার থাকবে। একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিক মকবুল হোসেন মিন্টুর নেতৃত্বে একটি প্যানেল এই ইশতেহার তৈরির কাজ করেছেন। এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে ৩১ দফা ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৮ দফার ইশতেহার দিয়েছিলেন খালেক। আগের ইশতেহারের সঙ্গে নতুন ইশতেহার বেশ মিল রয়েছে। তার ইশতেহার নাগরিকদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। এ বিষয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার শেষের পথে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হলেই সাধারণ নাগরিকের সামনে ইশতেহার তুলে ধরব। নগরবাসীর উন্নয়ন বঞ্চনা ও খুলনার মানুষের প্রাণের দাবিগুলোকে বিচেনায় নিয়ে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়ন বঞ্চনার কথা ভাল ভাবেই জানেন, তাই অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দ তার কাছ থেকে আমি আনতে পারব বলে মনে করি। নগরবাসী আমাকে নির্বাচিত করলে পিছিয়ে পড়া কেসিসির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হব। অপরদিকে খুলনা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক সমন্বয়ে একটি টিম নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করেছেন বলে নগর বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ইশতেহার থাকবে- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সবুজে ঘেরা মনোরম মহানগরী হিসেবে খুলনাকে গড়ে তোলার বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা। এর মধ্যে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণ, নাগরিক শাসন প্রতিষ্ঠা, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরামর্শ পরিষদ গঠন, গুণিজনের সম্মাননা প্রদান, শিশু-বয়ষ্ক ও প্রতিবন্ধী সহায়ক পরিকল্পনা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক উন্নয়ন ও বর্জ্য পানি নিষ্কাশন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক সেবার ক্ষেত্র, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি না করে সেবার মান বাড়ানোর পরিকল্পনাসহ ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন বিএনপি সমর্থিত এ মেয়র প্রার্থী। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে চমক থাকবে। প্রতীক পেয়ে প্রথম দিনই ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে চাই। আকাশচুম্বি বা কাল্পনিক কোন স্বপ্নের অবাস্তব ইশতেহার দিতে চাই না, নগরবাসীর কাক্সিক্ষত সব কিছুর সারমর্ম হবে আমাদের ইশতেহারটি। বিএনপি কেন সিটি নির্বাচনে অংশ নিলো, সে ব্যাখ্যাও ইশতেহারে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের হুঁশিয়ারি ॥ আগামীকাল মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে প্রচার। খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ও কেসিসি নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিভাবে প্রচারে শুরু হলে আচরণবিধির বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণবিধিমালা অনুযায়ী ২৪ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারে শুরু করতে পারবেন। আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করা যাবে। মেয়র পদে প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে এবং কাউন্সিলর পদে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে একটি করে মাইক ব্যবহার করা যাবে। জনসভা নয়, শুধুমাত্র পথসভা করা যাবে তাও মানুষের যাতায়াত ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ করে নয়। পথসভায় কেউ মাইক ব্যবহার করলে তখন অন্য মাইক দিয়ে প্রচারণা চালানো যাবে না। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য একটিমাত্র মাইক বরাদ্দ থাকবে প্রচারণার জন্য। তবে মাইকিংয়ের জন্য রিটার্নিং অফিসারের মূল অনুমতিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এক মাইক বলতে একটিমাত্র চোঙা বোঝাবে। কেউ একই মাইকে দুইটি চোঙা ব্যবহার করলে সেটিও নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘনের আওতায় আসবে। কাল প্রচারে নামবেন তালুকদার আব্দুল খালেক ॥ খাজা খানজাহান আলী (রহ) মাজার জিয়ারত করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। খানজাহান আলী (রহ)এর মাজার জিয়ারতের মধ্যদিয়ে আগামী ২৪ এপ্রিল নির্বাচনী প্রচারে নামবেন তালুকদার আব্দুল খালেক। রবিবার বাদ জোহর বাগেরহাটে খাজা খানজাহান আলী (রহ) মাজার জিয়ারত করেন কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী। খালেক-মঞ্জুর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পরস্পরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে অভিযোগ করেছেন তার লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার। অভিযোগ আমলে নিয়ে সোমবার বিকেল ৪টার মধ্যে দুই প্রার্থীকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার মোঃ ইউনুচ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রবিবার বিকেলে এ চিঠি তালুকদার আব্দুল খালেক ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কাছে পাঠানো হয়। শনিবার (২১ এপ্রিল) এই দুই মেয়র প্রার্থী পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রির্টানিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। নির্বাচন কমিশনকে দেয়া অভিযোগে তালুকদার আব্দুল খালেক উল্লেখ করেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু গত ১৮ এপ্রিল বুধবার খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেসব্রিফিং কালে রঙিন ব্যানার ব্যবহারসহ সেখানে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করেছেন। যা ১৯ এপ্রিল সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যা আচরণ বিধি সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। অপর দিকে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া অভিযোগে নজরুল ইসলাম মঞ্জু উল্লেখ করেন, ২০ এপ্রিল রাতে খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদসহ জেলার নেতারা ইউনাইটেড ক্লাবে নৌকা প্রতীকের ব্যানার টানিয়ে সভা করেন। সেখান থেকে কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। যে সংবাদ শনিবার স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের এ কর্মকান্ড খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধির লঙ্ঘন। হলফনামায় তথ্য গোপন করলে প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদাত হেসেন চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনে কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও হলফনামায় তথ্য গোপন করলে এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোন প্রার্থীর হলফনামায় তথ্য গোপনের কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের কাছে এখন পর্যন্ত নেই বলেন তিনি। রবিবার দুপুরে তিনি গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমন্বয় কমিটির সভায় যোগদান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ওইসব কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কেএম আলী আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (দায়িত্বপ্রাপ্ত) খ ম কবিরুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব কুমার দেবনাথ, জেলা আনসার কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, র‌্যাব-১-এর স্পেশালাইজড কোম্পনির কোম্পানি কমান্ডার আব্দুস সালাম প্রমুখ। কমিশনার আরও বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সমন্বয় কমিটি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেল গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এখন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কাজ করছেন। ২৪ এপ্রিল থেকে আরও ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সঙ্গে যুক্ত হবেন। ১৩ মে ভোটের দুই দিন আগে থেকে আরও ৩৮জন নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে। এ সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫৭জন নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে ১৯টি টিম নির্বাচনী এলাকায় কাজ করবে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ আইনের ওপর চলে। কোন প্রার্থী আইনের ব্যত্যয় ঘটালে সেখানে যতটুকু আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হয় সেটা নেয়া হবে। তিনি জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের ব্যবহার সম্পর্কে এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। খুব সম্ভবত আমরা একটা বা দুইটা ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করার চেষ্টা করব। আর সীমিত সংখ্যক কেন্দ্রকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার ইচ্ছে আছে। নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। গাজীপুরে মেয়র পদে জামায়াত নেতার প্রার্থিতা প্রত্যাহার ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেরদিন রবিবার নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নানা গুজব শোনা গেছে। এদিন একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন সংগঠন ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের সমর্থন আদায়ের জন্য নানাভাবে জোর লবিংয়ের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। রবিবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জামায়াতের মহানগর শাখার আমীর এসএম সানাউল্লাহ দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এদিন তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারের সঙ্গে তার বাসায় সাক্ষাত করে সমর্থন জানিয়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থনে মহাজোটের শরিক জাসদ মনোনীত অপর মেয়র প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানার মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে দিনভর নানা গুজব শোনা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থনের ব্যাপারে তিনি বিকেল পর্যন্ত দলের হাইকমান্ডের কোন নির্দেশ পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, রবিবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এসএম সানাউল্লাহ, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ২৮নং ওয়ার্ডের ডাঃ আজিজুর রহমান ও ৩৭নং ওয়ার্ডের সাদ্দাম হোসেন তন্ময় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এনিয়ে এ পর্যন্ত মেয়র প্রার্থী একজন ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ৩ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থীরা বিজয়ী হতে তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটের হিসাব নিকাশ করে নানা পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। এ নির্বাচনের প্রার্থিতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ দিন সোমবার (২৩ এপ্রিল)। এ দিনটিকে সামনে রেখে তারা বিভিন্ন সংগঠন ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের সমর্থন আদায়ের জন্য নানাভাবে জোর লবিং চালিয়েছেন। এতে তারা সুফলও পেয়েছেন। যা নির্বাচনের জয় লাভে অনেকটা প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় ভোটাররা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেরদিন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিশ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের মহানগর শাখার আমীর এসএম সানাউল্লাহ দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এদিন তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সঙ্গে তার বাসায় সাক্ষাত করে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। এ সময় তিনি ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে দলের সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রচার চালাতে এবং প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে ভোটারদের ঘরে ঘরে যেতে অনুরোধ করেন। এ সময় গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ খায়রুল আনাম, নায়েবে আমির মোঃ জামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সেক্রেটারি মোঃ আফজাল হোসাই, মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মিজানুর রহমান, সেক্রেটারি ফখরুল আলম সিফাতসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দসহ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জামায়াত নেতা সানাউল্লাহ বলেন, জামায়াতের হাইকমান্ডের নির্দেশে আমরা জোটগতভাবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। এদিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জামায়াতের সমর্থনে বিশ দলীয় জোটের ঐক্য আরও দৃঢ় হলো। এছাড়াও গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা নাসির উদ্দিন, জেলা যুব জমিয়তের সভাপতি হাফেজ শাহ আলম, জেলা জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুসা কালিমুল্লাহ, জেলা ছাত্র জমিয়তের সভাপতি মুফতি শাহাদাত হোসেন প্রমুখ নেতারা হাসান উদ্দিন সরকারের বাসায় গিয়ে তাকে সমর্থন দেন এবং ২০ দলীয় জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রবিবার দুপুরে ছয়দানা এলাকার নিজ বাসায় গাজীপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নির্বাচনী নানা কৌশল নিয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোঃ মোহর আলীর সভাপতিত্বে সাবেক সাংসদ মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার জননেতা কাজী মোজাম্মেল হকসহ মহানগরের ৫৭নং ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, এমদাদ হোসেন, আব্দুল হামিদ, মোঃ লিয়াকত আলী, এ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, মোঃ হাতেম আলী, মোঃ মোজাফফর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভায় মুক্তিযোদ্ধারা শেখ হাসিনার মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন জানান। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শহিদুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মোকছেদ আলম, সহ-দফতর সম্পাদক মোঃ মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থন জানিয়ে মহাজোটের শরিক জাসদ মনোনীত অপর মেয়র প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন- এমন সংবাদ দিনভর শোনা গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। নানা গুজবের একপর্যায়ে তিনি চান্দনা এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থনের ব্যাপারে বিকেল পর্যন্ত দলের হাইকমান্ডের কোন নির্দেশ পাওয়া যায়নি। ফলে তিনি এখন পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সোমবার (২৩ এপ্রিল) প্রার্থিতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৪ এপ্রিল এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মে। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর হতে এটি হবে দ্বিতীয় নির্বাচন।
×