ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাড়তি মুনাফার চেষ্টা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

রমজানে মজুদ ও ভেজাল বিরোধী অভিযান

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

রমজানে মজুদ ও ভেজাল  বিরোধী অভিযান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার অসাধু ব্যবসায়ীদের কোন সুযোগ দিতে চায় না সরকার। এ কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে আগেভাগেই মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। মিল-কারখানা, পাইকারি ও খুচরা বাজার বিশেষ করে যারা পণ্যের অবৈধ মজুদ রেখে মূল্য বাড়িয়ে দেবে তাদের বিরুদ্ধে চলবে বিশষে অভিযান, নেয়া হবে কঠোর আইনী ব্যবস্থা। অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাস এলেই পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে এবার আগে থেকেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান শুরু করবে অধিদফতর। যেন রমজানে পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সতর্ক থাকেন। জানা যায়, দেশের বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে রাজধানীর পাইকারি বাজারে অভিযান শুরু হবে। যারা ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে বাড়তি মুনাফা আয়ের চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অধিদফতর বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে (এপিবিএন) সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে রাজধানীতে প্রতিদিন দুটি অভিযান চালানো হবে। পুরো মাস জুড়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারও অভিযান চলবে। রাজধানীর চকবাজার, বেইলি রোড, ধানমন্ডিসহ ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয় এমন সব অভিজাত এলাকায় অভিযান পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, ‘নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করা যাবে না। খাদ্যে ভেজাল জিনিসও দেয়া যাবে না। এ জন্য রমজানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ইফতারি তৈরির বিষয়ে বিক্রেতাদের বেশি সতর্ক করব। কেউ এ বিষয়ে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া ভেজালপণ্য বিক্রি, মিথ্যা বিজ্ঞাপন, ওজনে কারচুপি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়সহ ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলেই আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে।’ অধিদফতরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতে সারাদেশে অভিযান চলবে। যেসব ব্যবসায়ী অনৈতিক কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর্থিক জরিমানাসহ প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে।’ ‘রমজান মাসে বেশি চাহিদা থাকে ছোলা, ডাল, তেল, চিনি ও খেঁজুরসহ কয়েকটি পণ্যের। এসব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মিল ও আড়তগুলোতে অভিযান শুরু হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে রাজধানীর পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার, কাওরানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু হবে’- যোগ করেন তিনি। এ দিকে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আলহাজ আব্দুস সালাম বলেন, অভিযান শুরু হলে আমরা স্বাগত জানাব। তবে অভিযানের নামে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আসন্ন রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ স্বাভাবিক রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবারহ ঠিক থাকলে দাম বাড়বে না। এ জন্য বাজার তদারকির পাশাপাশি সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে বলেও জানান তিনি। পণ্যে ভেজাল সম্পর্কে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘যারা পণ্যে ভেজাল করে মুনাফা লুটে তারা ব্যবসায়ী নয়, মলম পার্টি। এসব অসাধু ব্যক্তির বদনামের ভাগি আমরা হতে পারি না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক, এটা আমরা সবাই চাই।’ অধিদফতর জানায়, যদি কোন প্রতিষ্ঠান ওজন বা পরিমাপে কারচুপি করে, পণ্যের মোড়কে খুচরা বিক্রির মূল্য না লিখে বা নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্য দাবি করে তাহলে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন- ২০০৯ অনুসারে এক বছর কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয়দ- প্রদানযোগ্য অপরাধ। অপরদিকে, কোন পণ্যে জেনেশুনে ক্ষতিকারক দ্রব্য মিশ্রিত করলে বা নকল পণ্য বিক্রি করলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী তিন বছরের কারাদন্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
×