ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিশোর অপরাধ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

 কিশোর অপরাধ বাড়ছে

দেশে কিশোর অপরাধ বাড়ছে। রাজধানীর উত্তরাতেই রয়েছে কয়েকটি গ্রুপ। সেগুলোর নামেরও নানা বাহার- নাইন স্টার, ডিস্কো বয়েজ, বিগ বস ইত্যাদি। এ রকম আরও একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে রাজধানী ও দেশের অন্যত্র। অধিকাংশই কিশোর বয়সী- নাইন-টেন থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এসব গ্রুপের আবার গ্যাং লিডারও রয়েছে, যারা অপেক্ষাকৃত অল্প শিক্ষিত এবং মস্তান শ্রেণীর। অধিকাংশই ফেসবুক, ইন্টারনেটে আসক্ত, মাদকাসক্ত, ছোটাখাটো ছিনতাই-রাহাজানির সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের খাতায় নাম লেখানো উচ্ছৃঙ্খল বিপথগামী সন্তান। এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের সম্পর্ক মোটেও ভাল নয়- প্রধানত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে। ফলে মারামারি, হানাহানি, খুনাখুনি তদুপরি প্রতিশোধ স্পৃহা লেগেই থাকে। গত বছর উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান কবির হত্যার এক বছরের মাথায় ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। ২০ মার্চ ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে নাবিল মোবারক নামের এক স্কুলছাত্রকে হত্যার চেষ্টা চালায় তারা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাবিল এখন ভর্তি ঢামেক হাসপাতালে। উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত অভিভাবকদের মধ্যে এই প্রশ্ন জেগে ওঠা স্বাভাবিক যে, এসব কী হচ্ছে দেশে? একেবারে কিশোর বয়সী বাচ্চা ছেলেমেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকা-ে! প্রায় সবাই সমবয়সী, সহপাঠী বন্ধু, একই স্কুল অথবা পাশাপাশি স্কুলেই পড়াশোনা করে সবাই। সর্বোপরি নিকট প্রতিবেশী। চাই কী, ঈদ কিংবা অন্য কোন পালাপার্বণে একজন আরেকজনের বাসায়ও গিয়েছে, দাওয়াতও খেয়েছে। মিলিত হয়েছে কোন উৎসব আয়োজনে। সেই বন্ধুই কিনা হঠাৎ করে একদিন ভয়ঙ্কর শত্রু হয়ে যায়, একেবারে খুন করে ফেলে! কিশোর-তরুণদের এভাবে বখে যাওয়া, দলাদলি, গ্রুপিং-লবিং, পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ইত্যাদিকে বলা হয় ‘গ্যাং কালচার।’ আইনের পরিভাষায় জুভেনাইল সাবকালচার। এ নাকি নগরায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে একে কালচার বলতে দ্বিধা জাগে। বরং বলা যেতে পারে অপসংস্কৃতি- যা সর্বতোভাবে ঘৃণ্য ও পরিত্যাজ্য। উত্তরার নাইন স্টার ও ডিস্কো বয়েজেরও গডফাদারের সন্ধান মিলেছে। পুলিশের খাতায় তাদের নাম-ধাম-পরিচয় আছে। আছে মামলা, গ্রেফতার এবং জামিনের খবরও। উত্তরা পুলিশের নথিপত্র বলছে, এই দুই গ্রুপের মধ্যে গত কয়েক মাসে সংঘাত-সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে পাঁচটি, তিনটি মারামারি, চতুর্থটি ছুরিকাঘাত এবং পঞ্চমটি খুনের। প্রশ্ন জাগে, এটাই কি শেষ? এও সত্য যে, উত্তরার মতো ভয়ঙ্কর সব গ্রুপ গজিয়ে উঠেছে ও উঠছে রাজধানীর অন্যত্র, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও অন্যত্র। এরা প্রায়ই তুমুল হর্ন বাজিয়ে তীব্র গতিতে রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায় হোন্ডায়, সমবয়সী মেয়েদের সকাল-বিকেল উত্ত্যক্ত করে, ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়, মোবাইলে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে, খেলার মাঠে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের ওপর, সর্বোপরি ছিনতাই-চাঁদাবাজি তো আছেই। বেপরোয়া এসব তরুণ কিসের উন্মাদনা, বঞ্চনা অথবা বীরত্ব দেখাতে এসব করে বেড়ায় সমাজে? প্রসঙ্গত পাঠকের মনে পড়তে পারে ঐশীর কথা, যে তার পুলিশ অফিসার বাবা ও মাকে কফির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলেছিল প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে। অথবা চট্টগ্রামের ঘটনাই বা কম কী? যেখানে সহপাঠী বন্ধুরা ছাদে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়ে মেরে ফেলেছিল হিমাদ্রীকে। কিশোরদের এসব অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য শুধু মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ফেসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে দোষ দেয়া যাবে না। শুধু থানা-পুলিশ দিয়েও হবে না। এক্ষেত্রে সবিশেষ গুরুদায়িত্ব রয়েছে সমাজ, পরিবার ও অভিভাবকদের, বিশেষ করে মা-বাবা, ভাইবোনের। খেলাধুলা কিংবা পার্টির ছলে ছেলেটি কোথায় যায়, কী করে, কাদের সঙ্গে মেশে, তা নিয়মিত রাখতে হবে নজরদারিতে। পাড়া-মহল্লার মুরব্বিরাও এক্ষেত্রে দেখভাল করতে পারেন। যথাযথ ভালবাসা দিয়ে সন্তানদের বোঝালে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা পেতেও পারে তারা।
×