ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর

ভারতে শিশু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু্দন্ড

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

 ভারতে শিশু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু্দন্ড

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রবিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা ১২ বছর পর্যন্ত মেয়েদের ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হলে ফাঁসির বিধান সম্বলিত অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেছেন। শনিবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ওই অর্ডিন্যান্স জারির অনুমোদন দেয়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ভারতীয় দ-বিধির আইনে আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে। ফৌজদারি আইন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০১৮ অনুসারে, এখন থেকে এ ধরনের মামলার জন্য নতুন ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত গঠন করা হবে এবং সব থানায় এজন্য বিশেষ ফরেনসিক কিটস দেয়া হবে। অধ্যাদেশে ১৬ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত মেয়েদের ধর্ষণের দায়ে কঠোর শাস্তি এবং ১২ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। শুধু ধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শাস্তি সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড থেকে বাড়িয়ে দশ বছর করা হয়েছে। ১৬ বছরের কম বয়সী কোন মেয়েকে গণধর্ষণের ক্ষেত্রে দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের ক্ষেত্রে সাজা ন্যূনতম ২০ বছর সশ্রম কারাদন্ড করা হয়েছে। ভারতীয় দ-বিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্যপ্রমাণ আইন এবং শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০১২ (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস এ্যাক্ট বা পিওসিএসও) পরিবর্তনের জন্য অধ্যাদেশ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। নয়া অধ্যাদেশে দ্রুত তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। সব ধরনের ধর্ষণের মামলায় তদন্তের সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। বিচারের সময়সীমাও দু’মাস করা হয়েছে। আপীল মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে ছয় মাসের মধ্যে। অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, ১৬ বছরের কম বয়সী কাউকে ধর্ষণ বা গণধর্ষণ করা হলে অভিযুক্তরা আগাম জামিনও পাবে না। শনিবার পার্লামেন্ট অধিবেশন না থাকায় অর্ডিন্যান্স জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। জানুয়ারি মাসে সামগ্রিকভাবে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিরোধিতা করে সুপ্রীমকোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের মত জানিয়েছিল। সে সময় কেন্দ্রীয় সরকারের আইন কর্মকর্তা বলেছিলেন, মৃতুদন্ড সবকিছুর উত্তর নয়। তবে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো শিশু ধর্ষণে মৃত্যুদন্ডের সুপারিশ করে আইন তৈরি করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়। এবার উন্নাও এবং কাঠুয়া ঘটনা নির্ভয়ার স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমে পিওসিএসও আইনে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট বলেন, আমরা নীতিগতভাবে মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে। তবে এখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। এমনও নয় যে, আইনে মৃত্যুদ- নেই বলেই ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। সরকার আগে ধর্ষণের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিক। শনিবারই সুপ্রীমকোর্টে একটি শিশু ধর্ষণের শুনানির সময় অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল জানান, পিওসিএসও আইন সংশোধন করে মৃত্যুদ-ের মতো কঠোর বিধান করা হচ্ছে। যদিও এ ধরনের প্রস্তাব এবারই প্রথম নয়। ২০১২ সালে রাজধানী দিল্লীতে বাসে নির্ভয়া ধর্ষণকা-ের পরও একই প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। কিন্তু সেবার মন্ত্রিসভায় ওই প্রস্তাব অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়। ভারতের বর্তমান আইন অনুযায়ী অপ্রাপ্ত বয়স্ক ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন এবং সর্বনিম্ন সাজা সাত বছরের জেল। দেশটিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ধর্ষণের অভিযোগে সাজা হওয়ার হারের চিত্র অত্যন্ত খারাপ। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা প্রতি দশ জনে মাত্র তিনজনের সাজা হয়। বাকিরা প্রমাণের অভাবে খালাস পেয়ে যায়। ২০১৬ সালে সারা ভারতে ২০ হাজার নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে।
×