ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দায়িত্বহীনতায় হালদায় রেণু নষ্ট ॥ হতাশ মৎস্যজীবীরা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

দায়িত্বহীনতায় হালদায় রেণু নষ্ট ॥ হতাশ মৎস্যজীবীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, ২২ এপ্রিল ॥ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে জাতীয় মা মাছ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে। ডিম ছাড়ার পর আহরিত ডিম সংগ্রহ করার মহোৎসব চললেও হালদা পাড়ের মৎস্যজীবীরা শেষতক হতাশ হয়ে পড়েছেন। বেসরকারীভাবে গড়ে তোলা সনাতনী কুয়াগুলোতে আহরিত ডিম ফোটানো কার্যক্রম ঠিকমতো সম্পাদন করা হলেও সরকারী হ্যাচারিগুলোতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। মৎস্যজীবীরা সরকারী হ্যাচারিগুলো ভাড়া করলেও অব্যবস্থাপনা, অপরিচ্ছন্ন এবং পানি নিষ্কাশনের অভাবে ২ দিনে অন্তত ১২ কেজি পরিমাণ রেণু মারা গেছে। যার মূল্য ১৫ লক্ষাধিক টাকা। মৎস্যজীবী এবং ডিম সংগ্রহকারীদের অভিযোগ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের গরিমসি, দায়িত্বহীনতা এবং গাফিলতির কারণে হাটহাজারী এবং রাউজানে সরকারী ৭টি হ্যাচারির অনেক কুয়া নষ্ট। ফলে, জরুরীভিত্তিতে ডিম সংগ্রহ করা হলেও যথাসময়ে তারা ডিম সংরক্ষণ করতে পারেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন। হাটহাজারী এলাকায় মদুনাঘাট হ্যাচারি, শাহা মাদারী হ্যাচারি ও মছুয়া ঘোনা এ তিনটি সরকারী হ্যাচারির অনেক কুয়াই নষ্ট। এসব কুয়ার বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ও ছিদ্র থাকায় পানি জমা রাখা সম্ভব হয়নি। যার কারণে, ডিম আহরণকারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সনাতনী কুয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারী কর্মকর্তা জানান, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের এহেন গাফিলতির কারণে সরকার মৎস্য খাত থেকে অনেক রাজস্ব হারাতে পারে। এ ব্যাপারে, ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, বিগত বছরগুলোর চেয়ে হালদায় মা মাছ অতিরিক্ত ডিম দিয়েছে এবং তারা পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। তবে সরকারী হ্যাচারির দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনার জন্য মৎস্য কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন। ডিম সংগ্রহকারীরা দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে দায়িত্বশীল মৎস্য কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। এদিকে, হালদা নদী বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, এ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গেল ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। তবে মৎস্য কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে সরকারী হ্যাচারিগুলো অরক্ষিত থাকায় রেণু ফোটানোর কাজ ব্যাহত হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, এ গাফিলতির কারণে শুধু ডিম সংগ্রহকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হননি বরং রাষ্ট্রের চরম আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
×