ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লালুয়ায় জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে উৎকোচ

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

 লালুয়ায় জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে উৎকোচ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২২ এপ্রিল ॥ নি¤œ আয়ের মানুষ জাহাঙ্গীর হোসেন আকন। লালুয়ার মহল্লাপাড়া গ্রামে বাড়ি। তার জীর্ণদশার ঘরটি অধিগ্রহণের আওতায় নেয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের এওয়ার্ড নোটিসে তাকে ৫৯ হাজার চার শ’ টাকা দেয়ার চিঠি পেয়েছেন। যার নম্বর ১২৬৮, তারিখ ১৬-০১-১৮। এ পরিমাণ টাকা উত্তোলনের জন্য এই মানুষটি পটুয়াখালী এলএও অফিসে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে একই এলাকার মস্তফা ফকির, নূর ছাহেদ পাহলান, শাহজাহান, আব্দুল কাদের, সুলতান ও নজরুল প্যাদা। কিন্তু সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলামসহ তার এক সহযোগী সোজাসাপটা নোটিসে ধার্য করা টাকার শতকরা ১০ ভাগ দাবি করে সবকিছু ঠিক করে দেয়ার কথা বলে। সাধারণ মানুষ প্রায় শত বছরের বসতভিটা, চাষাবাদের জমি ছেড়ে দিয়েছেন সরকারের উন্নয়ন কাজে। তারা এখন ক্ষতিপূরণের টাকা তোলার জন্য গিয়ে হয়রানি এবং উৎকোচ দাবির ঘটনায় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এভাবে লালুয়ার অপর মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও ভূমির মালিকরা একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের ফাঁদে আটকা পড়ে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের চিহ্নিত কয়েক জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এর মাঝখান দিয়ে এসব নিরীহ মানুষকে হয়রানি করায় চরম বিপাকে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। ক্ষতিপূরণের টাকা পেলে অন্যত্র গিয়ে একটি ঘর তুলে নতুন ঢেরা পাততে পারতেন। কিন্তু তা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৬৯ টাকা ৪৫ পয়সার ক্ষতিপূরণের নোটিস পেয়ে মহল্লাপাড়া গ্রামের নূর ছাহেদ পাহলানও এমন বিপাকে পড়েছেন। একই দশা নয় লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৫ টাকা ৭১ পয়সার এওয়ার্ড নোটিস পাওয়া মস্তফা ফকিরের। দুর্ভোগে রয়েছেন এভাবে লালুয়া ছাড়াও বানাতি মৌজার আট শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কৃষক ও জেলে পেশার অধিকাংশ মানুষের বসতি লালুয়ায়। নৌবাহিনীর ঘাটিসহ পায়রা পোর্টের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে বাড়িঘরসহ কৃষিজমি। কিন্তু মানুষ সহজভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় এখন তারা চরম ক্ষুব্ধ রয়েছেন। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমানের নির্দেশনায় কিছু মানুষকে কলাপাড়ায় বসে ক্ষতিপূরণের চেক প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এরপরও সুযোগ বুঝে মধ্যস্বত্বভোগীচক্র হানা দেয় এসব দরিদ্র মানুষকে হয়রানি করতে থাকে। এ চক্রটি এতটা সক্রিয় যে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। সরকারী দলের একটি চক্র এই মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের শেল্টারদাতা হিসেবে এলাকায় চিহ্নিত হয়ে আছেন। অভিযুক্ত সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত কোন মানুষকে কোন ধরনের হয়রানির সঙ্গে জড়িত নন। এ ধরনের কোন কাজের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেউ এ ধরনের কোন প্রমাণ দিতে পরবে না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। কলাপাড়ার ইউএনও তানভীর রহমান জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে- অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের হয়রানির সঙ্গে জড়িত থাকার কারও প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোপূর্বে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নির্বিঘেœ তার প্রদত্ত চেক পাবে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর কোন ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই।
×