ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ শেকড়ের খোঁজে বাঙালিয়ানার একদিন

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২২ এপ্রিল ২০১৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ শেকড়ের খোঁজে বাঙালিয়ানার একদিন

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা দিয়েই শুরু করিÑ হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ/ ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল/ তপ: ক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল করে দাও ডাক/ হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ। বৈশাখ মানেই প্রচ- দাবদাহ, বৈশাখ মানেই ক্লান্ত দেহে হেঁটে চলা, বৈশাখ মানেই রৌদ্র ঋতু, বৈশাখ মানেই শাশ্বত বাঙালীর শেকড় খোঁজা। আসলেই তাই, মুঘল স¤্রাট আকবর যেমন বাংলা সন প্রথা চালু করে দিয়ে গেছেন তেমনি পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রথাটাও তারই তৈরি। পহেলা বৈশাখ আমাদের জন্য শুধু উৎসবের দিনেই সীমাবদ্ধ না। এদিন সম্প্রীতির এক বড় মেলা। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ দিনে মিলিত হয়। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বাঙালী জাতির এই প্রিয় দিনটিতে ফিরে পায় অসাম্প্রদায়িক চেতনা। যেখানে বড় হয়ে উঠে বাঙালী সত্তা। সংস্কৃতিই চেতনা, আমরা বাঙালী এটাই আমাদের প্রেরণা। সকালের সূর্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ির কাঁটা যেমন চলতে থাকে তেমনি বাড়তে থাকে সূর্যের তাপশক্তি। প্রচ- তাপে কাঠবিড়ালীগুলো খুঁজে নেয় সবুজ পাতার ছায়া, নীল আকাশের সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় শূন্যে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ। তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবুজ পাতাগুলোর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় শিশু, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধা, কিশোর এবং মধ্যবয়সী নারী-পুরুষের পরিধান করা বাহারি রঙের পোশাক। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সাধারণ সৌন্দর্যপ্রেমীরা উপভোগ করতে থাকে ক্যাম্পাসের নানা আয়োজন। পাঞ্জাবি আর শাড়ি যেন এই দিনটির প্রধান পোশাক। প্রাপ্ত বয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গে কমবয়সী ছেলেমেয়েরাও পাঞ্জাবি আর শাড়ি পড়ে আসে এদিন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের আয়োজনে চলে পান্তা-ইলিশের জমজমাট আয়োজন। প্যারিস রোডে জোড়ায় জোড়ায় প্রেমিক-প্রেমিকার আনাগোনা ফ্রান্সের সেই তালা ঝুলানো ভালবাসার সেতুটির কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো বাহারী বৈশাখের আয়োজন করেছে। ক্যাম্পাসের আমচত্বর, টুকিটাকি চত্বর, স্বপ্ন চত্বর, চারুকলা অনুষদ চত্বর, সাবাশ বাংলাদেশ মাঠ, ইবলিশ চত্বর, পশ্চিম পাড়াসহ বিভিন্ন জায়গাগুলোতে বিভিন্ন বিভাগের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগে থাকে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন চারুকলা অনুষদ মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন বিভাগ বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে। পাঞ্জাবি-শাড়ি ছাড়াও এদিন নেত্রকোনা জেলা সমিতি হাঁটে ভিন্ন পথে। তারা নানাগেঞ্জির সঙ্গে মাথাল মাথায় লুঙ্গি পরে র‌্যালি করে। এটি বাঙালী জাতির চিরায়ত বাস্তব চিত্রকে ধারণ করেছে। তপ্ত রোদেও হার না মানা বাঙালীদের মননের পরিচয় পাওয়া গেছে পহেলা বৈশাখে। রোদের প্রচন্ড দাবদাহ তাদের বাঙালী সত্তার কাছে হার মেনেছে। এ যে সম্পীতির বন্ধন। দেশের নামকরা সঙ্গীত ব্যান্ড দলের মন মাতানো গানে পুরো ক্যাম্পাস হয়ে উঠে প্রাণচঞ্চল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সারাবছর জুড়ে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে ধারণ করে ভুলে যেতে বসেছিল নিজস্ব সংস্কৃতি। আর বছরের এই একটা দিনে তারা জানতে পারে তাদের আদি সংস্কৃতি, জানতে পারে বাঙালী সত্তার শেকড়। অতীতের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে গিয়ে ফিরে আসুক শান্তির দূত, বেড়ে উঠুক সম্প্রীতির বন্ধন এমনই প্রত্যাশা সবার। নাজমুল মৃধা
×