নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২১ এপ্রিল ॥ কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর সাগরবক্ষে মাছ শিকাররত জেলেদের দুর্যোগকালীন আশ্রয়ের লক্ষ্যে আন্ধারমানিক মোহনা থেকে সাগরের কাউয়ারচর মোহনা পর্যন্ত শিববাড়িয়া চ্যানেল খননের উদ্যোগ আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। ভেস্তে যেতে বসেছে। উল্টো চ্যানেলটি দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তোলাসহ ইটভাঁটির দখলে নেয়া হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নিয়মকানুনের কোন বালাই নেই। ফলে একদিকে শিবাড়িয়ার চ্যানেলটি ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে জেলেরা দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হারাচ্ছে।
২০১০-২০১১ অর্থবছরে শিববাড়িয়ার চ্যানেলটি পুনঃখননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী অফিস থেকে একটি পিপি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুনরায় নাব্য সৃষ্টি, মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলেদের লোডিং-আনলোডিংয়ের সুবিধাসহ চ্যানেলটির দুইপাড়ে বেড়িবাঁধের ভেতরের সংযোগ খালের স্লুইসখালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে সরকারীভাবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। চ্যানেলটি খনন করা হলে দুর্যোগকালীন জেলেদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো। চ্যানেলটি পুনর্খননের প্রকল্প তৈরি করে প্রায় ৬৭ কোটি ব্যয়-বরাদ্দ রাখা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশল অফিস সূত্রে তৎকালীন সময়ে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেলে এই খনন কাজ শুরুর কথা বলা হয়।
সাগর মোহনার রামনাবাদ পয়েন্ট থেকে কাউয়ারচর-আশাখালী পয়েন্ট পর্যন্ত শিববাড়িয়া চ্যানেলটি অবস্থিত। দীর্ঘ এই চ্যানেলটির দুই দিক দিয়ে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া-আসা করে আসছে। কিন্তু চ্যানেলটির আন্ধারমানিক এবং আশাখালী প্রবেশদ্বারসহ ৯০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে জোয়ারের সময় জেলেরা কিছুটা নিরাপদে চলাচল করতে পারছে। ভাটার সময় আর চলাচল করতে পারছে না। উত্তাল সাগরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে দ্রুত নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য এই চ্যানেলটি ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। কিন্তু দুই দিকের সাগর মোহনা থেকে দীর্ঘ চ্যানেলটি পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ট্রলারসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের আশঙ্কা হয়েছে। চ্যানেলটি দুইদিকে লতাচাপলী, মহিপুর, ডালবুগঞ্জ, ধুলাসার ইউনিয়ন অবস্থিত। দুইদিকে রয়েছে বেড়িবাঁধ। অন্তত ১০টি স্লুইস রয়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য। এসব স্লুইসের সংযোগ খালগুলো গেছে ভরাট হয়ে। আর কৃষিকাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে । ব্যাহত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। এসব সমস্যা দূর করতে বহুমুখী সুবিধার লক্ষ্যে এই চ্যানেলটি খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০১১ সালের মাঝামাঝি চ্যানেলটি খননের বাস্তবতা নিরূপণের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের তৎকালীন কর্মরত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জল কুমার সেন জানিয়েছিলেন, চ্যানেলটির তলদেশ তিন মিটার থেকে কোথাও কোথাও আট মিটার পর্যন্ত গভীর খনন করতে হবে। এছাড়া প্রস্থ ৩০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মিটার পর্যন্ত খনন করতে হবে। এই চ্যানেলটি খনন করলে জেলেদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে বলে জানালেন উপকূলীয় মাঝি সমিতির সভাপতি মোঃ নুরু মিয়া।
এছাড়া বরফ, মাছসহ বিভিন্ন মাল ওঠানামা করাতে জেলেদের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে জানান মৎস্য আড়ত মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ গাজী ফজলুর রহমান। এছাড়া কৃষিকাজের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক। তাদের জলাবদ্ধতা দূর হবে। স্লুইসগুলো দিয়ে অভ্যন্তরের খালে পানি ওঠানামা করাতে সমস্যা হবে না। কিন্তু চ্যানেলটি খনন না করার ফলে ভরাটের পাশাপাশি দেদার চ্যানেলের তীর এলাকা দখল করে মাটি ভরাট করে নেয়া হয়েছে। লতাচাপলী এলাকার মাইটভাঙ্গা স্পটে দুটি ইটভাঁটিার মালিকরা চ্যানেলটির দীর্ঘ এলাকা ভরাট করে দখল কাজ চালাচ্ছে। এ নিয়ে ভূমি প্রশাসনসহ কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এই চ্যানেলটি ব্যবহার না করার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত পলিতে ভরাটের পাশাপাশি দখল করায় এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চ্যানেলটির দুইপারে অসংখ্য মাছের ঘের করা হয়েছে। চ্যানেলের পাড় থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল নিধন করে ফেলা হচ্ছে।
নয়নাভিরাম এই চ্যানেলটি এখন জেলেরা স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারছে না। নাব্য সঙ্কটের পাশাপাশি ভরাট-দখলে দীর্ঘ চ্যানেলটি মৃতপ্রায় হয়ে গেছে। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, শিববাড়িয়ার চ্যানেলটি খনন প্রকল্পের কোন অগ্রগতি নেই।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: