ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর কোরীয় নেতার ঘোষণা ॥ স্বাগত জানাল ওয়াশিংটন, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া

পরমাণু পরীক্ষা আর নয়

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২২ এপ্রিল ২০১৮

পরমাণু পরীক্ষা আর নয়

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন শনিবার সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত করা এবং একটি পরমাণু পরীক্ষার স্থাপনা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২১ এপ্রিল থেকে উত্তর কোরিয়া পরমাণু পরীক্ষা এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বন্ধ রাখবে। এগুলো এখন অপ্রয়োজনীয়, কারণ তার দেশ পরমাণু সক্ষমতা নিশ্চিত করেছে। এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট। দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক আলোচনার আগে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণাটি আসে। কিম জং উন চলতি সপ্তাহে গত এক দশকের মধ্যে প্রথম আন্তঃকোরিয়া শীর্ষ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এরপর জুনের মধ্যে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠকে বসার কথা । দক্ষিণ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে বিরত হওয়ার জন্য পিয়ংইযংকে বারংবার চাপ দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাল। ‘এটি উত্তর কোরিয়া এবং বিশ্বের জন্য খুব ভাল খবর এবং বড় ধরনের অগ্রগতি’ ট্রাম্প টুইটারে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি এটি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথ সুগম করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের একজন মুখপাত্র উত্তর কোরিয়ার নেতার এ ঘোষণাকে ‘অর্থপূর্ণ অগ্রগতি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এর ফলে দক্ষিণ-উত্তর শীর্ষ বৈঠক এবং উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ব ঘোষিত শীর্ষ বৈঠক সফল করতে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী উনের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার দেশ উনের কর্মকা- মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতসুনোরি ওনোদেরা মনে করেন, কেবল ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা বাদ দেয়ার ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। উত্তর কোরিয়ার হাতে যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রয়েছে জাপান তার পাল্লার ভেতরেই পড়ে। চীন উনের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, এই ঘোষণা কোরিয়া উপদ্বীপকে পরমাুণ অস্ত্রমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘চীন মনে করে পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে দিকে দৃষ্টি দেয়া ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা করার মধ্য দিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা নিরসন হতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তটি শুক্রবার রাতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় গৃহীত হয়েছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে। উনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে কেসিএনএ জানিয়েছে, ‘ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার আর প্রয়োজন নেই, কারণ বিশ্বকে পরমাণু সক্ষমতা সম্পর্কে জানানোর লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে তাই এগুলোর আর প্রয়োজন নেই। তাছাড়া ছয়টি পরমাণু পরীক্ষার পর পিয়ংইয়ং সম্ভবত বিদ্যমান প্রোগ্রাম হালনাগাদ করার প্রয়োজন বোধ করছে না। পিয়ংইয়ং যদিও একটি পরমাণু স্থাপনা বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছে কিন্ত বর্তমানে তৈরি করা পরমাণু অস্ত্রগুলো পরিত্যাগ করার কোন ইঙ্গিত উন দেননি। কেসিএনএ তথ্য অনুযায়ী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করার উদ্দেশ্য দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়। উন এবার সমাজতান্ত্রিক দেশটি অর্থনীতির উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিতে চান। এ কারণেই শুক্রবারের ওই বৈঠকে ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণাটি এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুটো বড় বৈঠকের আগে পরমাণু কর্মসূচী থেকে সরে আসার ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে একজন ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সফল বৈঠক আয়োজন উনের জন্য হবে একটি বড় অর্জন। তার পিতা বা পিতামহ কেউ তা করতে পারেননি।
×