ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২২ এপ্রিল ২০১৮

কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন

লন্ডনে সদ্যসমাপ্ত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন থেকে বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদ মিলেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্তিও অনেক। মূলত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বসুলভ প্রস্তাবনা ও উপস্থাপনার কারণে এই সম্মেলনে বাংলাদেশ একটি সম্মানজনক অবস্থানে সমাসীন হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব নেতাদের সংহতি প্রকাশ নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের সাফল্য। একই সঙ্গে ৫৩ জাতির সংস্থাটির সরকারপ্রধানেরা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও যারা এসব নিষ্ঠুরতার জন্য দায়ী, স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কমনওয়েলথ সম্মেলনে একদিকে যেমন সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা অসহায়-নির্মম নির্যাতনের শিকার ১০ লক্ষাধিক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় প্রদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ, ঠিক তেমনি আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টির ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন কমনওয়েলথ সম্মেলনে বিশ্বের বাঘা বাঘা সরকার প্রধানরা। দুই দিনের সম্মেলন শেষে ‘অভিন্ন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে’ শীর্ষক ৫৪ দফার একটি ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ অনুসন্ধান ও কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য নেতারা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। এই কথাগুলো বিগত মাসগুলোতে বাংলাদেশ নানা ফোরামে বলে আসছে। এখন একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্বফোরামে বিষয়টির স্পষ্ট নির্দেশনা গৃহীত হলো। কমনওয়েলথ স্বাধীন রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী আন্তর্জাতিক সংগঠন। এক সময়ে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বিশ্বের এমন সব স্বাধীন রাষ্ট্র সমন্বয়ে বর্তমানে কমনওয়েলথ গঠিত। ইশতেহারে কমনওয়েলথ সনদের আলোকে সুশাসন, গণতান্ত্রিক নীতিমালা এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়। রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথককরণ নিশ্চিত করার নীতিমালা অনুসরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। উল্লেখ্য, শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগে ‘কমনওয়েলথ’স রোল ইন প্রমোটিং ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক এক বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তঃকমনওয়েলথ ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনার উন্নয়নের জন্য সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। বাণিজ্য প্রশাসনকে আরও উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করে তুলতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কমনওয়েলথ সম্মেলনের ফাঁকে আবারও বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তাঁরা কথা বলেছেন। তিস্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারত তার অবস্থান বদল করেছে। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ও কার্যকর অংশগ্রহণের ফলে বিশ্বনেতারা যে বাংলাদেশের ব্যাপারে নতুন করে ইতিবাচক চিন্তা করবেÑ এমন প্রত্যাশা সঙ্গত। কমনওয়েলথকে আরও কার্যকর করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন আগামীতে বিশ্বনেতারা সেটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কমনওয়েলথকে সত্যিকারার্থে বিশ্বের ২৪০ কোটি মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখবেন- এমনটা আশা করা যায়।
×