ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভিডিও ফুটেজে সহিংসতায় অংশ নেয়া কয়েকজন শনাক্ত

কোটা আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের উস্কানি

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২২ এপ্রিল ২০১৮

কোটা আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের উস্কানি

শংকর কুমার দে ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের ওয়াকিটকি ছিনতাই, নাশকতার ঘটনায় উস্কানি দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করানোর টার্গেট নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। মুখোশ পরে সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদের বিষয়ে সিসিটিভির যেসব ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে তাতে কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। কোটা আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ছঁক কষেছিল সরকার বিরোধী দেশী ও আন্তর্জাতিক অশুভ চক্র। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুনসহ আরও বেশ কয়েকজনকে কোটা আন্দোলন সংগঠিত করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা সংস্থা। লন্ডনে বসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মামুনকে টেলিফোনে কোটা আন্দোলন সংগঠিত করতে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই টেলিফোন কলের অডিও পরীক্ষা করে দেখছেন তদন্তকারীরা। কোটা আন্দোলনের দাবির সময়ে ফেসবুকে এক ছাত্রের মৃত্যু, এক ছাত্রীর রগকাটা হয়েছে বলে যে ভুয়া ও মিথ্যা খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এবং সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানো হয় সেই বিষয়ে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র জানান, কোটা আন্দোলনের সময়ে সংগঠিত সহিংসতার ঘটনার বিষয়ে আগামী ১৭ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে এক সপ্তাহের মাথায় গত ১৮ এপ্রিল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংঘর্ষ-ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলা সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হবে। কোন ধরনের ফৌজদারী মামলা প্রত্যাহার করা যায় না, সুতরাং প্রত্যাহারের কোন প্রশ্নই ওঠে না বলে জানিয়েছেন ডিবির এক কর্মকর্তা। গত দুই মাস ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। গত ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোন কোটাই আর রাখা হবে না বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেন সরকার প্রধান। পরদিন কয়েকটি দাবি রেখে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তার এক সপ্তাহের মাথায় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে সংঘর্ষ-ভাংচুরের ঘটনায় করা মামলা সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করার হুমকি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারিরও দাবি জানান পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দাবির বিষয়গুলোতে যাতে আন্দোলনের নামে আর কোন ধরনের সহিংসতা না ঘটে সেই বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশর একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে সহিংস হামলার সময়ে লুটপাট হয়ে যাওয়া মালামাল এখনও উদ্ধার করা যায়নি। তবে লুটপাট হয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। মুখোশ পরিহিত রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের সহায়তায় নীলক্ষেতের রাস্তা দিয়ে অনেক সন্ত্রাসী, বহিরাগতরা ঢুকে ভিসির বাসভবনে সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর তথ্য পেয়ে তদন্ত করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। ভিসির বাস ভবনে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। ভিসির বাসভবনে প্রবেশমুখের সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙ্গে ফেলা হলেও আশে পাশে যেসব সিসি ক্যামেরা রয়েছে তার ফুটেজ পরীক্ষা করে হামলাকারীদের শনাক্ত করছে পুলিশ। ফেসবুকে ছাত্র মারা গেছে ভুয়া খবর ছড়িয়ে আন্দোলনে উস্কানি দেয়ার বিষয়ে তদন্ত করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কোটা আন্দোলনের তিন যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর, ফারুক হাসান, মুহম্মদ রাশেদ খানকে। তাদেরকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। কিন্তু তাদেরকে চোখ বেঁধে তুলে নেয়া হয়নি, ঘটনাটি ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ডিবির প্রধান আবদুল বাতেন। গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, তাদের তদন্তের প্রয়োজনে নিয়ে আসা হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ‘সহিংসতার’ ঘটনায় তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করার জন্য তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বলেন, ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও উপাচর্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা সব মামলা দুই দিনের মধ্যে প্রত্যাহার না করলে আবার রাজপথে নামবেন। প্রসঙ্গত কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময়ে গত ১০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসির বাড়িতে হামলার ঘটনায় ঢাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। অন্য তিনটি মামলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্য ও শাহবাগ থানা পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করেন। অপর একটি মামলা দায়ের করা হয় ফেসবুকে মৃত্যুর ও রগকাটার হয়েছে বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে সেই বিষয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলাগুলোয় নির্দিষ্ট করে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ফেসবুকে মিথ্যা, গুজব ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারকারী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসির বাসভবনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে করা ৫টি মামলার তদন্ত চলছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কোটা আন্দোলনের সময়ে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিয়ে উস্কানি দেয়া হয়েছে তাতে নেপথ্যে দেশী ও আন্তজার্তিক চক্রান্ত রয়েছে বলে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের বিভ্রান্ত করে ভিন্নপথে পরিচালিত করার জন্য তৎপরতা চালায় ওই চক্র। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার টার্গেট করে আন্দোলনকারীদের ভেতরে আন্দোলনের আড়ালে ঢুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনাশকারী স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। এই বিষয়ে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দাবি।
×