ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা উচিত হবে না ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২২ এপ্রিল ২০১৮

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা উচিত হবে না ॥ ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংসদ বহাল রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গণফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন বলেন, ‘উচিত হবে কি হবে না এই প্রশ্নের উত্তর সবাই দিয়ে দিতে পারে। নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ। আমি এটা এখন বেশি করে বলতে চাচ্ছি না। কারণ, নির্বাচনের সময় কী পরিস্থিতি হবে, তা বলা মুস্কিল। আমি চাই সবাই যেন অংশগ্রহণ করে। যারা চায় না সবার অংশগ্রহণে হোক, তারাই সেরকম পরিস্থিতি তৈরি করে। এটা এভাবে বেশি বলা উচিত না।’ তিনি বলেন, আমার-আপনার লক্ষ্য একই। সেটা হলো সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। যদি এটাকে ঠেলে অন্যদিকে নেয়ার অপচেষ্টা হয় সেটা আমরা কখনও চাইব না। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকালে আইনকে সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য যদি সেনাবাহিনীকে প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই করা দরকার। সেরকম অবস্থায় যেতেও পারে, নাও যেতে পারে। সেই অবস্থায় যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সেইটা মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে অনেকগুলো বক্তৃতা রয়েছে। সেগুলো একসঙ্গে করে দিলে আমি একটি ম্যানুফেস্ট ছাপিয়ে বিলি করে দিতাম। তার বক্তব্যে স্পষ্ট কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘যারা নির্বাচন পরিচালনা করে তারা যদি নিরপেক্ষ না হন, তাহলে জনগণ কীভাবে ভরসা করবে? বর্তমানে যেরকম রাজনীতির পরিস্থিতি, তা-ই চলতে থাকলে গতবারের নির্বাচনের মতো একটি নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিগত নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, এ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, এ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জানে আলম প্রমুখ। দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকারসহ সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে- বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে যথাযোগ্য বিচারকমণ্ডলীর মাধ্যমে পরিচালিত একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অপরিহার্য। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে- এটাই আইনের শাসনের মূলকথা। এতে আরও বলা হয়, ’৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা ও ২০০৫ সালে ১৪ দলের ২৩ দফা কর্মসূচী ভিত্তিক গণ-আন্দোলনের বিজয়ের পর লক্ষ্য ও কর্মসূচী বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যর ঘাটতি ও দুর্বলতার কারণে জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। এ কারণে লক্ষ্য ও কর্মসূচী ভিত্তিক আন্দোলনের বিজয়ের পর, কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের চেতনাকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। এ লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পার্টির নেতা আওম শফিক উল্লাহ। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, দেশে মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশে ঘুষ দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। উপরের দিক থেকে নিচে সর্বত্র ঘুষ-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। জনগণ অতীষ্ঠ। সাধারণ মানুষ সুশাসন চায়। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তারা আশা করেছিল ২০১৪’র অনুষ্ঠিত তথাকথিত একটি নির্বাচনের পর খুব শীঘ্রই আরও একটি নির্বাচন হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস সে নির্বাচন এখনো অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, জনগণের দাবি আদায়ে ঐকবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া সবার সঙ্গে ঐক্য হবে। ঐক্য হবে নীতির ওপর ভিত্তি করে এবং সে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, এখন রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র নেই। তাই দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র আনতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জনগণের ক্ষমতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ এখন তার ক্ষমতার মালিক হতে চায়।
×