ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারটি বন্ধ ছিল ৬ মাস

বাংলাদেশী গৃহকর্মীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে জর্দান

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২২ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশী গৃহকর্মীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে জর্দান

ফিরোজ মান্না ॥ জর্দানে বাংলাদেশী গৃহকর্মীর ওপর থেকে নিষেধজ্ঞা তুলে নিচ্ছে। আগামী এক মে থেকে জর্দান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিয়োগ শুরু করবে। দীর্ঘ ছয় মাস বাজারটি বন্ধ ছিল। ১৮ এপ্রিল জর্দান শ্রম মন্ত্রণালয় এ নিষেধজ্ঞা তুলে নেয়। জর্দানে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশী গৃহকর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বেশ কিছুদিন ধরেই জর্দানের শ্রমমন্ত্রী আলী আল ঘাজ্জাউইয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার পর গৃহকর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধজ্ঞা তুলে নেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। জর্দানের শ্রমমন্ত্রী বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করে নতুন করে বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে। গৃহকর্মীরা যেন কোন প্রকার মানসিক বা শারীরিক সমস্যায় না ভোগেন, সেদিকে খেয়াল রাখার বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন। সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের নবেম্বরে জর্দান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী নিয়োগে নিষেধজ্ঞা দিয়েছিল। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে ২০০০ সাল থেকে নারী কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। ৫০ হাজারের ওপরে নারী কর্মী দেশটিতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। দেশটিতে নারী কর্মীদের ওপর শারীরিক-মানসিক ও দৈহিক নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার কয়েক দিনের মাথায় বাজারটি বাংলাদেশের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কর্মী নিয়োগ বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস জর্দান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার পর আবার এক মে থেকে বাজারটি বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, জর্দান শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে-কাজ করতে আসা প্রতিটি বাংলাদেশী গৃহকর্মীর কোন প্রকার অপরাধমূলক অভিযোগ রয়েছে কি-না এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। এমনকি নতুন গৃহকর্মীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিতে হবে। জর্দান সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বলে মনে করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সূত্র জানিয়েছে, জর্দানে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের সবচেয়ে বড় বাজার। সৌদি আরবের পরেই জর্দানে নারী কর্মীর বাজার সৃষ্টি হয় ২০০০ সালে। পরে কিছু দিন বাজারটি বন্ধ থাকার পর আবার ২০১১ সালে বাজারটি খুলে দেয়া হয়। এরপর বাজারটিতে পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজারের বেশি নারী কর্মী চাকরি নিয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নারী কর্মীদের ওপর শারীরিক মানসিক ও দৈহিক নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যায় দেশটিতে। বহুসংখ্যক নারী কর্মী নানা ধরনের নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে গৃহকর্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নেন। নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জর্দান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে বলে আশ্বাস দেয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশ নারী কর্মী নিয়োগ কমতে থাকে। মার্চের শেষ সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী নিয়োগ একেবারেই বন্ধ করে দেয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জর্দান বাংলাদেশের জন্য অন্যতম শ্রম বাজার। এই বাজারে বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি নারী কর্মী কাজ করছেন। বাজারটি দীর্ঘ ছয় বছর বন্ধ ছিল। বোয়েসলের মাধ্যমে প্রথমে জর্দানে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। পরে অবশ্য বিভিন্ন জনশক্তি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুব কম খরচে জর্দানে নারী কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নারী কর্মী নিয়োগের জন্য সরকার জর্দানে নতুন দূতাবাস স্থাপন করেছে। বোয়েসলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নারী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কাগজপত্র তৈরি করতে ১০ হাজার টাকা করে খরচ নেয়া হয়। এই খরচের বাইরে আর কোন খরচ নেই। উড়োজাহাজ টিকেট জর্দানের কোম্পানিগুলোই দিয়েছে। পরে কর্মী নিয়োগের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়। ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে পুরোদমে গৃহকর্মী নিয়োগ হচ্ছিল। গত বছরই জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও বোয়েসেলের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৯১১ জন নারী কর্মী জর্দানে চাকরি নিয়ে গেছেন। জর্দানে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই ‘প্লেন ফেয়ার’ দিয়েছে। এত কম খরচে ভাল বেতনে একজন কর্মী বিদেশ যাওয়ার ইতিহাস এটাই প্রথম বলে বোয়েসেল জানিয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর জর্দান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে দেশটিতে গৃহকর্মী নিয়োগ শুরু হয়। এই চুক্তির পর সরকার জর্দানে বোয়েসেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বোয়েসেলের মাধ্যমে একজন কর্মী জর্দানে যেতে পারলে তিন বছরে ওই কর্মী ভাল পরিমাণ টাকা নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন।
×