ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজাকারের সন্তানদের চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২২ এপ্রিল ২০১৮

রাজাকারের সন্তানদের চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনে অনেকে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়েছিল। তাতে লেখা ‘আমি রাজাকারের সন্তান’। এমন প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে যারা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করেছে তাদের বিচারের দাবি জানিয়েছে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটি’। একই সঙ্গে গণসমাবেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা রাজাকারের সন্তানদের আইন করে চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের চাকরি থেকে বহিষ্কারসহ নয়টি দাবি তুলে ধরেছেন। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক গণসমাবেশে তারা এ দাবি জানান। এ সময় সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক সরকার থাকায় আন্দোলন করার অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু তথাকথিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি করা হয়েছে। অনেকেই ‘আমি রাজাকারের সন্তান’ প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়েছে। এগুলো আশা করা যায় না। এসব মানুষের বিচার হওয়া উচিত। আমরা এর বিচার চাই।’ তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল না করা হলে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ডুগডুগি বাজাবে। কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান অপদস্থ করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ফলে তারা আজ উল্লাসে মেতে উঠেছে। এ সময় বক্তারা বলেন, পঁচাত্তর সালে জাতির পিতা হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের পর মুক্তিযোদ্ধারা আবারও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের পর ২৯ বছর কোটার কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকরি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী ২৯ বছর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিষ্পেষিত হয়েছে। এছাড়া এই ৩০ শতাংশ কোটা আত্মমর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও এই কোটা বহাল রাখা জরুরি। এ সময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা একটি অসাম্প্রদায়িক জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সরকারী কোটা থাকলেও এই কোটায় যোগ্যতার দোহাই দিয়ে ইচ্ছাপূর্বক তাদের মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয় বলে অভিযোগ করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রিলিমিনারি, লিখিত মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার আর কি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে? মৌখিক পরীক্ষা কখনই যোগ্যতা যাচাইয়ের একমাত্র মানদ- হতে পারে না। বলা হয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যায় না। অথচ এখন হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেকারত্ব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা বলেন, কোটা বাতিলের সময় এখনও আসেনি। এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার হাজার সন্তান চাকরি পাননি। অনেক বেকার রয়েছে। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন। গণসমাবেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের তুলে ধরা নয়টি দাবি হচ্ছে- জাতির পিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন করতে হবে। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে তা বাস্তবায়নের কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যকর করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চলমান সকল নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কোটার শূন্য পদ সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সকল নিয়োগের ৩০ শতাংশ কোটার শূন্য পদের তালিকা প্রকাশ করে ২০১৮ সালই বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রবাসী সরকারের প্রথম সেনাবাহিনী। এ কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে, পেনশন, বোনাস, রেশনসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। রাজাকারের তালিকা প্রণয়নসহ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াফতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্তরসূরিদের সকল চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলাসহ দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টকারী স্বঘোষিত রাজাকারদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে এবং সকলের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা উন্মুক্ত করতে হবে। গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন, দফতর সম্পাদক আহমেদ রাসেল ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমিটির সদস্যবৃন্দ।
×