ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টনক নড়বে বিশ্বের ॥ কমনওয়েলথে প্রধানমন্ত্রীর রোহিঙ্গা সঙ্কট উত্থাপন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ এপ্রিল ২০১৮

টনক নড়বে বিশ্বের ॥ কমনওয়েলথে প্রধানমন্ত্রীর রোহিঙ্গা সঙ্কট উত্থাপন

তৌহিদুর রহমান ॥ কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরায় মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান বিশ্বজনমত তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি কমনওয়েলথ দেশগুলোর নৈতিক সমর্থনও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কমনওয়েলথের সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোহিঙ্গা সঙ্কট উত্থাপনের বিষয়ে শনিবার জনকণ্ঠের নিকট ইতিবাচক অভিমত প্রকাশ করেছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ড. ওয়ালিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরেছেন। সে কারণে কমনওয়েলথের দেশগুলোর মধ্য থেকে আমাদের প্রতি নৈতিক সমর্থন আরও বাড়বে। মিয়ানমারের ওপর কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্য থেকে কূটনৈতিক চাপ তৈরি হবে বলেও তিনি প্রত্যাশা করেছেন। সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরার জন্য কমনওয়েলথ একটি বিশাল প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাদের সামনে রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরাটা জরুরী ছিল। এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেটাও সবার সামনে তুলে ধরাটা প্রয়োজন ছিল। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ সেটি সফলভাবে করতে পেরেছে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমনওয়েলথের অনেক দেশই রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি প্রত্যাশা করেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির জনকণ্ঠকে বলেন, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের ওপর যদি অবরোধ আরোপ করা যেত, তাহলে সেটা একটি বিশেষ কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারত। তবে এই অবরোধ আরোপ করাটা অনেক শক্ত। কেননা মিয়ানমারও কমনওয়েলথের সদস্য। তারাও এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সচেতন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমনওয়েলথের দেশগুলোও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আরও সচেতন হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হয়ত যৌথ কোন উদ্যোগ নেয়া হবে না। তবে এই সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান। বিশ্বজনমত তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথে বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত রয়েছে। এসব দেশের সামনে রোহিঙ্গা সঙ্কট আরও ভালভাবে তুলে ধরারও একটি প্ল্যাটফর্ম কমনওয়েলথ। আর এসব দেশ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারকে আরও চাপে রাখতে পারবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, কমনওয়েলথের মতো একটি বৃহত্তম মঞ্চে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরেছে। এই সম্মেলন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন ফল না পেলেও ভবিষ্যতে এর ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। এছাড়া যুক্তরাজ্য ও কানাডা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সে কারণে এসব দেশ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে তার প্রত্যাশা। উল্লেখ্য, লন্ডনে গত ১৯-২০ এপ্রিল কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে যে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেটার পুনরুল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে কমনওয়েলথের সমর্থন প্রত্যাশার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণায় নির্যাতনের মুখে পালিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কমনওয়েলথ শীর্ষ নেতারা সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেছেন। তারা জাতিগত নিধন বন্ধ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
×