ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২১ এপ্রিল ২০১৮

 বাগেরহাটে বিশুদ্ধ  পানির তীব্র  সঙ্কট

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ টোজো (৯) আর তথা (৬) এই দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সন্ন্যাসী বাজারের ভেতর মিজান মেম্বারের বাড়ি থাকি। একটু দূরে স্থানীয় মসজিদের পুকুরের পানি একমাত্র ভরসা। এই পুকুরের পানি অসংখ্য মানুষ ব্যবহার করেন। অথচ এই পানি ব্যবহার করলে টাইফয়েড, আমাশয়, পেটে ব্যথা, ঘা-পাঁচড়া, চুলকানি হচ্ছে। পানি একদম সবুজ, অতিরিক্ত লবণ, তবুও উপায় নেই। বর্ষাকাল ছাড়া প্রায় সব পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। এখানে খাবার পানি তো দূরে থাক, ব্যবহারের পানিও জোটে না। স্থানীয় এআর খান ডিগ্রী কলেজের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক তরুণ কান্তি হালদারের সহধর্মিণী সুমিত্রা হালদার শুক্রবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন। মাত্র ৮ মাস আগে তিনি সন্ন্যাসী এলাকায় প্রাক্তন মেম্বার মিজানের বাড়িতে উঠেছিলেন। পানির কষ্টে আর ওই এলাকায় ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতে পারছেন। তিনি এখন বাগেরহাট শহরে বাসাভাড়া খুঁজছেন। একই এলাকার বাসিন্দা সামছু সেখ ও আকবর আলী অনুরূপ কষ্টের কথা ব্যক্ত করে বলেন, পানির কষ্টে আর বাঁচতি পারতিছি না।... প্রকৃত অর্থেই এ চিত্র বাগেরহাটের ১৬ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত গোটা মোড়েলগঞ্জ উপজেলার। এ উপজেলার সর্বত্র এখন খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে এ সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। দিন দিন এর ভয়াবহতা বাড়ছে। এ উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের নলকূপে মাত্রতিরিক্ত আর্সেনিক, অকেজো নলকূপ, পিএসএফের কারণে পানিয়জলের অভাব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাগেরহাট জেলার রামপাল, চিতলমারী, মোংলা উপজেলার চিত্রও একই রকম। সরেজমিনে দেখা গেছে, মোড়েলগঞ্জ উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ সরকারী নলকূপ ও পিএসএফ অকেজো। পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মিত শত শত নলকূপও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মোরেলগঞ্জ পৌর সদরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসী বিশুদ্ধ পানির অভাবে অভাবনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উপজেলার ৩০৯ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশতে কোন টিউবওয়েল নেই। আর যেগুলোতে আছে তাও অকেজো। খুচরা যন্ত্রাংশ ও তত্ত্বাবধায়নের অভাবে এসব নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শত শত নলকূপের যন্ত্রাংশ ইতোপূর্বে চুরি হয়ে গেছে। একটি চোরাকারবারি চক্র এসব নলকূপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রাতের আঁধারে চুরি করে বিক্রি করছে। উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিউধরা, নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া, বলইবুনিয়াসহ অধিকাংশ ইউনিয়নে এ মৌসুমে পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে পুকুরের পানি পান করতে পারছে না এলাকাবাসী। অপরদিকে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবার কারণে প্রতিটি গ্রামের বাসিন্দা দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে, নৌকায় চড়ে খাবার পানি সংগ্রহ করছে।
×