ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাবি শিক্ষকের গবেষণায় সাফল্য

‘রাবি ১’ ধান উদ্ভাবন, আবাদে সাশ্রয় ॥ বাড়তি ফলন

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২১ এপ্রিল ২০১৮

‘রাবি ১’ ধান উদ্ভাবন, আবাদে সাশ্রয় ॥ বাড়তি ফলন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবার কৃষিতে উদ্ভাবন হলো নতুন জাতের ধান। উন্নত স্বাদ, নতুন বৈশিষ্ট্য ও প্রচলিত ধানের তুলনায় এক থেকে দেড় টন বেশি উৎপাদন হবে এ ধান। শীষ থেকে খুব সহজে ঝরে পড়বে না। ধানটিতে ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট রোধক জিন বিদ্যমান। এমন আরও বেশকিছু নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে দেশে নতুন জাতের এ ধান উদ্ভাবন হয়েছে। বিরি, হীরা, সোনার বাংলা ইত্যাদি উদ্ভাবিত জাতের পর গবেষণার পর নতুন ধানটির নাম দেয়া হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে। যার নাম ‘রাবি ধান ১’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আমিনুল হক এ ধানের উদ্ভাবক। ইতোমধ্যেই ‘রাবি ধান ১’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ন্যাশনাল সিড বোর্ড ও বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিচার্স কাউন্সিল (বিএআরসি)। এখন বাজারজাত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে ধানটি। সম্প্রতি ঢাকা বিএআরসি সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারেও প্রদর্শন করা হয় ধানটি। সেখান থেকেই উদ্ভাবনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। ধানটির উদ্ভাবক অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, ২০১৪ সালে এই ধানের অরিজিন ফিলিপাইন থেকে আনা হয়। তখন থেকেই তিনি গবেষণা চালিয়ে অনেক পরিশ্রমের ফলে ধানটি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এ জাতের ধানে আমাদের কৃষকরা সফলতার মুখ দেখবেন। আরও এক ধাপ এগুবে কৃষি। অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন ধান আবিষ্কারের ইতিহাস এটাই প্রথম। তাই এ ধানের নাম ‘রাবি ধান-১’ রাখা হয়েছে। রাবির নামকে চিরস্মরণীয় করে রাখতেই ভালবাসার জায়গা থেকে এমন নাম রাখা হয়েছে। তিনি জানান, আমন ধানের জাত ‘ব্রি-৩৯ ধান’ এর কাছাকাছি জাত ‘রাবি ধান-১’। চিকন মিনিকেট চাউল উৎপন্ন হবে এই ধান থেকে। যার বাজার মূল্য উন্নত মিনিকেট চালের সমান। তবে ব্রি-৩৯ এর থেকে ১৫ দিন আগেই রাবি ধান ১ এর আবাদ উঠবে। যেখানে ব্রি-৩৯ এর আবাদ উঠতে সময় লাগে ১৪৫ দিন। সেখানে ‘রাবি ধান ১’ এর আবাদ উঠতে সময় লাগবে মাত্র ১৩০ দিন। ফলনও বেশি ফলবে। তিনি বলেন, নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে তা লাগিয়ে দেখা হয়। এবং ধানটির বৈশিষ্ট্য নীবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন ন্যাশনাল সিড বোর্ড ও বিএআরসির সদস্যরা। ফলাফল ও গুণ ঠিক থাকলে তবেই মেলে স্বীকৃতি। সেই হিসাবে ২০১৫ সালের আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো ‘রাবি ধান ১’ দেশের ৪টি স্থানে ও ২০১৬ সালে তিনটি স্থানে পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়। দুই বারই ব্রি ৩৯ এর থেকে বেশি ফলন দেয়। সেইসঙ্গে চাষাবাদে বেশি উপযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়। ফলে এর স্বীকৃতি মিলেছে। উদ্ভাবক ড. আমিনুল হক বলেন, রাবি-১ জাতের ধান চাষ করে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন চাষীরা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের আলু চাষীরা আমন মৌসুমে এই ধান ঘরে তুলে আলুর আবাদ শুরু করার সময় পাবেন। এই ধানের উদ্ভাবক আরও জানান, এই ধানের রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের থেকে অনেক কম হবে। এতে করে কৃষকের কীটনাশক খরচ অনেকটা সাশ্রয় হবে।
×