ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খাগড়াছড়িতে বাড়ি ছাড়া ২৫ গ্রামের মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২১ এপ্রিল ২০১৮

খাগড়াছড়িতে বাড়ি ছাড়া ২৫ গ্রামের মানুষ

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি ॥ পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে পরস্পর বিরোধী আঞ্চলিক দলের রোষানলে পড়ে ২৫ গ্রামের তাদের আত্মীয় স্বজন ও সমর্থক ৪৫ পরিবারের ৩ শতাধিক লোক বাড়িঘর ছাড়া হয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে। অনেকে এসছে এক কাপড়ে। অনেক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় জীবন গেছে অন্তত ৭ জনের। নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পক্ষের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সমর্থিত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বৈসাবি উৎসব চলাকালে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ (প্রসীত) ইউপিডিএফ (বর্মা) ও জেএসএস (এমএন) গ্রুপের নেতকর্মীরা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। অপহরণ, হামলা, পাল্টা হামলা প্রাণ হারায় অন্তত ৭ জন। তবে অধিকাংশ লাশ গুম করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের হামলা, হুমকি, বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্তত ২৫ গ্রামের কয়েক শ’ পরিবারের নারী ও শিশু জেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীদের নিপীড়ন ও নির্যাতনের পাশাপাশি অর্থ-সম্পদ লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফর বিরুদ্ধে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বাস্তু পরিবারগুলো এখন ঠাঁই নিয়েছে মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি এলাকার একটি পরিত্যক্ত স্কুল ভবনে। উদ্বাস্তু জীবনে বেশি কষ্টে রয়েছে নারী ও শিশুরা। ভুক্তভোগীরা জানান, বাড়িঘর ছেড়ে তারা এক কাপড়ে এসেছে। অনেকের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার দুপুরে মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি খুলারামপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিভিন্ন গ্রাম থেকে উদ্বাস্তু ৪৫ পরিবারের মাঝে ত্রাণ ও মশারি বিতরণ করেছে মহালছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মাটিরাঙা, গুইমারা ও রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ২৫টির বেশি গ্রামের ৪৫ পরিবারকে হুমকি দেয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু সন্ত্রাসীদের কাছে জনপ্রতিনিধিরা অসহায় দাবি করে সমস্যা সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা।এ বিভীষিকাময় পরিস্থিতির জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর গণমাধ্যম সমন্বয় মিঠুন চাকমা, প্রসীত খীসাপহ্নী ইউপিডিএফকে দায়ী করছে । তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অশান্ত রাখতে একটি পক্ষ পাহাড়ে সার্কাস চালু করেছে। জনপ্রতিনিধিদের ব্যানারে বিশেষ একটি মহল সার্কাস দলের সদস্যদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে ইউপিডিএফর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না নাসরিন ঊর্মি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের হুমকিতে উদ্বাস্তুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন এই কর্মকর্তা।
×