ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেনাপোলের ওপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২১ এপ্রিল ২০১৮

বেনাপোলের ওপারে যাত্রীদের  দুর্ভোগ চরমে

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ বৈধপথে পাসপোর্টে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল সঙ্কটসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলাদেশীরা। শুধু বাংলাদেশী নয় ভোগান্তির কবলে পড়ে ফুসে উঠতে দেখা গেছে ভারতীয় নাগরিকদেরও। এমনকি মাঝে মধ্যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটে আসলেও যেন দায় নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের। যাত্রীরা বলছেন, বৈধপথে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে এ রকম আচরণ ও দুর্ভোগ মেনে নেয়া যায় না। এর চেয়ে যেন সীমান্তের অবৈধ পথেই যাওয়া ভাল। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজর দেয়া দরকার। আর বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন বিষয়টি নিয়ে তারা বার বার অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে এ পথে দেশী-বিদেশী পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত দেশের অন্যান্য ইমিগ্রেশনের চাইতে একটু বেশি। এছাড়া পাশ্ববর্তী এই দেশটির সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশীদের আত্মীয়তার সম্পর্ক। ফলে দিন দিন এ পথে যাতায়াত বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। ভিসা নিতে ভারতীয় হাইকমিশনার পাসপোর্ট প্রতি ৭শ’ টাকা ভ্রমণ কর নিয়ে থাকেন। আর বাংলাদেশ সরকার নিচ্ছেন ৫৪২ টাকা। এছাড়া ভিসার আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করতে আরও খরচ হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। যাত্রী সুবিধার্তে বাংলাদেশ সরকার অনেক আগেই এপার সীমান্তে আন্তর্জাতিক কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ভবন, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনার উন্নয়ন করেছেন। বাড়ানো হয়েছে কাস্টমস ও পুলিশের জনবল। কিন্তু ভারত অংশে যাত্রী সেবাই এসবের কিছু নাই। এমনকি বাঁশের তৈরি বেড়ার মধ্যে গরু-ছাগলের মতো ব্যবস্থাপনায় যাত্রী নিয়ন্ত্রণেরও সেখানে নজির রয়েছে। এতে ভারত যাত্রায় মারাত্মক ভোগান্তি ভোগ করতে হয় বাংলাদেশীদের। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের সামনে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায় ৫ শতাধিক যাত্রীদের। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ শেষ করে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ঢোকার অপেক্ষায় পেট্রাপোল চেকপোস্টে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সদস্যরা তাদের সেখানে ভিড় করতে নিষেধ করে বাংলাদেশ অংশে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। ফলে মহাসড়কের ওপর ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। কথা হয় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত যাত্রায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আশরাফের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বিকেল ৫টায় তার কলকাতায় ডাক্তারের সিরিয়াল। এখনও ওপারে ঢুকতে পারেনি। লাইন ভাঙলে আবার তিন ঘণ্টা পিছিয়ে যাবেন। এদিন আর ডাক্তার দেখানো হবে না। তাই বাধ্য হয়ে বৃষ্টির মধ্যেও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ভুক্তভোগী একজন ভারতীয় যাত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। সব সমস্যা ভারতে। একজন ইমিগ্রেশন অফিসার এতগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ধীরে ধীরে বই দেখছে। রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে মানুষকে কষ্ট করতে হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর মতো ভোগান্তি আর নেই। নিজের দেশে এমন অব্যবস্থপনা দেখে তিনি লজ্জাবোধ করেন। সম্প্রতি পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশের পর ভারতীয় ইমিগ্রেশনের ভেতর মোবাইলে কথা বলার অপরাধে নেত্রকোনার কে-ুয়া থানার খালিশপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে মিনহাজ আরাফাতকে (পাসপোর্ট নং বিই ০৮৯৯৬৭৭) মারধর করে সাদা পোশাকধারী ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে তাকে ভারত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা করে ফেরত পাঠায়। সাতক্ষীরার আলীপুর পাসপোতা গ্রামের গহর আলীর ছেলে নূরআলী গত মাসে ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। চলতি মাসে ১১ এপ্রিল আবারও ভারতে যাওয়ার জন্য পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে গেলে কর্তৃৃপক্ষ তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পাসপোর্টে এন্টি রিফিউজ সিল মেরে ফেরত পাঠিয়ে দেন। মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনার আগ্রহী যাত্রীদের সার্বিক তথ্য যাচাই বাছাই করে ভিসা প্রদান করে থাকেন। তার পরে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়া ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের আসামির মত আচারণ দুঃখজনক। এছাড়া মাল্টিপোল ভিসা দিলেও মাসে একাধিকবার যাতায়াত করতে বাঁধা দিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে অনেক সময় গায়ে হাত পর্যন্ত উঠিয়ে থাকেন। বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা যখন ওপারে ভারতীয় কাস্টমস-ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোন বৈঠকে বসেন সবসময় যাত্রী দূর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেছেন যাত্রী সুবিধায় অবকাঠামোগত উন্নয়নে দ্রুত তারা কাজ করবেন। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ অংশে যাত্রীদেরকে তারা দ্রুত পাসপোর্টের কার্যক্রম সম্পূর্ণ করে থাকেন। এমনকি ইমিগ্রেশন অফিস সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথা থাকলেও তারা অনেক সময় আটকে থাকা যাত্রীদের জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রেখে কার্যক্রম সচল রাখছেন। ওপারের সমস্যা নিয়ে তারা ভারতীয় ইমিগ্রেশনের সঙ্গে তারাও একাধিকবার কথা বলেছেন।
×