রেহেনা আক্তার পালাহার গ্রামের হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। রেহেনার মেয়ের বয়স দুই মাস। এটাই তাঁর প্রথম সন্তান। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে তাঁর মনে ছিল এক অজানা শঙ্কা। প্রসবের দিন যত এগিয়ে আসছিল, ততই তাঁর দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। তখন এগিয়ে এলেন ‘সাফি আপা।’ তাঁর সহায়তায় নিরাপদে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। রেহেনা বলেন, ‘প্রথমবার মা হওয়ার সময় প্রত্যেক নারী শঙ্কায় থাকে। কিন্তু সাফি আপার মতো একজনের সহায়তা পেলে কোন শঙ্কাই যেন কাবু করতে পারে না।’ একই গ্রামের গৃহবধূ মরিয়ম বেগমের ২০ দিন আগে সন্তান জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সাফি আপার সহায়তায় সুস্থভাবে সন্তান জন্ম হয়েছে। আপদ-বিপদ, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও তিনি ছুটে আসেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য যেন এক আশীর্বাদ।’
সাফি আক্তারের (৬২) বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়নের পালাহার গ্রামে। তিনি একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি গ্রামের নারীদের সন্তান প্রসবে সহায়তা করেন। এ জন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক নেন না। এমনকি এ কাজের জন্য তিনি কোন উপহারও নিতে চান না। খুশি হয়ে কেউ কেউ তাকে শাড়ি-কাপড় উপহার দিয়ে থাকেন। সংগ্রামী জীবন ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার স্বীকৃতি হিসেবে এখন পর্যন্ত কোন সম্মাননা সাফি আক্তার পায়নি। সন্তান জন্মের সময় সহায়তা করার কারণে শিশুদের পরিবারের সঙ্গে সাফির আত্মিক বন্ধন গড়ে ওঠে। এলাকার ১০-১২ জন গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্তান জন্মের সময় তাঁদের প্রত্যেকের পাশে ছিলেন সাফি। সাফির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার ছোট একটি বসতঘর রয়েছে। ঘরের মেঝে কাঁচা ও স্যাঁতসেঁতে। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় দু’পাশে জীর্ণ দুটি ছোট খাট। এক পাশে একটি শোকেস। এর ভেতরে কাচের কিছু তৈজসপত্র ও কাপড় রয়েছে। তার পাঁচ ছেলের মধ্যে একজন ঢাকায়, একজন গার্মেন্টসে চাকরি ও আরেকজন স্থানীয় আমলীতলা বাজারে চায়ের স্টল দিয়ে কোন মতে সংসার চালায়। অন্যরাও দিরমজুর হিসেবে কাজ করে কোন মতে চলছে। স্বামী মারা গেছেন। দুই মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। তিন দশক আগে মুশুলী ইউনিয়ন পরিষদে সাফি আক্তার তিন মাস ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে জেলা শহরে ব্র্যাকের উদ্যোগে ১৫ দিনের আরেকটি প্রশিক্ষণ দেন তিনি। কিছু দিন একটি সংস্থায় কাজ করলেও একপর্যায়ে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি নিজের এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সহায়তা করতে থাকেন। এখনও তিনি সেই কাজ করে চলেছেন।
-মজিবুর রহমান ফয়সাল, নান্দাইল থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: