ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজের মাঝে সাদা বকের অপরূপ দৃশ্য

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২১ এপ্রিল ২০১৮

সবুজের মাঝে সাদা  বকের অপরূপ দৃশ্য

ওই দেখা যায় তালগাছ/ওই আমাদের গাঁ/ওই খানেতে বাস করে কানা বগির ছা... ও বগি তুই খাস কি? পান্তা ভাত চাসকি? ছড়াকার খান মুহাম্মদ মাঈনুদ্দিনের ‘কানা বগির ছা’ ছড়ার বাস্তবরূপ আমতলীর থানার দক্ষিণ প্রান্তের পুকুর পাড়ে একটি জারুল গাছ। প্রকৃতিতে সবুজ অপরূপ সুন্দরের প্রতীক। আর সেই সবুজের ফাঁকে ফাঁকে সাদা বকের দৃশ্য যেন আরও অপরূপ। এ যেন চিরন্তন বাংলার রূপ। এমনি মুহূর্তে আমতলী থানার দক্ষিণ প্রান্তের পুকুর পাড়ের তিনটি জারুল গাছের মগডালে বসছে শান্তিময় পাখি বক। এ দৃশ্য যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আর্ডেইডি গোত্রের অন্তর্গত লম্বা পা বিশিষ্ট মিঠাপানির জলাশয় ও উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মৎস্যভোজী একদল জলচর পাখি বক। পৃথিবীতে মোট ৬৪ প্রজাতির বক রয়েছে। এসব বকের কিছু প্রজাতি আকৃতিভেদে বগলা (ইরঃঃবৎহ) ও বগা (ঊমৎবঃ) নামে পরিচিত। ইড়ঃধঁৎঁংএবং ওীড়নৎুপযঁং গণের সদস্যরা বগলা নামে পরিচিত আর বগাদের শরীরে সাদার প্রাধান্য বেশি। সারা বিশ্বে বিভিন্ন প্রজাতির বকের বিস্তৃতি থাকলেও নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে এদের বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। সবার কাছেই ভীষণ পরিচিত আর প্রিয় পাখি বক। পানির ভেতর এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা বক দেখতে খুবই মনোরম। গ্রামে সচরাচর এ পাখিটি দেখা যায়। তবে শহরাঞ্চলে বকের দেখা পাওয়া ভার। জারুল গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে সাদা বকের সারি যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বকের ডানা ঝাঁপটানো শব্দ যেন মাতিয়ে তোলে সবাইকে। আমতলী থানার দক্ষিণ প্রান্তে তেমন একটি দৃশ্য সবার নজর কাড়ে। জারুল গাছের সবুজ পাতা ও ফুল। এর মধ্যে বসে আছে ধবধবে সাদা বক। একটি-দুটি নয়, শত শত বক প্রকৃতিকে করে তুলেছে অনিন্দ্যসুন্দর। সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে সাদা বকের উপস্থিতিতে মেঘলা আকাশ সব মিলে যেন প্রকৃতিতে সৌন্দর্য অপরূপ। আর এমন দৃশ্য দেখার জন্য একটু দাঁড়ায় শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ। থানার জারুল গাছে গড়ে উঠেছে বকের আবাসস্থল। গত তিন বছর ধরে এ জারুল গাছে বক নিরাপদে বসবাস করছে। ঘটনাস্থল আমতলী থানার দক্ষিণ পাশে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ কেউ সবুজের মাঝে সাদা বকের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেন। এ ধরনের দৃশ্য লোকালয়ে দেখা যায় না। শহর-নগরের অট্টালিকা ছেড়ে গ্রামীণ জনপদে এমন নান্দনিক সৌন্দর্যে অবলোকন করা যায়। দিন ভর উড়ে চলা ও আহার শেষে পড়ন্ত বিকেলে বকের সারি ঠাঁই নেয় জারুল গাছের চূড়ায়। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বকের কিচিরমিচির শব্দে মুখোর হয়ে উঠেছে থানার পুকুর পাড়। মন ভোলানো এই দৃশ্য মুগ্ধ করছে পাখিপ্রেমীদের। সড়ক দিয়ে পথ চলা মানুষগুলো এক পলকের জন্য হলেও এ দৃশ্য অবলোকন করে। অনেক পাখিপ্রেমী বিকেলের পড়ন্ত রোদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে অপরূপ দৃশ্য। জারুল গাছের নিকটবর্তী স্টার কম্পিউটারের প্রোপাইটার গৌতম কুমার জানান, বকের কিচিরমিচির ডাক যেন অপরূপ। গত তিন বছর ধরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সারি সারি বক জারুল গাছে বসবাস করছে। আমতলী উপজেলা বন কমকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আবদুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, কোলাহলমুক্ত, নিরাপদ ও পুকুর ও জলাশয়ের পাশের গাছে বকের অভয়াশ্রম। থানার ভেতরের জারুল গাছের আবাসস্থল গড়ে তোলা বক রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আমতলী থানার ওসি মোঃ সহিদ উল্যাহ বলেন, শান্তিময় সাদা বক আমার আঙ্গিনার জারুল গাছে। শান্তির নীড় হিসেবে শত শত বক আমার থানা কম্পাউন্ডের গাছে আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। ওই বক রক্ষায় সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, এ পাখিগুলো আমাদের সম্পদ। কেউ যেন শিকার না করে সে দিকে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। -মোঃ হোসাইন আলী কাজী আমতলী-বরগুনা থেকে
×