ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেলনা নয় ফেলনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২১ এপ্রিল ২০১৮

ফেলনা নয় ফেলনা

হায়! অজ্ঞতা আমাদের কত যে পিছিয়ে রেখেছে। আমাদের জানা নেই, কোন্ জিনিসের কী ব্যবহার। কোন্্ খাদ্যে কোন্্ পুষ্টি রয়েছে সেসব বিষয়ে নেই সম্যক ধারণা। মাথার চুলও যে রফতানি হতে পারে তা জানা ছিল না। আহা আগেই যদি জানা যেত, তবে কত বৈদেশিক মুদ্রা যে আয় হতো, কর্মসংস্থান হতো কত বেকারের, সমৃদ্ধ হতো তাদের আর্থিক অবস্থা। আমরা ব্যবহার জানি না বলে ফেলে দেই, এমন জিনিসের যে বিদেশে কত কদর যদি জানা থাকত তবে রফতানি খাত বাড়ত, আয়ও হতো বৈদেশিক মুদ্রা। পানির পরিত্যক্ত খালি প্লাস্টিক বোতলগুলোরও যে বিদেশে চাহিদা রয়েছে, জেনেছি অনেক দেরিতে। এভাবেই অনেক কিছুতেই পিছিয়ে থেকে গেছি আমরা। আবার আমরা জেনে গেছি মাছের ফেলে দেয়া অংশের বিদেশে চাহিদার কথা। তাই সে সব রফতানি করেও শতকোটি টাকা আয় করছে বাংলাদেশ। চিংড়ি মাছের মাথা ও খোসা, কার্প জাতীয় মাছের আঁশ, হাঙ্গরের লেজ, ডানা, চামড়া, কাঁকড়ার খোসা, মাছের বায়ু থলি (ফুলকা), পিত্ত ও মাছের চর্বিসহ বিভিন্ন অংশ রফতানি হচ্ছে। ইউরোপসহ পূর্ব এশিয়ায় জাপান, চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে। এই হার ক্রমশ বাড়ছে। এসব অপ্রচলিত পণ্য রফতানি হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি তালিকায় নাম নেই। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ টন চিংড়ির খোসা ও মাথা এবং প্রায় ৫০ টন কাঁকড়ার খোসা চীন ও ভিয়েতনামে রফতানি হয়। অন্যান্য দেশে কোরাল, লাক্কা, ঘোড়ামাছ, আইড়, বোয়াল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন মাছের থলি, বিষাক্ত চর্বিও রফতানি হচ্ছে। গড়ে প্রতি মাসে দেড় শ’ টন মাছের ফোৎনা রফতানি করে আয় হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ লাখ ডলার। দুই শ’ থেকে আড়াই শ’ টন মাছের আঁশ রফতানি হচ্ছে । ৮০ টন হাঙ্গরজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয় ১৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশ থেকে মাছের যে ফেলে দেয়া অংশগুলো রফতানি করা হয় তা দিয়ে স্যুপ তৈরি হয়। পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের ইতালি, জার্মানিসহ অন্য দেশগুলোতেও এই স্যুপের চাহিদা ব্যাপক। অথচ আমরা বাংলাদেশীরা জানি না যে, এসবও খাদ্যের অংশ হতে পারে। অপ্রচলিত পণ্য বলেই এই খাতে সরকারী কোন সহায়তাও মেলে না। রফতানিকারকরা অবশ্য বলছেন, ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব সংগ্রহ করে রফতানি করা হচ্ছে। অপ্রচলিত পণ্য হওয়ার কারণে কোন প্রকার সহায়তা মেলে না। যে দামে কেনা হয় তার চেয়ে কিছু বেশি মুনাফা নিয়ে বেচা হয়। নিজেরাই মাঠে-ঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি করে সংগ্রহ করে তা রফতানি করছে। এসব থেকে পচা গন্ধ আসে বলে অনেকেই পরিবহনে আগ্রহী নয়। নিজস্ব যানবাহনও নেই। তবে এসব ‘প্রসেস’ করে পরিষ্কার করে ককশিটে প্যাকেট করার পরই রফতানি করা হয়। রাজধানীর শ্যামবাজার, কাওরানবাজার ও হাতিরপুল বাজার এবং পটুয়াখালী, খেপুপাড়া. কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন বাজারের আড়ত থেকে এসব সংগ্রহ করা হয়। এসব অঞ্চলে হাঙ্গরের লেজও পাওয়া যাচ্ছে। বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে চিংড়ি ও কাঁকড়ার খোসা সংগ্রহ করা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা না হওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা এসব ফেলে দেন। বাড়তি মুনাফার আশায় রাজধানীর মাছের বাজারগুলোতে যারা মাছ কাটার কাজ করেন; তারাই এসব সংগ্রহ করে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। অল্প দামে বেশি পণ্য কেনার সুবিধাটা ব্যবসায়ীরা এখন পাচ্ছেন। এটা যদি প্রচলিত পণ্যের মর্যাদা পায় এবং সারাদেশ থেকে এসব সংগ্রহ করা যায়, তবে বিপুল আয় ও কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যেমন, দেশের একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে এসব পণ্য বিনামূল্যে পেত। কিন্তু এখন তারা বিনিময় মূল্য দাঁড় করিয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারে এসব কেনার দুটো আড়ত রয়েছে। এই আড়তদ্বয় থেকেই বেশিরভাগ পণ্যই ককশিটের প্যাকেটে করে রফতানি হচ্ছে। অপ্রচলিত পণ্য বলে বিমান পরিবহন না করায় স্থলপথের ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এখন রফতানি পণ্যের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজেরাও আগ্রহী হয়ে সহায়তার হাত বাড়াতে পারত। তাদের নীতিমালায়ই তো রয়েছে অপ্রচলিত পণ্যকে প্রচলিত পণ্যে রূপান্তর করা। মন্ত্রণালয়ের উচিত বিষয়টাকে অনুধাবন করে মাছের ফেলনা অংশ ছাড়াও আরও অন্যান্য অপ্রচলিত পণ্যকে রফতানির উপযোগী করা। যা দেশের জন্য সার্বিক মঙ্গল বয়ে আনবে।
×