ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে হটলাইন চালু ॥ দুই দেশের নেতার মধ্যে শীঘ্রই প্রাথমিক আলোচনা

শীর্ষ বৈঠকে জোর প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২১ এপ্রিল ২০১৮

শীর্ষ বৈঠকে জোর প্রস্তুতি

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের মধ্যে সরাসরি কথা বলার সুবিধার্থে শুক্রবার একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক সম্মেলনের বিষয়ে তারা প্রস্তুতি নিতে পারেন সেজন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। দুদেশের সীমান্তে পানমুনজাম গ্রামের পাশেই এ বৈঠকটি হবে। সীমান্তবর্তী ওই এলাকাটিই দুই দেশকে গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। খবর গার্ডিয়ানের। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, দুনেতার বৈঠকের প্রস্তুতিতে গতি আনতে এ উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে। আগামী শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের বৈঠকের আগে যেন দুই নেতা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করে নিতে পারেন সেজন্য এই হটলাইন চালু করা হয়েছে। এ সম্মেলনটি অসামরিক জোনের দক্ষিণ পাশে অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের পর থেকে ওই এলাকাটিই উপদ্বীপটিকে আলাদা করে রেখেছে। ইয়োনহ্যাপ সংবাদ সংস্থা জানায়, এই হটলাইনটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্যালেস ব্লু হাউস ও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পর্কিত কমিশনকে যুক্ত করেছে। কিম এই কমিশনটির প্রধান। কিম ও মুনের সংলাপকে সামনে রেখে দুদেশের কর্মকর্তারা হটলাইনটি চালুর পর এখন সেটি পরীক্ষা করে দেখছেন। যদিও তারা কবে একে অপরের সঙ্গে কথা বলবেন তার কোন তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতার বৈঠকটি হবে একটি পরীক্ষামূলক কাজ। এতে করে মুনের চেষ্টা থাকবে আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয়ার। অতীতের বৈঠকগুলোতে দেখা গেছে, কয়েক দশক ধরে চলা খারাপ সম্পর্কের পর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, দৃঢ় ও দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্যের বিষয়ে উচ্চাশার সৃষ্টি হলেও পরে তা আর হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, মুনের কাজ হবে সুস্পষ্ট আলোচনার মাধ্যমে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিবেশ বজায় রাখা। যাতে মে মাসে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প ও কিমের বৈঠকে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়। যেখানে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুনকে এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। কেননা এটিই হচ্ছে কোরিয়া যুদ্ধের পর তৃতীয় কোন সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে সিউল ক্রেডিট নিতে পারে যে তারাই আলোচনার পথ সুগম করেছে। এ কারণেই যে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা যখন উত্তর কোরিয়া সফর করেন তখন কিম নিজে থেকেই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ তাদের কাছেই করেছেন। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি কিমের সঙ্গে বৈঠকে বসতে সায় দেন। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে, দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার কতটা উত্তর কোরিয়া গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে। ১৯৮০’র দশক থেকে উত্তর কোরিয়া নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে যে কোন আলোচনায় দর কষাকষি করে যাচ্ছে। অতীতের আলোচনাগুলোতে তাদের দাবি ছিল দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। তখন ওয়াশিংটন ওই এলাকায় সমরাস্ত্র প্রদর্শন করার কাজটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। তারা উত্তর কোরিয়াকে এও নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে কোন হামলা চালানো হবে না। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা মুনের বক্তব্যের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি উত্তর কোরিয়া। মুন এক বিবৃতিতে জানান, মে মাসের শেষ অথবা জুনের প্রথমদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পূর্বশর্ত হিসেবে কোরিয়ান উপদ্বীপ থেকে মার্কিন বাহিনীকে প্রত্যাহারের বিষয়ে কোন দাবি করেননি কিম। গণমাধ্যম নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে মুন বলেন, উত্তর কোরিয়া পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অগ্রহণযোগ্য এমন কোন শর্ত যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের মতো বিষয় রয়েছে তা তারা (উত্তর কোরিয়া) দেয়নি। উত্তর কোরিয়া শুধু তাদের বিরুদ্ধে বৈরী নীতির পরিসমাপ্তি চায়। যাতে তার দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। রাষ্ট্রপরিচালিত কেসিএনএ সংবাদ সংস্থা জানায়, বর্তমান ঐতিহাসিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির কমিটি নতুন পর্যায়ে নীতিগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে, মুন ও ট্রাম্পের সঙ্গে তার চূড়ান্ত আলোচনার আগে তিনি অর্থনৈতিক ও পারমাণবিক উন্নয়নের দ্বৈতনীতি পুনর্বিবেচনা করবেন। সিউলের সিজং ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফিলো চিওং সিওং-চাং বলেন, উত্তর কোরিয়ার নীতিমালা সংশোধন করে নতুন একটি নীতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নতুন পরিকল্পনার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিত্বমূলক আলোচনায় যোগ দেয়ার বিষয়টি থাকতে পারে। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা হতে পারে।
×