ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কয়েক রফতানিকারক দুবাইয়ে বসে আছে

আমিরাতের শ্রমবাজার দখলে নেয়ার চেষ্টা সিন্ডিকেটের

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২১ এপ্রিল ২০১৮

 আমিরাতের শ্রমবাজার দখলে নেয়ার চেষ্টা সিন্ডিকেটের

ফিরোজ মান্না ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারটি সিন্ডিকেট দখল করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী সিন্ডিকেটের মূলহোতা এখন দুবাইতে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ থেকেও সিন্ডিকেটের দুই তিন জন জনশক্তি রফতানি কারক দুবাই গিয়ে বসে আছেন। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারটি খুলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে চলে গেছেন। সেখানে নিয়োগকৃত তাদের এজেন্টের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারটি মালয়েশিয়ার মতো হতে না দেয়ার ঘোষণায় সিন্ডিকেট প্রথমেই একটা হোঁচট খেয়েছে। দুবাই থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি ১০ সদস্যের জনশক্তি রফতানি কারক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন এখন দুবাইয়ে রয়েছেন। তারা এখানে দুবাই সরকারের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক এমন এক ব্যক্তির অফিসে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ও জানে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। সূত্র বলেছে, বাজারটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তৈরি ১০ সদস্যের সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা বৃহস্পতিবার দুবাই চলে এসেছে। তার একদিন আগে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাজারটি খোলার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার আগে থেকেই কয়েকজন জনশক্তি রফতানি কারক ঘনঘন যাতায়াত শুরু করেছিল। তারা সেখানে কেউ কেউ অফিসও নিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছেন। যে কাজটি এই সিন্ডিকেট মালয়েশিয়াতে করেছেন- ঠিক একই কায়দায় দুবাইতে করা হচ্ছে। তারা দেশের জনশক্তি রফতানি কারকদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে দিয়েছে, মালয়েশিয়ায় যেভাবে কাজ হচ্ছে একইভাবে এখানেও হবে। এ খবর পেয়ে অন্য জনশক্তি রফতানি কারকরা বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না। এই বাজারেও যদি সিন্ডিকেটের থাবা পড়ে তাহলে ১৪ শ’ জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে পথে বসতে হবে। এতদিন ধরে এই বাজারের অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেছেন, এই বাজারও যদি মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায় তাহলে তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। সরকারও যদি তা অনুমোদন করে তাহলে তাদের লাইসেন্স মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। মালয়েশিয়ায় যে ব্যক্তি সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন ওই ব্যক্তি এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন। ওই ব্যক্তি সব কিছু সমন্বয় করে যাচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারটি চালু হওয়ার আগেই মন্ত্রণালয়ে মালয়েশিয়ার সেই সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যে প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার বাজারটি ১০ জন ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারটিও একই প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করার আলাপ আলোচনা করেছে। এতে ওই কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে এক মত হলেও কিছুটা ভয় কাজ করছে বলে জানিয়েছে। কেন কি কারণে ভয় কাজ করছে জানতে চাইলে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই চিঠিটি বর্তমানে মন্ত্রীর দফতরে রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টি আছে বলে তারা জানিয়েছে। এ কারণে তারা প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে পারছেন না। তবে যদি একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে সিন্ডিকেট তাহলে তারা সমর্থন করবেন। এমন একটি সমঝোতা মন্ত্রণালয়ে আগেই হয়ে আছে। এখন দুবাই অংশে দুবাই সরকারকে ‘ম্যানেজ’ করার কাজ করছে তারা। যদি এই বাজারটিও মালয়েশিয়ার মতো হয়ে যায় তাহলে আবার বাজারটি বন্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারটি বন্ধ থাকার পর অনেক দেন দরবার করে আবার বাজারটি খোলা সম্ভব হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে বাজারটিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ হয় সেদিকটি মন্ত্রণালয় নজরে রাখবে। কোন অবস্থাতেই বাজারটি নষ্ট হতে দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ থেকে ১৯টি ক্যাটাগরিতে কর্মী নিয়োগের বিধান, পদ্ধতি, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি ও উভয় দেশের সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য, কর্মীদের অধিকার, সুযোগ সুবিধা, এমপ্লয়ারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, নিয়োগ চুক্তির বিধান ও পৃথক একটি বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ২০১৭ সালে কার্যকর হওয়া আইনের আলোকে সমঝোতা স্মারকটিতে শ্রমিক, মালিক ও উভয় দেশের সরকারের দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে। নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও দায়িত্বশীল শ্রম অভিবাসনের লক্ষ্য অর্জনের বিষয়সমূহ বিবেচনায় রেখেই চুক্তিটি হয়। সমঝোতা স্মারকটি বাস্তবায়নের জন্য উভয় দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি পুনঃগঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে কতিপয় সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×