ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্মার্টফোনে সাথী এ্যাপ্স, তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল ডেটাবেজ

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২১ এপ্রিল ২০১৮

স্মার্টফোনে সাথী এ্যাপ্স, তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল ডেটাবেজ

সমুদ্র হক ॥ মাঠ পর্যায়ে সকল কৃষকের চাহিদাভিত্তিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশে এই প্রথম প্রত্যেক কৃষকের সার্বিক তথ্যের ই-ডেটা তৈরি হচ্ছে। কৃষকের সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাজ অর্ধেকেরও বেশি এগিয়েছে। চলতি বছর শেষ হওয়ার অনেক আগেই ডেটা তৈরি শেষ হয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্যের ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু হবে। একই সঙ্গে প্রত্যেক কৃষক তাদের সেল (মোবাইল) ফোন থেকে নির্দিষ্ট একটি নম্বরে কল করে কৃষি বিষয়ক যে কোন প্রশ্নের উত্তর ও পরামর্শ পাবেন। এই কাজে কৃষি মন্ত্রণালয় সেলফোনের একটি এ্যাপ্স তৈরি করে নাম দিয়েছে ‘সাথী’। পুরো ব্যবস্থার নামকরণ করেছে ‘কৃষকবন্ধু ফোন সেবা’। যার আরেক পরিচিতি ডিজিটাল বাংলাদেশে কৃষির ই-বাতায়ন। সরকারের এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচীর আওতায় কৃষির ই-বাতায়ন খুলে দেয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, দেশের কোন অঞ্চলের কোন কৃষক কি ধরনের চাষাবাদ করে এতকাল তার কোন ই-ডেটা ছিল না। কৃষি সেবাকে ইলেকট্রনিক্স (ই) সেবায় রূপান্তর করা হচ্ছে। সকল ডেটা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে থাকবে। ই-ডেটা যেন কোন কারণে হারিয়ে না যায় সেজন্য কয়েকটি ব্যাকআপ থাকবে। এছাড়া ও প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে এই ই-ডেটা সংরক্ষণ করা হবে। যা আপডেট করা হবে প্রতিনিয়ত চলমান প্রক্রিয়ায়। সূত্র জানায় ইতোমধ্যে দেড় কোটিরও বেশি কৃষকের ডেটা এন্ট্রি করা হয়েছে। শীঘ্রই সকল অঞ্চলের ডেটা এন্ট্রির কাজ শেষ হয়ে ই-ডেটা বেজ তৈরি হবে। দেশের কোন অঞ্চলের মাটির উর্বরতা কেমন, কোন ক্যাটাগরির কৃষক কি ধরনের চাষ করে তার সবই মিলবে ডিজিটাল তথ্য ভান্ডারে (ই তথ্য ভান্ডার)। এই ভান্ডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সিদ্ধান্ত দেবে। যা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছবে। সূত্র জানায়, কৃষকের ঘরের দুয়ারে সহজে কার্যকরী সেবা দ্রুত পৌঁছে দিতে এবং গবেষক, সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত যোগাযোগ বাড়াতে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যৌথ উদ্যোগে ‘কৃষি সম্প্রসারণ বাতায়ন’ চালু হতে যাচ্ছে। এই বাতায়ন সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বর্ণিত গবেষণা-সম্প্রসারণ-খামার সংযোগ শক্তিশালীকরণে বড় ভূমিকা পালন করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে দেশের ১৫ হাজার সম্প্রসারণ কর্মী প্রায় ৩ কোটি কৃষককে সেবা দিচ্ছে। এর আগে প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততায় ও লোকবল কম থাকায় এই সেবা প্রদানে অনেক সময় বিঘ্ন ঘটে। সেবার এই কাজকে আরও সহজ করে টু দ্য পয়েন্টে কার্যকর সেবা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ডেটা বেজ তৈরি করা হয়েছে। যাতে কৃষির বহুমাত্রিক তথ্য যোগ করা হয়েছে। এই ই-বাতায়নে কৃষির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এভাবে-চলতি কৃষি ও ফসল, দেশজ কৃষি, সাফল্য গাঁথা কৃষি, বর্তমানের ও আগামীর যা করণীয়সহ সার্বিক বিষয় স্থির চিত্র ও চলমান চিত্রের (ভিডিও) মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে। যা থাকবে একটি গ্যালারিতে। কৃষির ই-বাতায়ন আবর্তিত হয়েছে একটি সম্প্রসারণ ড্যাশবোর্ড ও ১৬টি মডিউলের মাধ্যমে। যা নিত্য নতুন প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিকে প্রত্যেক কৃষকের দুয়ারে পৌঁছে দেবে। কৃষির আধুনিকায়নে এই আন্তঃযোগোযোগ কৃষকের ক্ষমতায়নে বড় ভূমিকা রাখবে। ই-বাতায়নের হাটবাজার মডিউলটি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের বিষয়টি তুলে ধরবে। উপকরণ ও ডিলার মডিউল উৎপাদন ব্যবস্থার (বীজ, চারা, সার, বালাই দমন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) প্রয়োজনীয় সকল যোগাযোগ স্থাপন করবে। গবেষক-সম্প্রসারণ কর্মী- কৃষকদের কৃষি জ্ঞানের আদান প্রদানের জন্য আছে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম। এতে রয়েছে ১শ’ ২০টি ফসলের ৭শ’ ৮৬টি জাত এবং একশ’টি বালাইয়ের সামগ্রিক তথ্য। সংবাদপত্র মডিউলের কাজ হলো : জাতীয় ও আঞ্চলিক কৃষি সংবাদগুলোকে কৃষকের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে পৌঁছে দেয়া। কৃষি ও কৃষকের প্রতিটি প্রয়োজনকে ডিজিটালাইজড করে পৌঁছে দিতেই এই বাতায়ন। এর বাইরে মোবাইল ফোনভিত্তিক দিন রাত ২৪ ঘণ্টা নির্ভরযোগ্য কৃষি পরামর্শের সেবা চালু করা হচ্ছে। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। কৃষকবন্ধু ফোন সেবায় রয়েছে সাথী এ্যাপ্লিকেশন (এ্যাপস) প্রযুক্তি। যা স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে সহজে তথ্য ঘরে পৌঁছে যাবে। এই এ্যাপসটি শিক্ষা ও আধুনিকতায় পিছিয়ে থাকা লোকজনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কৃষি ই-বাতায়নের সকল কৃষক নির্দিষ্ট একটি ফোন নাম্বারে (৩৩৩১) কল করে কৃষি বিষয়ক যে কোন প্রশ্ন করে উত্তর ও পরামর্শ নিতে পারে। এই কল নম্বরটি সেটআপ করা হয়েছে এভাবে- কল করলে উত্তর নিশ্চিত মিলবে। কলটি প্রথমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের মোবাইল ফোনে পৌঁছবে। কোন কারণে তিনি কলটি না ধরলে আপনা আপনি পরবর্তী স্তরে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারের কাছে যাবে। কোন কারণে তিনিও না ধরলে পরবর্তী স্তরে উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে যাবে। তিনিও যদি কলটি না ধরতে পারেন তাহলে কলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হয়ে থাকবে। ভয়েস শর্ট মেসেজ সার্ভিস (ভয়েস এসএমএস) অথবা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) মাধ্যমে প্রশ্নকারী প্রত্যাশিত উত্তর পাবেন। এ ছাড়াও কলের হার যদি অতিমাত্রায় বেড়ে যায় তাহলে উপজেলা কৃষি অফিসার কল ধরার আরেকটি স্তর সৃষ্টি করে সেখানে প্রশ্নকারীর এলাকার কোন অভিজ্ঞ কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করত পারবেন। যখন যে পর্যায় থেকে উত্তর মিলবে কলটি সেখানেই থেমে যাবে। এই ফোন সেবা প্রচলিত কল সেন্টার থেকে আলাদা। প্রচলিত কল সেন্টারে কেন্দ্র থেকে শুদ্ধ ভাষায় উত্তর দেয়া হয়। যা অনেক সময় আঞ্চলিক পর্যায়ের কৃষকের বুঝতে অসুবিধা হয়। সাথী ফোন সেবায় উত্তর প্রদানকারী প্রশ্ন শুনে সেই এলাকার আঞ্চলিক কথায় উত্তর দিতে পারবেন। সাথী সেবায় ছবি ও শব্দশৈলীর ব্যবহার খুবই সহজ হবে। সেল ফোন নম্বর সংরক্ষণ ও দ্রুত খুঁজে পেতে কোন অসুবিধা হবে না, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বহুমাত্রিক ব্যবহারে সহায়ক হবে। কৃষি কর্মকর্তাগণ বলছেন, কৃষির এই ডিজিটালাইজেশন বা কৃষির ই-বাতায়ন দেশকে অতি দ্রুত এগিয়ে নেবে। যা টেকসই উন্নয়নে অভিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দ্রুত অর্জনে সহায়ক হবে।
×