ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদুর রেজা সাগর

আত্মকথন ॥ বেদনা আমার জন্ম সহোদর

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২০ এপ্রিল ২০১৮

আত্মকথন ॥ বেদনা আমার জন্ম সহোদর

ওর জীবনের গল্প বলার ভঙ্গিটাই আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। কোন রাখ ঢাক নেই। জীবনের বাস্তব ঘটনাগুলো দ্বিধাহীন, অকপট ভঙ্গিতে বলে গেছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। একবার মনে হয়েছিল ছেলেটি কী এমন মর্যাদায় নিজেকে দাঁড় করিয়েছে যে এখনই জীবন কাহিনী লিখতে হবে? ওর এখন তরুণ বয়স। কবিতা লিখে। মফস্বল সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। এই তো মোটামুটি পরিচয়। এই পরিচয়ে, এই বয়সেই জীবনের গল্প নিয়ে ঢাউস সাইজের একটা বই লিখেছে। এক ধরনের বাড়াবাড়ি নয় কী? কিন্তু ওর বই পড়ে আমি যার পর নাই মুগ্ধ। হ্যাঁ, ইজাজ মিলনের এই বইখানি তার জন্য যত না দরকারি তার চেয়ে বেশি দরকারি হয়ে উঠতে পারে তরুণদের জন্য। যারা জীবন সংগ্রামে একটুতেই হাঁপিয়ে যায় তারা বোধকরি উপকৃত হবে মিলনের এই বই পড়ে। আমরা অনেকে যখন একটু বড় হই, সমাজে নাম-ডাক হয় তখন বেমালুম ভুলে যাই পেছনের কথা। শেকড়কে অস্বীকার করতে থাকি কেউ কেউ। কিন্তু ইজাজ মিলন তা করেনি। ওর বইখানি শুরু হয়েছে জীবনের এক সত্য ভাষণ দিয়ে। ‘রিকশাওয়ালার পোলা বলে প্রায় সময়ই আমাকে গালি দেন দু’একজন বন্ধু কিংবা ঘনিষ্ঠজন। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে বহুবার গালিটি আমাকে শুনতে হয়েছে। এটা শুনে এখন আর আমার খারাপ লাগে না। এক সময় খারাপ লাগত। অপরাধী মনে হতো। ভাবতাম, রিকশাওয়ালার ঔরসে জন্ম নিয়ে যে অপরাধ আমার হয়েছে কার কাছে ক্ষমা চাইলে বন্ধুরা আর আমাকে এই বলে গালি দিবে না। অবশ্য এ অপরাধের জন্য কখনও আমার ভেতরে অনুশোচনা কাজ করেনি। গালিটা ছিল আমার কাছে এক ধরনের প্রেরণা, এক অর্থে উৎসাহও...’ কি অকপট স্বীকারোক্তি। ক’জনই বা পারে এভাবে কষ্টের অতীতকে মহিমান্বিত করতে? এই তরুণকে আমাদের উচিত সহায়তা করা। তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত। দেশের বিশিষ্ট দৈনিক পত্রিকা ‘সমকাল’ এর গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে সে এখন সাংবাদিকতা করছে। নিয়মিত কবিতা লিখে। সাংবাদিকতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রবর্তিত ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক’ পেয়েছিল। পুরস্কার প্রদান কমিটির একজন নিয়মিত বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওর ব্যাপারে জানতে পারি। আত্মকথন গ্রন্থ ‘বেদনা আমার জন্ম সহোদর’ ওর জীবনের বেদনা দূর করে অন্যদের জীবনসংগ্রামেও প্রেরণার উৎস হয়ে উঠুক এই শুভ কামনা থাকলো।
×