ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হারুন পাশা

গল্প ॥ নিজের কথা বলবো কখন

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২০ এপ্রিল ২০১৮

গল্প ॥ নিজের কথা বলবো কখন

রিমি, সেদিন ধাম করে ফোন রাইখাদিলা, ব্যাপারটা কি? ব্যাপার আছে। সেটাই জানতে চাচ্ছি, বলো। ওইদিন তোমার লগে আলাপ করতে করতে ফেসবুকে দেখতে পাই হাসান মিশুকের একটা পোস্ট। পোস্ট না ঠিক, ওইটা ছিল নোট, নাম ‘নিজের কথা বলবো কখন’। অর নোটের লগে ফোন রাইখা দেয়ার সম্পর্কটা ক্লিয়ার করো। এইটা তো বড় গল্প, শর্টকার্টে বলতাছি। তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই। ভাইয়া যখন থার্ড ইয়ারে পড়েন তখন বৈশাখী অনুষ্ঠানে নির্মলেন্দু গুণের ‘তোমার চোখ এত লাল কেন’ কবিতাটা আবৃত্তি করেছিলেন। আবৃত্তি শোনার পর থাইকাই তার ফ্যান হয়া যাই। চমৎকার আবৃত্তি। তখন আমি ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। বড় বড় চুল। চোখে চশমা। দেখতে ভালোই লাগতো। ভাইয়া যা লেখেন তাই মন দিয়া পড়ি, তখন থাইকাই। ওইদিন নোট লিখছেন, এইটা পায়া খুবই চমক খাই। তিনি নোট লেখেন তার এক বন্ধুর লগে আলাপের ঢঙে। বন্ধুর নাম রাহুল। দুইজনই ব্যাংকে চাকরি করে। হাসান ভাইয়া আইএফআইসি ব্যাংকে, আর রাহুল ভাই জনতা ব্যাংকে। কি লিখছিলো সেই নোটে? ব্যক্তিজীবনের কিছু কথা। ওয়েট করো, শোনাচ্ছি। লিখেছে : বন্ধু রাহুল, আজ বাবা ফোন করছিলো। তারপর? বাবার টাকা দরকার। বাড়ি ঠিক করবে। জমি বন্ধক আছে। খুলবে। নিশ্বাস না ফালায়া বইলা গেল সংসারের অনেক কথা। তুই কি বললি? আমি কেবল শুইনা গেলাম। বললাম পাঠাবো টাকা, কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। অথচ আমার কাছে পাঠানোর মতো টাকা নাই। রাগও করতে পারি না। আবার আমার সঙ্কটের কথা বলতেও পারি না। বাপ-মায়ের বয়স হইছে। শেষ বয়সে সবাই আরাম চায়। বাপ-মাও চায়। জীবনভর কষ্ট কইরাই গেল। আর তার সন্তানরা পরিস্থিতির চাপে সঙ্কটাক্রান্ত। অযোগ্যের ধাড়িও বলা যায়। তাকে চারপাশের অনেক মানুষ নিয়া থাকা লাগে। শহরে না হয় কেউ কাউরে চিনে না। গ্রামে তো সবাই সবাইরে চিনে। বাবা এখনও অনেক দূরে হাঁইটা হাঁইটা যায় নামাজ পড়তে। আমি তো পারতাম অন্তত একটা রিক্সা কনট্রাক কইরা দিতে। পারছি কই। ঠিকমতো টাকাও পাঠাইতে পারছি না তো। দোস্ত, ফ্যাডাপ খাইছ না। সময় আসবো। টেনশন না কইরা চুপচাপ রেস্ট নে। তোর লগে আরও কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু আমার জরুরী কাজ পড়ছে। কালকে আবার কথা হইবো। ঠিক আছে। রিহ্যাব, হাসান ভাইয়ার নোটটা পইড়া আমার খুব খারাপ লাগছে। ফোন করতে চাইলাম। তখন দেখি রাত অনেক। রাইতে ভালো ঘুম হয় নাই। এইপাশ-ওইপাশ করি ঘুম আর আসে না। যাও আইলো ঘুম, রুমমেট ক্লাসে যাওয়ার লাইগ্গা খুটখাট শুরু করলো। ঘুম গেল ভাইঙ্গা। সারাদিন মাথা ধরা নিয়াই কাটাইলাম। রিমি, এখনও তোমার মাথা ধরা আছে? একটু। এইদিকে আসো, মাথা টিইপ্পা দেই। থাক। ঢং লাগবে না। চলো। আজ আমরা রুমে ফিইরা যাই চটপটি খায়া। ওকে। খ নোট নং দুই তারপর বাবা কিংবা ভাইয়ের নম্বর থেকে কল আসলে রিসিভ করতে ভয় পাই। মনে হয় এই বুঝি কোন খারাপ সংবাদ আছে। তাদের টাকা দরকার, দিতে পারছি না। লাইন কাইটা দেই। অনেক সময় পর সাহস জোগাড় কইরা কলব্যাক করি। কী আর করবি দোস। সময়টা খুবই নষ্ট। চেনারা অচেনা হইতাছে। অচেনারা তো আরও নাগালের বাইরে। নাইলে সব মিলায়ে তো একটা ব্যবস্থা হইতো। হুম, তা হইতো। মানুষের বোধ বল, নৈতিকতা বল, বিশ্বাস বল, সব গদে গ্যাছে। আমরা যা দেখি তা কেবল ছায়া। ছায়ারাও মৃত। হ। এরপর হাসান আর রাহুল ভাইয়া আলাপ আগায় নাই। কালকে ক্যাম্পাসে রিক্সায় ঘুরবো, রিহ্যাব তুমি থাকবে? আচ্ছা, থাকবো। চলো পার্কের মোড়ে দাঁড়াই। বেরোবির সামনের এই স্পটটা আমার বেশ লাগে। মানুষ, গাড়ি কেবল ছুটছে। রাস্তায় মানুষের ব্যস্ততা দেইখা নিজেরও কাম-কাজের গতি বাড়ে। বাহ্, দেখছি তুমি রাস্তা বিশেষজ্ঞ হয়া গেছ। মজা নিয়ো না। চলো সামনে আগাই, তোমারে বাসা পর্যন্ত দিয়া আসি। ওকে। চলো। গ রিহ্যাব, আমড়াটা ধর। দাও। ভাঙ্গো আর একটা একটা কইরা আমারে দাও। ব্যাপক মজা না? হুম। এই শোনো, কাল না হাসান ভাইয়া আরেকটা নোট লিখছে। হেব্বি লিখছে। আমড়া নাও। তুমি শুনতে চাও না, তাই না? শুনবো তো। আগে এটা নাও লবণ মাখায়া দিছি। এখন বলো, কী লিখছেন তোমার ভাইয়া। লিখছে : রাহুল, সারাদিন বাইরে থাইক্কা বাসায় ফিরি। দেখি বউ পুরাপুরি নিউজ স্টোর হয়া আছে। একদিকে দরোজা খুলতাছে অন্যদিকে সংবাদ পিটানি চালু কইরাই রাখছে। ফ্রেশ হইয়া আইসাও দেখি চলছে তার কথার পিটানি। শুরু হয় অর পছন্দের লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের খবর দিয়া। যে চাকু দিয়া কোপ দিছিল অরে বদ-টদ কয়া ফাটাইলো। তারপর নিউজ মুখ পরিবর্তন করলো। বলা শুরু করলো বিউটির ধর্ষণ নিয়া। শোন দোস্ত, বাংলাদেশ হইলো ঘটনায় ভরা দেশ। একটা ঘটনার সুতা আরেকটারে টান মাইরাই রয়। সকালে একটা ঘটলো, এইটা নিয়া নিউজ হইলো, দুপুরে নতুন একটা, সন্ধ্যা-রাইতে আরেকটা ঘটনা। বউও মুখস্থ কইরা রাখে সব। মুখ গম্ভীর কইরা কয়, বাংলাদেশের সব নারীরা যদি জাইগা উঠতো কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মতো। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের মাইয়ারা যদি আন্দোলনে নামতো, তাইলে ধর্ষক, নিপীড়ক কবেই দেশ ছাড়তো। তখন তাগোরে পাওয়া যাইতো মিউজিয়ামে। হাসান, দেশের নারীবাদীরা কি পারে না এমন আন্দোলনের ডাক দিতে? তাইলে ফেসবুকে লিখবো কে? দেখো, ফেসবুক কিন্তু সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। সর্বোচ্চ একলগে হওয়ার ঘোষণা প্রচার করতে পারে। এ দেশের নারীবাদীরা তো ফেসবুকে লিইখ্যাই আরাম বোধ করে। আর বুক খুইলা ছবি আপলোডে ব্যস্ত রাখে। এর লাইগাই তো ধর্ষণ আর খুন বাড়ছেই। আগে বাংলা সিনেমায় এই দৃশ্য খুব দেখাইতো, তোমার মনে আছে কি? আছে। তারপর বলো। মিশা সওদাগর, কাবিলা, ডিপজল প্রত্যেক ছবিতে কোন না কোন ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয় করছেই। তখন বাস্তবে কম ছিল। এখন সিনেমায় উইঠা গেছে, কিন্তু বাস্তবে বাড়ছে। সিনেমার প্রভাব বাস্তবে তো পড়েই। হুম। প্রভাব বিষয়ে যখন আলাপ আগাইতাছে তখন আরেকটা বিষয় বলি। বেশি কিছুকাল আগে ভারতে দামিনী চলন্ত ট্রেনে রেফ হইছে। এই সংবাদ বাংলাদেশের সব মিডিয়াই বড় কইরা প্রচার করলো। বাংলাদেশের রেপিস্টরা নতুন ধারণা পাইলো। তারাও কয়দিন পর এই ধারণা কাজে লাগাইয়া মাইক্রোবাসে গারো তরুণী ধর্ষণ করে। চলন্ত বাসে গার্মেন্টসকর্মীরে লাগায়। এইসব বন্ধ করতে হইলে বড় আন্দোলনে যায়ুন লাগবো। রিহ্যাব, এইখানেই ভাইয়ার তিন নম্বর নোট শ্যাষ হয়। শোনো, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইয়ারা কিন্তু কয়দিন আগে ধর্ষক আর নিপীড়কের বিরুদ্ধে রাস্তায় নাইমা আন্দোলন করছিলো। অন্যরা এইটাকে কন্টিনিউ করলে ভালো ফল আসতো। তা তো আসতোই। পরের নোটে কি লিখছিলো হাসান মিশুক? এরপর তার বন্ধুর লগে কনভারসেশনে যোগ দেয়। লিখছে চার নম্বর নোটে : হাসান, তোর বউ তো বেশ সচেতন নারী। হ রে রাহুল, ব্যাপক সচেতন। খালি সচেতন না আমার ব্যাপারেই। ক্যান, কি হইছে? দোস, সারাক্ষণ এইসব গল্প শুনতে ইচ্ছা করে। অফিসে থাকি বসের ঝাড়ি আর মন রক্ষার হিসাবো। বাড়িত আইয়া বউয়ের গল্পের লগে তাল। আমারও তো নিজের কিছু কথা থাকতে পারে। তারে ওই কথাগুলা কইবারি পাই না। তাইলে তো প্যারার মইদ্দেই আছস। হ, আছি। তর কি অবস্থা? চলে না। ক্যান, গাড়ির ত্যাল নাই? ত্যাল আছে, স্টার্ট দিতে ইচ্ছা করে না। তুই তো জানছো, একটার লগে প্রেমে মজলাম ক্যাম্পাস লাইফের শ্যাষে আইসা। চলতাছেন ভালোই। কিছুদিন আগানির পর জ্যামে আইটকা গেল। মানে? মানে হইলো তারে বিয়া করার প্রস্তাব দিলাম। অর বাড়িত থাইক্কা কয় বিয়া যদি করই তোমারে ঢাকাত আসুন লাগবো। ক, যে টাকার বেতন পাই অই টাকায় শহরের বাইরে ভালো কইরা চলা সম্ভব, ঢাকায় আসলে মাসের পনেরো দিনেই শ্যাষ হইয়া যাইবো। বাকি পনেরো দিন কি করাম? বাড়িত কি পাঠায়াম? বাপ-মায়ে আমার পিছনো ২৭-২৮ বছর ধইরা যে ইনভেস্ট করলো তারাও তো কিছু ফিডব্যাক পাওয়ার আশা রাখতে পারে। বেতন থাইকা বাড়িত পাঠাই কিছু, আর নিজে চলবার পাই টান-টুন ছাড়া। বউরে নিয়াও চলা যাইতো। কিন্তু ঢাকায় থাকুন লাগবো এই সার্টিফিকেট হাতে ধরায়া দিছে। বাকি পনেরো দিন যে তারা চালাইবো, সেই সম্ভাবনাও নাই। ব্যাপক ঝামেলা চলতাছে। হ রে দোস্ত। ঝামেলাই। নিজেরে তৈয়র করতে লাগে ২৮-২৯ বছর। তারপর বিয়া করো। বউ আনো। আনার পর তাগোর ফরমায়েশ খাটতে খাটতে পুত্র-পুত্রির জন্ম, তাগোরে বড় করো, বুড়া হও। এই তো জীবন। বউ-সন্তানরা যদি বুঝতো তাদের বর এবং পিতা কত শ্রী মার্কা জীবন পার কইরা চাকরিতে আসে। তাইলে হয়তো তারা একটু দরদী হইতো। যৌবনের মাতাল সময়গুলা খরচ হয়া যায় চাকরি পাওয়ার পিছনো। বিয়া করার পর খালি হিসাব মিলাও অন্য কাম ছুটি দিয়া। মিশুক তুই কি হিন্দি গান দেখতাছস? এই দেখি। বুঝি তো না কী কয়, খালি দেখি। ভাবি কই? অয় ঘুমাইতাছে। নেগেটিভ কেস? সেইরকমই। আহা রে। নাগিন লাগাইছো মাম্মা? এই লাগাইলাম। কয়দিন ধইরা? পনেরো দিন। কারণ? হাত আর পায়ের আংটি ক্যান বানায়া দিলাম না, এর লাইগাই গাল ফুলায়া রাখছে। আমার বাড়তি বিলাসিতা করার লাইগা বাড়তি টাকা নাই, এইকথা তারে বুঝাইতেই পারলাম না। তাইলে ইবার ব্যাচেলর জীবনচর্চা করো। বাথরুমে যায়া গান গাও। ছাড় এইসব, তর একটা বন্ধু আছিলো না, লেখালেখি করতো? পিয়াল? হ। অর কি অবস্থা? অরও চলে না। ক্যান, অর না কানেকশন ভালো আছিলো? শোনো দোস্ত, মানুষ হইলো অকৃতজ্ঞ। সে অকৃতজ্ঞ হইবো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই। কৃতজ্ঞতাবোধে ভারি হইয়া কয়দিন ঘেউ ঘেউ করবো, পরে নেতায়া যাইবো। অরে কতজন কত আশা দিলো, ওয়াদা করলো, কেউই ওয়াদা রাখে নাই। অয় অনেক মানুষের লাইগ্যা কাজ করছে। আর অনেক মানুষ তারে বাঁশ দিছে। আইখ্খাওয়ালা বাঁশ। এইটা হইলো তার ফিডব্যাক। হ্যায় এখন ঘুইরা বেড়ায় এইখান থাইকা ওইখানে। কি আর বলবি, এই দেশে প্রতিভার দাম নাই। সাহিত্য-সংস্কৃতির যেইসব জাগায় প্রতিভাবানদের দরকার সেইসব জাগায় মেধাবীরা আখড়া গাড়ছে। না আছে তাগোর লেখালেখি, না আছে গবেষণা, না আছে সৃষ্টিশীলতা। গর্দভদের মিছিল। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলার দিকে তাকা। গত দশ বছরে কয়টা প্রতিভাবান নিয়োগ পাইছে? কইতে পারবি? যারা দেশের ভবিষ্যত সাহিত্য-সংস্কৃতিরে নেতৃত্ব দিবো? হিসাব করলে চাইর-পাঁচটাও পাইবি কী না সন্দেহ। এরাই আবার হইবো অধ্যাপক। ওই যে দোস্ত, অধ্যাপক আসে অধ্যাপক যায়, কেউই তাগারো মনে রাখে না। ব্যাপারটা তো অইখানেই দাঁড়াইছে। তারা মেধাবী খুঁজে। মেধায় ঢাইকা রাখে বিভাগ। শ্যাষে ঢাকনা খুইলা দেখে ফাঁকা কলসি। ঝনাত ঝনাত করতাছে। তরে একটা কবিতা শোনাই : নকলে ভরে গেছে চারপাশ, রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ভাল লাগে না! মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজ হয়, মার্কিন খোঁজে অথচ পায় না বিমান, হাস্যকর ঠেকে। মুসা ইব্রাহিম হয়ে যায় মিছা ইব্রাহিম! ঠকের জাল ছড়ানো চারদিকে, সত্য কোথায়? ঢ়ংপ, লংপ, ংংপ, যংপ তে প্রশ্ন ফাঁস হয়, তাহলে হবেটা কি? জাতি আজ মেধাশূন্য, শূন্যরা মিছিল করে রাজপথে, মোড়ে মোড়ে! কোথায় করবো আলোচনা? সমালোচনা? ওরা কি পড়ালেখা করে? ভাবে কিছু নিজের মতো করে? অন্যের মুখে ঝাল খাওয়া যাদের অভ্যাস কেবল মিথ্যা বুলি ছোড়ে, ঘৃণা জন্মে এই প্রজাতির জন্য। বলছিলাম নকলের আধিপত্যের গল্প, এর শেষ কোথায়? দিন যাবে, সময় গড়াবে, কেবল মিথ্যাচারে ভরবে দেশ, যেন ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ’ এবং তার মানুষেরা। তাদের এমন লজিক্যাল আলাপেই শেষ হয় নোট। পরের আলাপ হওয়ার কথা শাহবাগে। ঘ রিমি, দেখো, বিলের ওপর পাখি উড়ছে। সুন্দর লাগছে না? হুম। চিকলির ধারে বসলে সত্য সত্যই সমুদ্রের স্বাদ পাওয়া যায়। এইটা ভালো বলছো। রিমি, এরপর কি তারা শাহবাগ যায় নাই? হাসান কোন নোট লেখে নাই? তুমি নাম ধরে বলছো কেন? হাসান ভাইয়া বলো। সরি। গল্প আগাও। তারা গিয়েছিলেন, নোটও লিখেছেন : হাসান, কই আছোছ এখন? শাহবাগের ছবির হাটে, এইখানে আয়। আমি পাশেই আছি। ওয়েট কর, আসছি। রাহুল আইলি, চল সামনে আগাই, হাঁটি। তর লগে ম্যালা গপ্প আছে। ঠিক আছে। কইছ এক পাশ থাইক্কা। দ্যাখ, মাঠো সবাই গোল হইয়া বইসা হাতের তালুত গাঁজা ডলতাছে। মনে হইতাছে দেশের সব হতাশা আর না পাওয়া এগোর ওপরে পড়ছে। হ, তাই মনে হইতাছে। সবাই চাষী। ব্যাখ্যা কর? ক্যাম্পাসে পড়ার সময় যাগোর লগে কথা হইত, তারা কইতো ছাদে সবজি চাষ করতাছি। প্রথমে আমিও বুঝতাম না। পরে একদিন ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে তাগোর একজন। কয়, সবজি চাষ মানে গাঁজা খাওয়া। বুঝলাম। রাহুল, একটা কল আসছে, রিসিভ করি। কর, রিসিভ। কি রে হাসান, চুপ মারলি যে? বস, ফোন করছে। যাইতে কইতাছে। আজ না ছুটির দিন? তাও, কাজটা নাকি দরকারি। তুই বলে ম্যালা গপ্প করছ? দোস্ত, গপ্প আগাইতেই তো পারলাম না। প্লিজ, রাগ করিস না। আচ্ছা। তুই আগা। এইদিন রাইত দুইটার দিকে হাসান ভাইয়া একটা স্ট্যাটাস দিছে নোট না লিইখ্যা। কি লিখছিলো? লিখছে: প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সঙ্গে ঠিকই কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না। নিচে লেখা কবির নাম, শহীদ কাদরী। লাইন দুইটার অর্থ বুঝলাম না। মন খারাপ। ধুর, এইটা নিয়া মন খারাপের কী আছে। চলো আমরা ক্যাম্পাসে ফিরি। অন্ধকার হয়া আসছে। চিকলির বিলের নিরাপত্তা বাড়াইছে, তারপরও যদি কিছু ছিনতাই হয়া যায় তাইলে তো আমাদেরই লস। ওকে। চলো। ঙ রিমি, ঘুম থাইকা উঠ, দেখ ফেসবুকে কী ভাসছে। তর নাগর স্ট্যাটাস দিছে। কি লিখছে। পড় : সারাক্ষণ খালি হাসান মিশুক, হাসান মিশুক। ঘুমাইতেও সে, হাঁটতেও সে, ডেটিংয়েও সে। নিজেদের কোন কথা থাকতে নাই? পারে না থাকতে? হিসাবটা হয়া গেছে এমনই। অয় কি লিখলো অইটা নিয়াই দিনের পর দিন কাটাইতাছি আমরা। আজব প্রাণী। পারিও। কত ইচ্ছা কইরা ফোন দেই, জমানো কত কথা আছে বলবো। ফোন রিসিভ হইতেই মিশুইক্যার প্যানপ্যানানি। বিকেলে বাইর হইলে আবার ওই জঙ্গলটাই। অসহ্য। বালের প্রেম। আমার লগে থাকে আর কিচ্ছা গায় মিশুইক্কার। কাদরীর কবিতার মানে বোঝে না। বাচ্চা মাইয়া। তার মন রক্ষার লাইগা আমারেও তাল দিয়ুন লাগে হ্যার আলাপো। আজাইরা। রুমমেট, মোবাইলটা দে তো, শালা বেশি বাইড়া গেছে। একটু টাইট দেই। রিং হইতাছে। ধরতাছে না তো। আবার দে। ধরছে। ফোন দিছো ক্যা? ক্যান, ফোন দিতে পারবো না বুঝি? না। ফেসবুকে কি লিখছো? পড়ছই তো। ফ্যানাইতাছো ক্যান? তোমার কই লজ্জাডা বড় অইয়া গেছে। আলতু-ফালতু কথা ল্যাখো? বড় কই লজ্জা দেইখাই তো বড় কইরা লিখছি। ফোন রাখ, আর জীবনেও ফোন করবি না। তর ভাষাগত প্রবলেম আছে। কথা কওয়ার সময় বাংলা ডিকশনারি সঙ্গে রাখবি। বালের প্যাঁচাল বাদ দা ফোন রাখ। রুমমেট, অয় তো আবোল-তাবোল কথা কইলো। তাইলে মনে হয় ঠিকই করছে। তুইও তার দলে? হ, থাক, আমি গেলাম, ক্লাস আছে। তুই কানতে থাক আর মিশুইক্কার নোট পড়।
×