ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার নারী

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২০ এপ্রিল ২০১৮

কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার নারী

বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু নারীর সম্মানের প্রশ্নে, মর্যাদার প্রশ্নে, সমতার প্রশ্নে আজও অনেক পিছিয়ে। যার প্রতিফলন আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই পত্রিকার পাতায় বৈষম্য ও সহিংসতার খবরের মাধ্যমে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন আমাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজে রাষ্টীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নারীর কাজের বোঝা কমিয়ে আনা, অত্যন্ত জরুরীভাবে প্রয়োজন গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজ ভাগ করে নেয়া পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে। এর ফলে অনেক নারীর অধিকার সুরক্ষার পথ প্রশস্ত হবে। নারী তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায়ও বেছে নিতে পারবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ। শ্রম আইনে নারী ও পুরুষের সমান মজুরির কথা থাকলেও তা মানা হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। শুধু তাই নয়, হয়রানি, নির্যাতনসহ কর্মক্ষেত্রে নারীদের বঞ্চিত করা হয় বিভিন্ন ভাবে। নারীদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, কৃষি কাজে দৈনিক মুজরি হিসেবে একজন পুরুষ শ্রমিক পান ২৯৯ টাকা আর একজন নারী শ্রমিক পান ২২৬ টাকা। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলমেন্ট যৌথ গবেষণাপত্র অনুযায়ী শতকরা ৫৬ ভাগ পুরুষ শ্রমিক/ কর্মী যেখানে দিনে ২০০-৪০০ টাকা মজুরি পান, সেখানে শতকরা ৬১ ভাগ নারী পান। ১০০-২০০ টাকা। একই পরিস্থিতি বিভিন্ন ধরনের পর্যায়ে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীরাও বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইইডিএস) সম্প্রতি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় দেশে ৫৭ শতাংশ কর্মজীবী নারীর মাসিক বেতন, একই পদে ও সমান মর্যাদায় কর্মরত একজন পুরুষ কর্মীর বেতনের ৫২ শতাংশ। এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে গত দুই দশকে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে বৈষম্যমূলক এবং সহিংস আচরণের কারণে। এমন তত্ত্ব উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক শ্রম তহবিলের ‘বিশ্ব কর্মসংস্থান ও সামাজিক অগ্রগতি প্রতিবেদন-নারীদের অবস্থান ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। বেতন কাঠামো, প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে কর্মস্থলে বৈষম্যের শিকার হন নারীরা। সর্বক্ষেত্রেই নারীকে পুরুষের তুলনায় কম মজুরি দেয়া হয়। শ্রমশক্তি জরিপে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত দেড় বছরের তথ্য এসেছে। দেখা গেছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, বর্তমানে মোট কর্মরত মানুষের মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ১৮ লাখ, নারী ১ কোটি ৭৯ লাখ। এখন বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি বেকার নারীদের বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং পুরুষদের ৩ শতাংশ। তার মানে মোট হিসাবে পিছিয়েই থাকছে নারীরা। আর যেটুকু বা এগিয়েছে বলা হচ্ছে, সেখানে অদক্ষ ও তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কাজই পাচ্ছে নারীরা। বহু ক্ষেত্রে নারীদের কাজের সুযোগ দেয়া হচ্ছে নিচের দিকের পদগুলোতে। নারীদের এই সংখ্যা বৃদ্ধি তাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রাখছে সে প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে। আর নানা ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হলেও নারীদের এই কাজগুলোর সামাজিক স্বীকৃতি মিলছে কতটাÑ এটাও প্রশ্ন। কর্মক্ষেত্রে নারী নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধে আইন আছে কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। নিপীড়নের বিষয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পলিসি থাকতে হবে, নারী যাতে অভিযোগ করতে পারে এবং তাকে যেন সে শঙ্কা না করতে হয় যে অভিযোগ করলে চাকরি হারাতে হবে। মিডিয়াকে একটি জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে এসব হয়রানি বন্ধ করতে। মিডিয়া নারীদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে পারে ইলেক্ট্রনিক কিংবা প্রিন্ট অথবা ভিডিওর মাধ্যমে। যৌন নিপীড়ন এক ধরনের অপরাধ, এটা আসলে বৈষম্যেরই একটি রূপ। আর এ বৈষম্য বিরাজমান থাকায় আজ নারীরা পদে পদে হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন কর্মস্থলে। পুরুষ ও নারী সমান তালে কাজ করতে পারে এমন একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক কাঠামোর উন্নতির জন্য সর্বাগ্রে।
×