ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৪২৫ এর শুভযাত্রায় নারী হোক শঙ্কামুক্ত

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২০ এপ্রিল ২০১৮

১৪২৫ এর শুভযাত্রায় নারী হোক শঙ্কামুক্ত

১৪২৪ সালের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠল। চৈত্রের শেষে বৈশাখ নবরূপে হাজির হলো। হরেক রকম ঘটনা, দুর্ঘটনা আর অর্জন-বিসর্জনের মধ্যে পার করতে হয়েছে সারা বছর। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পৌঁছে গেল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে পরবর্তী ধাপে। এই অর্জনে সমতাভিত্তিক পথপরিক্রমায় দেশের অর্ধাংশ নারী জাতির সম্পৃক্ততাও ছিল উল্লেখযোগ্য। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি সিংহভাগের অংশীদারিত্ব ছাড়া কখনও সম্ভব হয় না। সুতরাং এগিয়ে যাওয়ার প্রতিটি সূচকে নারীর প্রত্যক্ষ সংযোগ যেমন দৃশ্যমান তেমনি অন্যায়-অবিচার আর নির্যাতনের শিকার হয়ে গণমাধ্যমে উঠে আসাটাও ছিল নিয়মিত ঘটনা স্রোত। এখনও জবর দখল দায়িত্ব থেকে নারীদের সম্পূর্ণ মুক্তি ঘটেনি। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে অসাম্য-বৈষম্যের শিকারে নারী-পুরুষের ফারাক থাকে না। কিন্তু অসহায় এবং দুর্বল অংশ হিসেবে দুর্বিপাকে পড়তে হয় নারীদেরই বেশি। শারীরিক অশালীনতা থেকে শুরু করে যাবতীয় অত্যাচারে দুর্বিষহ অবস্থার বলি হতে হয়েছে সব সময়ই নারীদের। গত বছরের আলোচিত ঘটনাপ্রবাহের মূল জায়গা দখলে করে আছে প্রাণ ভয়ে পালানো ভীতসন্ত্রস্ত মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের করুণ আখ্যান। যার প্রতিবাদে সারাবিশ্ব সোচ্চার হলেও সে দেশের সরকার কোন সুষ্ঠু পদক্ষেপ আজ অবধি নিতে পারেনি বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে। যে কোন বিপরীত ও সংঘাতময় পরিস্থিতির ঝুট ঝামেলার সিংহভাগ পোহাতে হয় নারী ও শিশুদের। অভিবাসী রোহিঙ্গাদের বেলায়ও তাই হয়েছে। প্রায়ই দশ লাখের মতো রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আশ্রয়-প্রদান, খাদ্য সংস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার সাধ্যমতো নিজের দায় পালন করে যাচ্ছে। মিয়ানমার দুনিয়াজোড়া নিন্দিত হলেও বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। শুধু এই পর্বত প্রমাণ অভিবাসী সঙ্কটকে অত্যন্ত মানবিক উপায়ে সামলানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতার জননী হিসেবে অলঙ্কৃত করা হয়েছে। এসব শরণার্থী শিবিরে নারী ও শিশুদের দুর্বিষহ জীবন বিভিন্নভাবে জনসম্মুখে উঠে এসেছে। গর্ভবতী মায়েদের যন্ত্রণা করুণ আর্তিতে আশ্রয় শিবিরগুলোর যে বেহাল অবস্থা তা বর্ণনায়ও আসে না। সদ্যজাত শিশুদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যে সীমাহীন দুর্ভোগ তার দুঃসহ চিত্র বিভিন্ন সময় প্রকাশ হয়ে পড়ে। আর নারীদের প্রতি মাসের ঋতুস্রাবের যে নিয়মিত পর্যায় সেখানেও বিপাকে পড়ছে হাজার হাজার মেয়ে। স্যানিটেশনের শুধু অব্যবস্থাই নয় প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবেও মেয়েদের কাহিল হয়ে যাওয়ার যোগাড়। যার শেষ কোথায় আজও তা কেউ জানে না। এত সংখ্যক অভিবাসীকে স্থায়ী আবাসসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া সময়ের ব্যাপার। কোনমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতেই তো সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সারাবিশ্ব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও এত ব্যাপক সমস্যার সমাধান অত তাড়াতাড়ি আসলেই কঠিন। নতুন বছরকে বরণ করতে বাংলার চিরায়ত প্রকৃতি যেমন ব্যাকুল পাশাপাশি তার কোলে লালিত সন্তানরাও সাজ সাজ রবে বরণ ডালা সাজিয়ে ১ বৈশাখকে আবাহন করতে সমস্ত কর্মযজ্ঞ শুরু করে। নতুন বছরে পুরনো সব আবর্জনা ঝেড়ে ফেলারও এক কঠোর প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় বর্ষবরণের এই উৎসবমুখর পরিবেশে। শুধু গানে, নাচে কিংবা বাদ্যেই নয় প্রতিজ্ঞায়, অঙ্গীকারে সাবলীলভাবে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয় ফেলে আসা অভিশাপকে আরও পশ্চাদগামী করা। সবটাই কি করা যায়? রোহিঙ্গা সমস্যাও যে কবে সুনিশ্চিত স্থিতি পাবে তা কেবল সময়ের দাবি। গত বছরের আরও এক লোমহর্ষক দুর্ঘটনা রূপা ধর্ষণ এবং হত্যাযজ্ঞ। অতিদ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের বিচারের রায়ের সর্বশেষ শাস্তি নির্ধারণ করা হয়। এ ধরনের অমানবিক, পাশবিক ঘটনা নতুন বছরকে যেন আঘাত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন আর সতর্ক থাকতে হবে। গেল বছরে বাল্যবিয়ে ঠেকানোর অনেক ইতিবাচক ঘটনা গণমানুষের সামনে চলে আসে। নতুন বছরে অপরিণত বিয়ের ব্যাপার যেন আরও কমতে থাকে সে বিষয়েও সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরী। নারীদের সাফল্য গাথা ঘটনা প্রবাহও ১৪২৪ সালকে মহিমান্বিত করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি কিংবা শিল্পোদ্যোক্তাতার বিস্তৃত আঙিনায় নারীর জোরালো অংশগ্রহণ সামগ্রিক দেশের অগ্রগতির নিয়ামক শক্তি। পাওয়া না পাওয়ার অভিঘাতে ফেলে আসা বছরের সম্ভাবনা ও গ্লানির সমন্বয়ে এগিয়ে চলার পথপরিক্রমা আগামীতে আরও নির্বিঘœ আর নিষ্কন্টক হোক।
×