ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে না পেরে পুলিশের তাণ্ডব

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ এপ্রিল ২০১৮

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে না পেরে পুলিশের তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে সাব্বির হোসেন ছক্কু (৩২) নামে এক ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ওইসময় স্থানীয় লোকজন সমবেত হয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। বুধবার বিকেলে যশোর শহরের সিটি কলেজপাড়া ব্যাটারিপট্টি এলাকায় এই ঘটে। এই ঘটনায় বুধবার গভীর রাতে একদল সাদা পোশাকের পুলিশ ছক্কুর বাড়ি ভাংচুর করেছে বলে তার পরিবার জানিয়েছেন। পুলিশ বাড়ির কোন মালামাল রাখেনি, সব তছনছ করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। পুলিশের দাবি- ছক্কু একজন চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। একজন শ্রমিক নেতার নেতৃত্বে কতিপয় লোক পুলিশকে মারধর করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানায়, সাব্বির হোসেন যশোর সিটি কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করার পর ভাইয়ের সঙ্গে মোটরপার্টসের ব্যবসা করেন। তিনি ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে মোটরপার্টস আমদানি করেন এবং ব্যবসায়িক কারণে বেশিরভাগ সময় তিনি ভারতেই থাকেন। ঘটনার শিকার সাব্বির হোসেন জানান, বুধবার বিকেল চারটার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যাটারিপট্টি এলাকায় আসি। এরপর মোবাইলে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছিলাম। তখন সাদা পোশাকের দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসে পায়ের কাছে একটি সাদা কাগজে মোড়া কিছু ফেলে বলেন, তোর কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে, থানায় চল। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি স্থানীয় লোকজন দেখে আমাদের কাছে আসে। তারা সাদা পোশাকধারীদের বলেন, আপনিই তো ওই কাগজে মোড়ানো জিনিস ফেললেন। এই নিয়ে তাদের সঙ্গে সাদা পোশাকধারীদের কথা কাটাকাটি এবং একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। এই ফাঁকে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি। যশোর কোতোয়ালি থানার এএসআই শফিকুজ্জামান বলেন, ‘শহরের সিটি কলেজপাড়ার ইকবাল মিয়ার ছেলে সাব্বির হোসেন একজন চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। বিকেলে সে ব্যাটারিপট্টি থেকে ইয়াবা কিনে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় আমি ইয়াবাসহ তাকে আটক করি। তখন সাব্বির হোসেন চিৎকার দিলে মোটর ওয়ার্কার্স এ্যাসোসিয়েশনের নেতা নশুরের নেতৃত্বে শাকিল, বুলবুল, খলিলসহ ২০-২৫ এসে আমাকে মারধর করে ছক্কুকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’তবে এএসআইয়ের দাবি অস্বীকার করে সাব্বিরের বড় ভাই শাকিল হোসেন বলেন, ব্যাটারিপট্টিতে জটলা দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখি আমার ভাইকে সাদা পোশাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওইসময় স্থানীয় মুরব্বিরা পুলিশকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন- সাব্বির হোসেন ছক্কু একজন ব্যবসায়ী এবং ভারতে বেশিরভাগ সময় থাকে। যশোর টায়ার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ওইদিন বিকেলে দেখি পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ১০-১২ জন দৌড়ে পালাচ্ছে। এই ঘটনার পর বুধবার গভীর রাতে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ গিয়ে সাব্বির হোসেন ছক্কুর বাড়ি ভাংচুর করে। সাব্বির হোসেন ছক্কুর মা জ্যোৎ¯œা বেগম জানান, বুধবার গভীর রাতে একদল সাদা পোশাকের পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে পুলিশ পরিচয়ে দরজা খুলতে বলে। আমি দরজা খুললে তারা আমার পরিবারের সব সদস্যকে একটি ঘরে আটকিয়ে রাখে। এরপর তারা তা-ব চালায়। ঘরে থাকা, টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, আলমারিসহ সব আসবাবপত্র ভেঙ্গে গুঁড়োগুঁড়ো করে দিয়েছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি (অপারেশন) শামছুদ্দোহা বলেন, ‘মাদকসহ আটক আসামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে লোকজন। এ সময় ধস্তাধস্তিতে এএসআই শফিকুজ্জামান সামান্য আহত হন। তবে সাব্বির হোসেেনর বাড়িতে পুলিশ ভাংচুর করেনি। পুলিশের কাজ হলো সম্পদ রক্ষা করা, নষ্ট করা না। কারা তার বাড়িতে হামলা চালাল পুলিশ খতিয়ে দেখবে।
×