ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণঅভ্যুত্থানে গণতন্ত্র ও খালেদাকে মুক্ত করা হবে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২০ এপ্রিল ২০১৮

গণঅভ্যুত্থানে গণতন্ত্র ও খালেদাকে মুক্ত করা হবে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে কারাবন্দী খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্র মুক্ত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ‘এ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ এক মহাসঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। কারণ, সাজা দেয়ার উদ্দেশেই খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা এবং বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে। একের পর এক নীল নক্সা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের দিকে সরকার সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন। কারণ কারাগারে তিনি অসুস্থ। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন নয় মিথ্য ও প্রতারণার রোল মডেল। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করে। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের মতো বিচ্ছিন্ন বা একটি শ্রেণীর আন্দোলনের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসবে না। সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন প্রয়োজন। তিনি বলেন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকলেই তো সেই সরকার জনগণের কথা চিন্তা করবে। তাই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চাই। আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। সেই নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। তা না হলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তিনি রাগ করে বলেছেন। তিনি এটা করতে পারেন না। তার সেই এখতিয়ার নেই। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাটা সংবিধানের বাইরে। ছাত্ররা চেয়েছিল কোটা পদ্ধতি সংস্কার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেটা না করে কোটা পদ্ধতি উঠিয়ে দিয়েছেন! কারণ, তিনি জানেন যে, এটা কোর্টে উঠলে আটকে দেয়া হবে। যার ফলে এখন পর্যন্ত গেজেট হয়নি। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির দাবি নিয়ে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে। কারণ, সরকারের বিভিন্ন রোল মডেলই হচ্ছে মিথ্যাচার। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি পথ, সেটা হচ্ছে জনগণ। জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জনগণের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইস্যুতে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ফখরুল বলেন, দেশের সব অর্থিক খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো লুট হয়ে গেছে। অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। এসব আমার কথা নয়, সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে। আর সরকার বলছে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আসলে এগুলো জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীও পালন করতে দেয়া হয় না। আমরা যেখানেই কর্মসূচী পালন করতে চাই সেখানে বাধা দেয়া হয়। কারণ কি জানতে চাইলে বলে সেখানে নাকি নাশকতা হবে। সরকার ও প্রশাসনের কথায় মনে হয় তারা সবাই জ্যোতিষ। ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। এমনকি মানুষের শেষ আশ্রয় বিচারালয়ও তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আমাদের এখন বলতে বাধা নেই নি¤œ আদালতের বিচারকরা অপেক্ষায় থাকে কখন উপরের মহল থেকে নির্দেশ আসবে তখন রায় ঘোষণা করবে। উচ্চ আদলতের ওপর একটা আস্থা ছিল, কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলায় জামিনের বিষয়ে তারাও সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে জামিন স্থগিত করল। এটি সম্পূর্ণ নজির বিহীন। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সব বিরোধী দল একমত হয় আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তখন খালেদা জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে কোন বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাহলে আজ কেন আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না? আমাদের সবাইকে আবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক, নাগরিক ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি তার জন্য ভোটার বিহীন সরকার দায়ী। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ। খালেদা জিয়ার মুক্তিই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য- খসরু ॥ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি কোন ধরনের নির্বাচনের আলোচনায় যাবে না জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তিই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মুক্তি পরিষদ’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খসরু বলেন, শুধু আইনের প্রতি সম্মান দেখাতেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেখানে আইনের শাসন নেই, সেখানে আইনী লড়াইয়ে খালেদা জিয়াকে কিভাবে মুক্ত করা হবে, তা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকারের কথায় লন্ডন থেকে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। দেশে যেদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে, তারেক রহমান সেদিন বীরদর্পে দেশে ফিরে আসবেন। খসরু বলেন, আওয়ামী লীগের আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার নীল নক্সার নির্বাচন জনগণ আর মেনে নেবে না। জনগণের বাঁধভাঙ্গা জলোচ্ছ্বাস পর্যায়ক্রমে বাড়তেই থাকবে। তিনি বলেন, যেখানে গণতন্ত্রের মাতাকে জেলে রাখা হয়েছে, সেখানে নির্বাচন নিয়ে কোন কথা থাকতে পারে না। প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ প্রমুখ। প্রতিহিংসার কারণে তারেককে দেশে আনার পাঁয়তারা করছে সরকার- রিজভী ॥ প্রতিহিংসার কারণে সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গণতন্ত্রের আঁতুরঘর লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্রহীনতা বনাম জবাবদিহিতা’ শীর্ষক তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মুক্ত আলোচনাকালে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর সহ্য করতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে এত দমন-পীড়ন করছি, নেতাকর্মীদের এত নির্যাতন করছি, তারপরও বিএনপি এত ঐক্যবদ্ধ কিভাবে। তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করছে। তিনি চাইছেন ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা হোক। কিন্তু সরকার সেটা দেবে না। মুক্ত আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ‘ফিউচার অব বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক মোঃ উজ্জল, সদস্য সচিব সাজ্জাতুল হানিফ, সংগঠনের নেতা শাহাদাত হোসেন মিশু প্রমুখ।
×