ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গী সালেহীন ও বোমা মিজান এখনও লাপাত্তা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ এপ্রিল ২০১৮

জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গী সালেহীন ও বোমা মিজান এখনও লাপাত্তা

শংকর কুমার দে ॥ দীর্ঘ চার বছরেও ধরা পড়েনি প্রিজনভ্যান থেকে পুলিশ হত্যা করে ছিনিয়ে নেয়া মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত জেএমবির দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গী সালাউদ্দিন সালেহীন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান। এমনকি তারা দেশে আছে নাকি দেশের বাইরে তারও হদিস জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সঙ্গে জঙ্গী ছিনতাইয়ের নায়ক জেএমবির আরেক দুর্ধর্ষ জঙ্গী ফারুকেরও হদিস নেই। আত্মগোপনে চলে যাওয়া এই জঙ্গীরা আবার গোপনে সংগঠিত হয়ে কারাগারের আনা নেয়ার সময়ে জঙ্গী ছিনতাইসহ বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, জেএমবির এ জঙ্গীরা আত্মগোপনে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে তা বিশ্বাস করা যায় না। তাদের খুঁজে বের করতেই হবে। ২০১৪ সালের ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি আদালতে হাজিরা দিতে নেয়ার সময়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিন জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়ার পর একজন ঘটনার দিনই ধরা পড়ে। পরে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় একজন। কিন্তু ছিনিয়ে নেয়া অপর দুই জঙ্গী গত চার বছরেও ধরা না পড়ার ঘটনায় নাশকতাসহ জঙ্গীদের সংগঠিত করার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে ২০১৪ সালে জঙ্গী ছিনতাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আটক ছিনতাইকারী জঙ্গী দলের অন্যতম নায়ক জাকারিয়া, তার স্ত্রী স্বপ্না, শ্যালক ইউনুস, শ্বশুর নয়ন, জেএমবির সদস্য রায়হান ওরফে রাসেলসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির জঙ্গী তৎপরতা, অর্থ যোগানদাতা, প্রিজনভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছে, তাতে কোন কাজ হয়নি। ছিনিয়ে নেয়ার পর পলাতক দুই জঙ্গীর হদিস মেলেনি। ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গীদের অন্যতম বোমা মিজান আগেও ভারতে গিয়েছিল। পলাতক বোমা মিজান গ্রেফতার হয়েছিল ২০০৯ সালে। পীরেরবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর তার দেয়া জবানবন্দী থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পর দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যায় সে। ভারত সীমান্তে তাকে রিসিভ করে ভারতে অবস্থানরত তার সহযোগীরা। পরে তার স্ত্রীও ভারতে চলে যায়। আশ্রয় নেয় ভারতের মুর্শিদাবাদে। সে সময় তারা ভারতের মুজাহিদীনদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। ২০০৮ সালে বোমা মিজান দেশে ফিরে আসে। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানের ডাকে দেশে এসে ধরা পড়ে ২০০৯ সালে। সূত্রে জানা গেছে, প্রিজনভ্যানের ছিনতাইয়ের নায়ক ফারুক হোসেনও কয়েক বছর কারাগারে ছিল। কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসার সময় জেএমবির দুর্ধর্ষ নেতা সূরা সদস্য রাকিব হাসান ওরফে হাফিজ মাহমুদকে কথা দেয় যেকোন মূল্যে তাদের কারামুক্ত করবে। এরপর থেকে আত্মগোপনে থেকে ফারুক দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করতে থাকে। একদিকে কারা অভ্যন্তরে থাকা জেএমবির তিন শীর্ষ নেতাকে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা অপরদিকে গোপনে জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করে এই ফারুক। কারাগারের অভ্যন্তরেই করা হয় ষড়যন্ত্র। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহের আদালতে নেয়ার পথে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশÑ জেএমবির এই দুর্ধর্ষ তিন জঙ্গী কারাগারে বসেই নিজেদের মুক্ত করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ময়মনসিংহের আদালতে নেয়ার দিন অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এজন্য আগে থেকেই রেকি করা হয় গাজীপুর ময়মনসিংহ সড়ক। পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগ্রহ করা হয় অস্ত্র। কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর কারহাট থেকে কেনা হয় দুটি মাইক্রোবাস। সব মিলিয়ে এ অভিযানের বাজেট ধরে রাখা হয়েছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ফারুক জেএমবি পুনর্গঠনের কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা বলেন, প্রিজনভ্যান থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গী ও জঙ্গী ছিনতাইয়ের নায়ক ফারুককে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। অবশ্য ফারুক বর্ধমানের খাগড়াগড় কা- মামলায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেলেও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই। প্রসঙ্গত: ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবির ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত ৩ সদস্য সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, রাকিব হাসান ও বোমা মিজানকে প্রিজনভ্যানে করে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে আনার পথে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় ছিনিয়ে নেয় জেএমবির সশস্ত্র জঙ্গীরা। প্রিজনভ্যান থেকে জঙ্গীদের ছিনিয়ে নেয়ার সময়ে এক পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে তারা। জঙ্গী ছিনতাই ঘটনার দিনই রাকিব হাসান ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। তারপর থেকে আত্মগোপনে চলে যাওয়া অপর দুই জঙ্গী সালাউদ্দিন সালেহীন ও বোমা মিজান এখন লাপাত্তা।
×