ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২০ এপ্রিল ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ব্যাপক প্রস্তুতি শেষে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ। গত শনিবার ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিল বাঙালী। সারাদেশের মতো বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকাও উৎসবে মেতেছিল। সেই হাসিরাশি আনন্দের রেশ এখনও মনে রয়ে গেছে। প্রতিবারের মতো এবারও পহেলা বৈশাখ সকালে ঘর ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন সকল ধর্ম বর্ণ শ্রেণী পেশার মানুষ। প্রথম গন্তব্য ছিল রমনা বটমূল। ওখানে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা। মঞ্চ থেকে গান কবিতা কথনে বাঙালিত্বের মহিমা তুলে ধরা হয়। বিশ্বায়নের যে বাস্তবতা তা মেনে নিয়েই করা হয় শেকড়ের সন্ধান। ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় মঙ্গল ভোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্ণাঢ্য আয়োজনে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। সূর্য, পাখি, হাতি, মাছ, মহিষসহ পুতুলের বিভিন্ন ফর্ম শোভাযাত্রায় উপস্থাপন করা হয়। এবারের শোভাযাত্রার মূল স্লোগান ছিলÑ মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। হ্যাঁ, মহাত্মা লালনের এ আকাক্সক্ষাকে ধারণ করেছিল চারুকলার আয়োজনটি। প্রায় একই সময় শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। এখানেও বহু মানুষের সমাবেশ ঘটে। একই দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা। এটিও বেশ বড় আয়োজন। মিরপুর ও আশপাশের এলাকার মানুষ এখানে আনন্দঘন সময় কাটান। বিকেলে রবীন্দ্রসরোবরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। আরও অজ¯্র অনুষ্ঠান ছিল। এসব উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানান রাজধানীবাসী। এদিকে বৈশাখের পাশাপাশি চলছে কালবৈশাখী। নতুন বছরের প্রথম দিন বিকেল বেলাটির কথা মনে থাকবে অনেকের। সকালে রোদ। দুপুরে ভয়াবহ গরম। এ অবস্থায় যারা বিকেলে বাসা থেকে বের হবেন ভেবেছিলেন তারা আর বের হতে পারেননি। ততক্ষণে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে শিলাবৃষ্টি। এখনও রাজধানীতে ঝড় বৃষ্টি থামেনি। প্রায় প্রতিদিনই কম বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। অবশ্য আবহাওয়া অধিদফতর প্রকৃতির এই পরিবর্তনকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখী ঝড় হবে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তারা জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এই লঘুচাপের প্রভাবেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। শহর ঢাকার মানুষ এখনও মোটামুটি উপভোগ করছে ঝড় বৃষ্টি। ছোট ছোট ছেলে মেয়রা মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজছে। আর যে ভালটি না বললেই নয় সেটি হচ্ছে, শহরের নোংরা রাস্তা ঘাট বৃষ্টির জলে ধুয়ে সাফ হয়ে গেছে। চকচক করছে গাছের পাতা। সবুজ রংটা সামনে এসেছে। দেখে চোখে এক ধরনের আরাম হয়। আবহাওয়াটাও শীতল। খুব একটা গরম অনুভূত হচ্ছে না। ঘন ঘন ঝড় বাদল হলেও তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ে ওঠা গাছ হেলে পড়েছে। বিশেষ করে রাস্তার ধারে অল্প মাটিতে কোনরকমে বেঁচে থাকা গাছ শেকড়সহ উপড়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ধানম-ি লেকপাড়ে একাধিক গাছ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বৃক্ষের এমন হঠাৎ পতনে বিপদের আশঙ্কা থাকে। এই তো কিছুদিন আগে বিশাল এক বৃক্ষের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্র পরিচালক খালিদ মাহমুদ মিঠু। চলন্ত রিক্সার ওপর গাছটি আছড়ে পড়েছিল। ভাবা যায়! এমন নির্মম উদাহরণ আছে যেহেতু, ঢাকার গাছগুলোর খোঁজ খবর নেয়া উচিত। কোন গাছকে বিপজ্জনক মনে হলে এমনিক কেটে সরিয়ে ফেলা জরুরী। পথিকেরও উচিত খুব সতর্ক হয়ে পথচলা।
×