ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ৩ মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২০ এপ্রিল ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ৩ মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আানিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উত্থাপিত দাবিগুলো যৌক্তিক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য ২২ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে তিন মন্ত্রী বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। আইনমন্ত্রী ছাড়াও বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক উপস্থিত ছিলেন। সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ছয়টি ধারা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সম্পাদক পরিষদ নেতৃবৃন্দ। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের বলেন, সম্পাদক পরিষদের অনুরোধে এই সভা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে বলতে চাই, উনাদের (তিন মন্ত্রী) যে স্পিরিট আমরা দেখলাম, উনাদের যে সহযোগিতার স্পিরিট এবং আমাদের কনসার্নগুলো উনারা যেভাবে গ্রহণ করলেন এবং যে প্রস্তাব উনারা দিয়েছেন স্থায়ী কমিটিতে যে আলোচনা হবে সেখানে উনারাই প্রস্তাব করবেন সম্পাদক পরিষদকে যেন ডাকা হয় এবং সেখানে যেসব কনসার্ন আছে আমরা তা তুলে ধরব। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বোগের কথা জানিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এগুলো বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এবং এটা আমাদের যে স্বাধীন সাংবাদিকতা, যেটা নিয়ে বাংলাদেশে আমরা খুবই গর্ববোধ করি, সেটা খুব গভীরভাবে ব্যাহত হবে এবং এ কথাগুলো উনাদের বলেছি, উনারা খুবই সানন্দে গ্রহণ করেছেন। যে আইনটি হবে, তা সত্যিকার অর্থেই সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে ব্যবহার করা হবে, তাতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব হবে না। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৯, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আগামী ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, সেখানে তাদের দাবিগুলোও তুলে ধরবেন তারা। সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট করা হচ্ছে জানিয়ে আনিসুল বলেন, ‘এটা ফ্রিডম অব প্রেস বা ফ্রিডম অফ স্পিচ বন্ধ করার জন্য না। সেক্ষেত্রে এই আইনের মধ্যে যদি কোন ত্রুটি থেকে থাকে, তাহলে পরে সেগুলো যেন অপসারণ করা যায়, সেভাবে যেন আইনটা সংধোশন করা হয় সেই আলোকে এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সেই আলোচনা হবে এবং এই আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা দু’পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি, তাদের যে কনসার্ন, আমরা দূর করতে পারব।’ দেশের টিভি সম্পাদকদের আলাদা সংগঠন রয়েছে। তাছাড়া বিপুলসংখ্যক ইন্টারনেট সংবাদপত্র রয়েছে, এসব সংগঠনে যাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। টিভি চ্যানেলের সম্পাদকদেরও স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে ডাকা হবে কি না- সেই প্রশ্ন আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির কাছে প্রস্তাব উপস্থাপন করব, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন ডাকবেন, কি ডাকবেন না। এমন একটা আইন করতে চাই যেটা গ্রহণযোগ্য না যুগোপযোগী হবে। গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। বহুল আলোচিত এই আইনের খসড়া আইনসভার অনুমোদনের জন্য গত ৯ এপ্রিল সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইন থেকে সরিয়ে সেগুলো আরও বিশদ আকারে যুক্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। এ আইন পাস হলে হ্যাকিং; ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’; রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বা ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং ডিজিটাল উপায়ে গুপ্তচরবৃত্তির মতো অপরাধে ১৪ বছরের কারাদা-ের পাশাপাশি কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ- দেয়া যাবে। আর ইন্টারনেটে কোন প্রচার বা প্রকাশের মাধ্যমে ‘ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত’ করার শাস্তি হবে ১০ বছরের জেল, ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। খসড়া আইনটির মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর থেকে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে। সাংবাদিকরাও প্রস্তাবিত আইনটির ৩২ ধারায় সমালোচনা করছেন। এই আইনের ফলে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন তাদের অনেকে। বৈঠকে ১২ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, যুগান্তর সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল আলম, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান ও বনিক বার্তার বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এছাড়া ছিলেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক।
×