ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রুটব্যাগিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২০ এপ্রিল ২০১৮

ফ্রুটব্যাগিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আমের রাজ্যখ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে আমের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানি বাড়ানোর আভাস দেখা দিয়েছে। বাগানের পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন আভাস দিচ্ছে কৃষি দফতর। তবে এবারো শঙ্কা দেখা দিয়েছে রফতানিযোগ্য আম নিয়ে। রাজশাহী অঞ্চলের গাছে গাছে এখন ঝুলতে শুরু করেছে আম। ক্রমেই তা বড় হচ্ছে। আগামী মাসের শেষের দিকে গুটি জাতের আম বাজারে মিলবে বলেও আভাস মিলেছে। এখনো রাজশাহীতে গুটি জাতের আম নামানোর দিনক্ষণ নির্ধারণ না হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাজারে আসবে ২০ মের মধ্যে। ইতিমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসন ‘আম ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী, আগামী ২০ মে থেকে বাজারে আসবে সব ধরনের গুটি আম। এরপর ২৫ মে গোপালভোগ, হিমসাগর ও ক্ষিরসাপাতা ২৮ মে, লক্ষনভোগ ১ জুন, ল্যাংড়া ও বোম্বায় ৫ জুন, আ¤্রপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ১ জুলাই বাজারে নামবে। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগ আম রফতানি বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকদের মধ্যে ব্যাগিং পদ্ধতিতে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের আগ্রহ বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বিভাগটি। এছাড়া কৃষকের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রেও বিভাগটি ভূমিকা রাখছে। ফলে এবার আম রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, গতবারের লোকসান কাটাতে এবার আরও ব্যাপকভাবে ফ্রুটব্যাগে আম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা। স্থানীয় বাজারে চড়া দাম পাওয়ায় এমন আগ্রহ তাদের। কয়েকবছর ধরেই ফ্রুটব্যাগে আম উৎপাদন করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকার আম চাষি তসলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে তিনি ফ্রুটব্যাগে আশ্বিনা আম উৎপাদন করেছিলেন। ফলনও হয়েছিল ভাল। বারবার কীটনাশক প্রয়োগের ঝামেলা না থাকায় উৎপদন খরচ ছিল অনেক কম। সর্বশেষ প্রতিমণ আম তিনি বিক্রি করেছেন ২৪ হাজার টাকায়। এবার তার দেখাদেখি অন্যান্য চাষিরাও ফ্রুটব্যাগে আম উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাদের অধিকাংশই গত বছর রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করে লোকসানে পড়েছেন। লোকসান কাটাতে এবারো ফ্রুটব্যাগেই ভরসা রাখছেন চাষিরা। রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক জানান, এবার আম রফতানি নিয়ে গতবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না তিনি। আনোয়ারুল হক বলেন, গত বছর উদ্ভিদ সংগনিরোধ দফতরের খামখেয়ালিতে রাজশাহীর রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তারা চান উৎপাদিত রফতানিযোগ্য আমের শতভাগ রফতানি। এজন্য আইনী বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তি চাইছেন তারা। আম রফতানিকারকরা যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সেজন্য উৎস থেকেই আম রফতানির সুযোগ চাইছেন তারা। তিনি বলেন, স্থানীয় কৃষি দফতরের এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও নজরদারির কথা। কিন্তু এ নিয়ে এখনও তাদের কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন আনোয়ারুল হক। তবে বিষয়টি নজরে রাখছেন জানিয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত শুধু রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার ২২ জন চাষি আম রফতানি করতে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। আম রফতানি করতে চাইলে কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চাষিদের পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা। এদিকে, এ অঞ্চলের আমচাষিরা জানান, এখনও আবহাওয়া অনুকূলেই রয়েছে। বাগানে বাগানে গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আমের গুটি। গুটি ঝরেপড়া রোধে আগেভাগেই বাগান পরিচর্যায় নেমেছেন চাষিরা। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, এখন বাণিজ্যিক আম চাষ হচ্ছে। চাষিরা বছরজুড়েই বাগান পরিচর্যা করছেন। ফলে এখন আর অফইয়ার-অনইয়ার নেই। এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলের আবহাওয়া আমের অনুকূলেই রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে বাম্পার ফলন হবে আমের। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে বিষমুক্ত আম উৎপাদনে কাজ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সাধারণত ৪০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে আমের গুটি ঝরে যায়। এরপরই ফ্রুটব্যাগিং করতে হয় আম। সেই হিসেবে ২০ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে রাজশাহীর বাগান মালিকদের ফ্রুটব্যাগিং করতে হবে। দেরিতে মুকুল আসায় এপ্রিলের শেষ সপ্তায় ফ্রুটব্যাগিং করতে পারবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরেই দেশে আমের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার টন। পরের অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৫ টনে। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট সাড়ে ১২ লাখ টন আম উৎপাদন হয় বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর তা ১৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে রাজশাহীতেই তিন লাখ টনের উপর আমের উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৩ লাখ ২৪ হাজার কেজি আম সরবরাহ করে বাংলাদেশ। কিন্তু রাজশাহীর রফতানিযোগ্য ১৫ হাজার টনের মধ্যে রফতানি হয় মাত্র ২৩ টন। তবে চলতি অর্থবছরে এ চিত্র থাকবে না বলে আশাবাদী কৃষি দফতর। সব মিলিয়ে এবার দেশে ১৩ লাখ কেজি আম যেতে পারে বিশ্ববাজারে।
×