ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লিয়াকত হোসেন খোকন

চাই সম্প্রীতি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

চাই সম্প্রীতি

বাবা-মা, ছেলেমেয়ে আর দাদা-দাদি নিয়ে একসময় সুখের সংসার ছিল সকল পরিবারেই। সেদিন আজ ফুরিয়ে গেছে। ছেলে যদি লেখাপড়া শেষে অঢেল সম্পত্তির মালিকও হয়, তবুও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ওই সংসারে বা পরিবারে ঠাঁই হয় না। পরিবারে যিনি আয় রোজগার করেন তিনি ছেলেপুলেকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান। বৃদ্ধ বাবা-মাকে আলাদাই থাকতে হয়। কোন কোন সংসারে বা পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা একত্রে থাকলেও তাঁদের মূল্যায়ন করে না নিজের সন্তান ও বৌমা। তবে নাতিরা চুপেচাপে এসে কখনও কখনও দিদিমা আর দাদুর হাতে এ খাবার, সে খাবার তুলে দেয়। বৌমা তা দেখলে তো খবর হয়ে যায় অর্থাৎ তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। এই তো এখনকার পরিবারের চিত্র। পরিবার থেকে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। কখনওবা বৃদ্ধ বাবা কিংবা মা মনের ব্যথা মনে রেখেই ভাবে পান্নালাল ভট্টাচার্যের গাওয়া -‘মা, আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল/সকলি ফুরায়ে যায় মা। / জনমের শোধ, ডাকি গো মা তোরে / কোলে তুলে নিতে আয় মা /... এই পৃথিবীর কেউ ভালো তো বাসে না / এ পৃথিবী ভালোবাসিতে জানে না/যেথা আছে শুধু ভালোবাসাবাসি/সেথা যেতে প্রাণ চায় মা /... অনেক কেঁদেছি আর কাঁদিতে পারি না....’ গানের এ কথাগুলি। এদিকে সন্তান যদি অমানুষ হয় কিংবা আয় রোজগার করতে না পারে, সেই পরিবারে দেখা দেয় চরম অশান্তি। পরিবারের বাবা- মা, এদের সন্তান এক সময় একে অপরের দূরত্বে চলে যায়। পরিবারে শুধুই অশান্তি বিরাজ করে। বাবা-মা, সন্তান এরা যেন এক পরিবারে থেকেও কোনও বাধ্যবাধকতাই বোধ করেন না একে অপরের ওপর। আগে কেউ অসুস্থ হলে নিকটজন পাশেই থাকতেন। আজ সে সময়টুকু যেন কারও নেই। অক্ষম বাবা রোগে বিছানায় পড়ে থাকলে পরিবারের কেউ কেউ বলে ওঠে, ‘বুইড়া মরে না ক্যান’। আগের দিনে কেউ অসুস্থ হলে প্রতিবেশীরা ছুটে যেতেন। এখন আর সে দিন নেই। শুধু কি তাই, একই পরিবারের লোক একজন আরেকজনকে সময় দেয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। এখন আমাদের সবকিছুই প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে উঠেছে। পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন নিজ নিজ রুমে বসে এসএমএস, ফেসবুক, টিভিতে স্টার জলসা নিয়ে যে যার মতো থাকে। পরিবারের সদস্যরা একই ঘরের মধ্যে বসবাস করেও কেউ কারও সঙ্গে হেসে কথা বলার সময়ও পায় না। এখন দেখছি, এক পরিবারে স্বামী, স্ত্রী, সন্তানরা এদের সবার হাতে দুই কি তিনটি করে মোবাইল। তারা যে যার বৃত্তে ‘চ্যাটিং’ করে চলেছে। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা নেই। এ ব্যাপারটাকে বলা হয় ‘এ্যালোন টুগেদার’। যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে প্রায় প্রতিটি পরিবারের মধ্যে। পরিবারের অভ্যন্তরে মানবিক সম্পর্কগুলো এভাবেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। এদিকে পরিবারের সবার মধ্যে জন্ম নিয়েছে ‘কোনও কিছুতে আসে যায় না’ মানসিকতা। সেই জন্য বাবা-মাকে দেখাশোনা করার দায়িত্বভার অনায়াসে ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছে অনেক পরিবার। পরিবারে একসঙ্গে সবাই মিলেমিশে থাকার যে সুখানুভূতি হারিয়ে গেছে, তা আবার ফিরিয়ে আনা দরকার সুস্থ-সুন্দর এবং সুখে-দুঃখে একত্রে থাকার প্রয়োজনে। তবেই না প্রতিটি পরিবারে আবারও ফিরবে সুখের ছোঁয়া। রূপনগর, ঢাকা থেকে
×