ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢামেকে চিকিৎসাধীন ॥ পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর কৃত্রিম হাত লাগানোর চিন্তাভাবনা

হৃদয়ের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হলেও মাথায় আঘাত নেই, শঙ্কামুক্ত

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

হৃদয়ের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হলেও মাথায় আঘাত নেই, শঙ্কামুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভাবের সংসারে পিতাকে সহায়তা করতে গিয়ে চিরতরে পঙ্গু হলো গোপালগঞ্জে ট্রাকের ঘষায় ডান হাত হারানো একমাত্র পুত্র টগবগে যুবক হৃদয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন শেষে হৃদয়কে বিছানায় পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে হৃদয় আশঙ্কামুক্ত। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার মাথায় আঘাত পাওয়া যায়নি। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর হৃদয়ের কৃত্রিম হাত লাগানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। আপাতত তাকে এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাকের ঘষায় বাসযাত্রী খালিদ হাসান হৃদয়ের (২০) ডান হাতটি কাঁধ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাকে দ্রুত গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরে তার অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবারই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ মোঃ শাহ আলম তালুকদার বুধবার জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটার দিকে হৃদয়কে ভর্তি করা হয়। রাতেই তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। ওই সময় অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকদের অনেকেই হাসপাতালের বাইরে ছিলেন। তাদের বিষয়টি জানানোর পর তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছান। রাতেই হৃদয়ের অপারেশন করা হয়। হৃদয়ের সার্বিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর তার কৃত্রিম হাত লাগানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। কারণ হৃদয়ের পুরো জীবনটিই পড়ে রয়েছে। হৃদয়ের অপারেশনকারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শামসুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার রাতেই তাকে খবর দেয়া হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুঁটে যান। রাতেই হৃদয়ের অপারেশন হয়। তাকে বিছানায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার মাথায় আঘাত লাগার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হৃদয় প্রাথমিকভাবে আশঙ্কামুক্ত। তাকে আপাতত এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বুধবার দুপুরে হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন হৃদয়ের সঙ্গে কথা হয়। হৃদয় বলছিলেন, সে প্রায়ই পিতাকে সহায়তা করতে টঙ্গীপাড়া থেকে গোপালগঞ্জে বাসে যাতায়াত করে। ঘটনার দিন গোপালগঞ্জ যাচ্ছিল। বাসের পেছনের দিকে ছিল। সকাল সাড়ে দশটার দিকে আচমকা একটি ট্রাক বাসটিকে জোরে ঘষা দেয়। ডান হাতটিতে মারাত্মক চাপ পড়ে। এরপর আর আমার কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি, আমি হাসপাতালে শুয়ে আছি। গোপালগঞ্জ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঘাতক ট্রাকটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে খুলনার কাঁটাখালী থেকে চালক জাকির হোসেনসহ (৩২) আটক করা হয়েছে। জাকিরের ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক কী না তা যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। চালকের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচরে। এ বিষয়ে হৃদয়ের মামাত ভাই টঙ্গীপাড়া পরিবহনের ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি হাইওয়ে পুলিশের ভাঙ্গা থানা তদন্ত করছে। হৃদয়ের পিতা রবিউল ইসলাম মিনার (৫৩) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতেই জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তবে স্ত্রীর চাকরির সুবাদে আমরা খুলনায় বসবাস করি। আমি গোপালগঞ্জ এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করি। এই কোম্পানিরই একটি বাসে টঙ্গীপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিল আমার একমাত্র ছেলে ও সবার ছোট সন্তান হৃদয়। যাওয়ার সময় গোপালগঞ্জের কাছে ঘটনাটি ঘটে। হৃদয় মূলত আমার কাজে সহায়তা করতেই যাচ্ছিল। সেও গোপালগঞ্জ এক্সপ্রেস নামের বাস কোম্পানির সহকারী সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করে। তার কাজ শেষ হলে সে আমার কাজ করে দেয়। আমাকে সহায়তা করে। অভাবের সংসারে এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কারণ সংসারের অনেক খরচ। সে তুলনায় আমাদের রোজগার কম। তাই ছেলে ও ছেলে মা সহ আমরা সবাই কষ্ট করি। আমাকে সহায়তা করতে গিয়ে একমাত্র ছেলে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কথা স্বরণ করেই তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন ফোনেই। বলেন, আমার স্ত্রী শাহীনা বেগম খুলনায় এ্যাসেন্সিয়াল ড্রাগে কর্মরত। সবার বড় মেয়ে শারমীন আক্তার খুলনা বিএল কলেজে অর্নাস শেষ বর্ষের ছাত্রী। সে বিবাহিত। দ্বিতীয় মেয়ে তামান্না আক্তার স্বর্ণা খুলনায় বেসরকারী নদার্ন ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। সবার ছোট হৃদয়। সে ছাত্র তেমন ভাল নয়। আমাকে সহায়তা করার পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকায় নিমতলীর কাছে সিদ্দিক বাজারের একটি হোটেলে উঠেছেন।
×