ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির জন্য প্রার্থী বদল করেছে বিএনপি ॥ হানিফ

গাজীপুরে আরও বেশি ভোটে আমরা জিতব ॥ ড. মোশাররফ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

গাজীপুরে আরও বেশি ভোটে আমরা জিতব ॥ ড. মোশাররফ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের দিকেই এখন ভোটারদের চোখ। দুই প্রার্থীর সম্পদ, আয় এবং শিক্ষাসহ অন্যান্য যোগ্যতা ভোটার ও সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চলেছেন। দুই পক্ষের কাছে এই নির্বাচনের টার্গেট দুই রকম। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য, গতবারের হারানো মেয়রের চেয়ার পুনরুদ্ধার আর বিএনপির লক্ষ্য, পুরনো গদি রক্ষা করা। গাজীপুরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান সরকারের পক্ষে প্রচারাভিযান চালাতে গিয়ে বিএনপি নেতা ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে গতবারের চেয়ে আরও বেশি ভোটে আমরা বিজয়ী হব। এদিকে খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, দুর্নীতি আর নৈতিক পরাজয়ের কারণে বিএনপি মেয়র প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। খবর গাজীপুর ও খুলনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। নিজস্ব সংবাদদাতা টঙ্গী থেকে জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় তার বাসভবনের আঙ্গিনায় গাজীপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে নির্বাচনী সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বক্তৃতায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে গাজীপুর সিটিতে বিএনপি গতবারের চেয়ে আরও বেশি ভোটে বিজয়ী হবে। এই নির্বাচন আমাদের আন্দোলনের অংশ। এই নির্বাচন দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির নির্বাচন। এটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের নির্বাচন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী করায় তার জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে। এই নির্বাচন হাসান সরকারের একার নির্বাচন নয়, বিএনপিসহ সকল মজলুম দল ও সর্বস্তরের মজলুম জনতার নির্বাচন। এমন এক সময়ে গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। বিএনপির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চক্রান্ত চলছে। ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা মুজিবুর রহমান, হুমায়ুন কবির, ডাঃ মাজহারুল আলম, শায়রুল কবির খান, ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ওলামাদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রুহুল আমিন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, শ্রীপুর থানা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান ফকির, মাহবুবুল আলম গোলাপ, রিয়াজুল হান্নান, সুরুজ আহমেদ, শওকত হোসেন সরকার, বসির আহমেদ বাচ্চু, মাহবুবুল আলম শুক্কুর, এ্যাডভোকেট এমদাদুল হক, প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ, সরাফত হোসেন, সৈয়দ হাসান সোহেল জুন্নুরাইন, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, রফিকুল আজিজ প্রিন্সসহ বিপুল নেতাকর্মী। স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে বৈধ ৯ মেয়র প্রার্থীদের সবাই শিক্ষিত ও ধনাঢ্য। এদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী। মেয়র পদে প্রার্থীদের মধ্যে অর্থসম্পদের দিক দিয়ে অন্যদের তুলনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বেশ এগিয়ে আছেন। উভয় প্রার্থীই ব্যবসায়ী। তবে আয়ের ক্ষেত্রে এ দু’প্রার্থীর ক্ষেত্রে বেশ ব্যবধান রয়েছে। আয় ও সম্পদের দিক দিয়ে মেয়র পদের অন্য প্রার্থীদের তুলনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বেশ এগিয়ে আছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তাদের দু’জনেরই রয়েছে দায়দেনা। এছাড়া বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নামে অতীতে মামলা থাকলেও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। আগামী ১৫ মে এ সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ (¯œাতকোত্তর)। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনবিদ্যায় এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এছাড়াও রয়েছে ১ হাজার ৪৯৫.১৫ শতাংশ কৃষিজমি, ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ অকৃষি জমি এবং ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ আবাসিক/বাণিজ্যিক জমি। তার রয়েছে একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল এবং দুটি গাড়িসহ আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী। তার বার্ষিক আয় ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এছাড়া কৃষি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় দেড় লাখ টাকা এবং বাড়ি ও দোকান ভাড়া ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে জমি বিক্রির জন্য বায়না বাবদ ৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে তার। হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয়ের মধ্যে মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ই ধারায় অর্জিত দেখিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচার ও অন্য কার্যক্রমে কর্মীদের পেছনে ১০ লাখ টাকাসহ মোট ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করবেন বলে কমিশনকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি নির্বাচনী প্রচারে ১ লাখ ১৪ হাজার পোস্টার ছাপাবেন এবং ১০ লাখ লিফলেট বিতরণ করবেন। এছাড়াও তিনি ১০টি নির্বাচনী ও একটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্প স্থাপন ও ৫৭টি পথসভা করবেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। অতীতে তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে দুটি মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলা দুটির একটিতে তিনি খালাস এবং অপরটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। হলফনামায় জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেছেন তার পেশা ব্যবসা। তিনি অনারেবল টেক্সটাইলস কম্পোজিট এবং জেড আলম এ্যাপারেলস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অনারেবল টেক্সটাইলস কম্পোজিটে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং জেড আলম এ্যাপারেলসে ২০ হাজার টাকা তার শেয়ার রয়েছে। তার সম্পদের মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণ ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার। ব্যাংকে জমা আছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা। এছাড়াও তার ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার হলফনামায় একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনায় বিএনপি প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ অনেক কম হলেও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া দু’জনই সম্পদশালী। হাসান উদ্দিন সরকার হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং তার ওপর যারা নির্ভরশীল, তাদের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। নিজের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৪ লাখ টাকা ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ১৯ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন। এর বাইরে দু’জনের ৫৩ তোলা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া হাসান সরকার তার নিজের নামে একটি পিস্তল ও একটি শটগান এবং স্ত্রীর নামে একনলা বন্দুক রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। স্থাবর সম্পদের মধ্যে হাসান সরকারের নামে ৫৯৮ শতাংশ ও তার স্ত্রীর নামে ৩০৫ শতাংশ জমি রয়েছে। স্ত্রীর নামে রয়েছে চারতলা একটি বাড়ি। হাসান সরকারের ঋণ রয়েছে ২৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। হাসান উদ্দিন সরকারের বার্ষিক আয়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পান ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া কৃষি খাত থেকে ৬৩ হাজার, বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া ৫ লাখ ২২ হাজার ৯০০ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৭৩ হাজার এবং ব্যাংক সুদ বাবদ ১১ হাজার ৫২৬ টাকা আয় রয়েছে তার। তার বিরুদ্ধে ঢাকার তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি ও টঙ্গী মডেল থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা চলমান রয়েছে। দুটি মামলার একটি বিচারাধীন ও আরেকটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ দুটি মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে দায়ের করা হয়েছে। এর আগে ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে দুটিতে বেকসুর খালাস ও একটি খারিজ হয়েছে। হাসান সরকারের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রায় ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে তার নগদ রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ ও ব্যাংকে জমা রয়েছে ৬০ লাখ ৪৯ হাজার ৬০১ টাকা। এছাড়াও তার রয়েছে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি। তার ২১ তোলা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৫০০ দশমিক ৫৩১ শতাংশ কৃষিজমি, যার দাম দেখিয়েছেন ৯৪ হাজার ৪৬৪ টাকা। এছাড়াও তার ৭ দশমিক ৫ শতক জমিসহ ৫টি দোকান, ৯০ শতাংশ জমি ও স্থাপনা, টঙ্গীতে সেমিপাকা ৩২টি রুমের ঘর এবং একচালা টিনশেড রয়েছে। অপরদিকে হাসান উদ্দিন সরকারের স্ত্রীর সম্পদের মধ্যে নগদ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫৮ হাজার ৫৪২ টাকা রয়েছে। স্ত্রীর নামে ২৯০০ বর্গফুটের চারতলা বাড়ি রয়েছে; যার দাম ৭৭ লাখ ৮৪ হাজার ১৮৮ টাকা। এছাড়া ৩২ তোলা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, আসবাবপত্র ও একনলা বন্দুক রয়েছে। হাসান সরকার নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় ২০ লাখ টাকা করবেন বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা তার স্ত্রীর কাছ থেকে নেয়া হবে। নির্বাচনী প্রচারের পরিকল্পনায় তিনি ৩ লাখ পোস্টার এবং ৫ লাখ লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ছাপাবেন ও বিতরণ করবেন। এছাড়াও তিনি দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প, একটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্প স্থাপন করবেন, ১৭১টি পথসভা, ঘরোয়া বৈঠক ও সভা করবেন। তিনি ৩৪২টি ডিজিটাল ব্যানার এবং টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করবেন। ইসলামী ঐক্যজোট সমর্থিত প্রার্থী ফজলুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা দাওরায়ে হাদিস। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। এরমধ্যে তিনি ব্যবসা থেকে আড়াই লাখ টাকা, এজেন্সির পরিচালক হিসেবে সম্মানী ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল থেকে সম্মানী বাবদ ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন। তার সম্পদের মধ্যে নগদ দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ লাখ টাকা, একটি প্রাইভেট কার, আসবাবপত্র, ২৭ শতাংশ অকৃষি জমি ও নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোন মামলা নেই এবং অতীতেও ছিল না। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মনোনীত মেয়র প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার আয় ও সম্পদ দুটোই কম। তবে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে ৫ বিঘা জমি রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থী মোঃ নাসির উদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা তাকমিল পাস। তিনি পেশায় শিক্ষক। তার বার্ষিক আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে নগদ ৩৮ হাজার ২৮০ টাকা, ব্যাংকে জমা ৬ লাখ ২১ হাজার ৭২০ টাকা ও আসবাবপত্র এবং ১৬৫ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ সানাউল্লার শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল পাস। তিনি পেশায় শিক্ষক। তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টাকা। এছাড়া তার রয়েছে মোটরসাইকেল, স্বর্ণ ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১ বিঘা কৃষিজমি, ৪ বিঘা অকৃষি জমি ও একটি বাড়ি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা দুটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। এছাড়াও অতীতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। এছাড়া অপর মেয়র প্রার্থী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোঃ জালাল উদ্দিনও নির্বাচন কমিশনে তার হলফনামা দাখিল করেছেন বলে গাজীপুর নিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল জানিয়েছেন। তিনি জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে আইন অনুযায়ী মেয়র প্রার্থীগণের নির্বাচনী সর্বোচ্চ ব্যয় ৩০ লাখ টাকা ও প্রার্থীর ব্যক্তিগত ব্যয় দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস জানায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, দুর্নীতি আর নৈতিক পরাজয়ের কারণে বিএনপি মেয়র প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। তারেক রহমান হাওয়া ভবনে বসে এতিমের টাকাসহ হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করে লন্ডনে পাচার করেছে। সেই পাচারের টাকায় এখন সেখানে বসে বাংলাদেশকে অশান্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ মামলায় তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও খালেদা জিয়া জেলে আছেন। খালেদা জিয়া অসুস্থতার নামে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন থাকাকালে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে দেশকে অশান্ত করতে ষড়যন্ত্র করেন। এই ষড়যন্ত্র থেকে বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। বুধবার বেলা ১১টায় গল্লামারী স্মৃতিসৌধ চত্বরে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ প্রার্থী থাকলেও এটা প্রায় নিশ্চিত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক মেয়র তালুকদার অব্দুল খালেক ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মধ্যে। তালুকদার খালেকের লক্ষ্য হচ্ছে কেসিসির কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার, আর বিএনপি প্রার্থী চাইছেন কেসিসির চেয়ারটি দখলে রাখতে। যদিও তিনি এই চেয়ারে কখনও বসেননি। তবে বর্তমানে মেয়রের চেয়ারটি তাদের এক নেতার দখলে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারে যাওয়ার আগেই এই দুই প্রার্থী ও দলের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ করতে শুরু করেছেন। পাশপাশি চলছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাংগঠনিক সভা। নানা হিসাব-নিকাশ ও কর্মপন্থাও নির্ধারণ করা হচ্ছে। ভোটাররাও মূলত এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে খুলনা মহানগরীর উন্নয়ন চাই। নাগরিকদের পূঞ্জীভূত সমস্যার নিরসন চাই। ২০২১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে তার আলোকে খুলনার মেয়র দেখতে চাই। যার মধ্যে দক্ষতা, সততা, স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা আছে এমন মেয়রই খুলনার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন, আমরা তেমন ব্যক্তিকে পাশে চাই। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জুর প্রেস ব্রিফিং ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, আমার ড্রাইভার হাওয়া খায় না। তার মাসিক বেতন ৭ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ২৬ বছরের পারিবারিক জীবনে পুরনো আসবাবপত্র ও টিভি দিয়ে সংসার চলছে। একটি ডাইনিং টেবিল আছে শ্বশুরবাড়ির দেয়া। সংসদ সদস্য থাকাকালে ব্যাংক ঋণ ২০ লাখ এবং নিজস্ব পৌনে ৪ লাখ টাকা দিয়ে একটি ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি কিনি। তেল কেনার পয়সা থাকলে গাড়ি চড়ি, না থাকলে রিক্সায় বা দলের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেলে চড়ি। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের প্রেস ব্রিফিংয়ের জবাবে বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মঞ্জু এসব কথা বলেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জু বলেন, আমার ও স্ত্রীর মিলিয়ে পৌনে ৫ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। আমার ছেলে ও মেয়ের দায়িত্ব তাদের মামারা নিয়েছেন। আমার ছেলে ও মেয়ে টিউশনি করে তাদের লেখাপড়ার খরচ চালায়। বাংলাদেশের এমন কোন সংসদ সদস্য আছে বলে আমার জানা নেই যে, একজন সাবেক সংসদ সদস্যের ছেলেমেয়ে টিউশনি করে লেখাপড়া করছে। এ নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। এই শহরে ৯হাজার টাকায় দুই রুমের একটি ছোট ভাড়া বাসায় আমরা বসবাস করি। মঞ্জু বলেন, আমরা চরিত্র হননের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। পাশাপাশি আমরা কারও রক্তচক্ষুকেও ভয় পাই না। আমরা সত্যের পক্ষে। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে উদ্দেশ করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তিনি ৯ বছর আগে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। কি এমন ব্যবসা করলেন যে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন। খালেকের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অনেক তথ্য আছে যা বললে তিনি মুখ লুকাতে পারবেন না। কিন্তু আমরা তা করব না। আমরা কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তিনি খুব সীমিত আয়ের লোক, তাহলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের খরচ কিভাবে মেটাবেন এ প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, আমার দলের নেতাকর্মীরা দেবে এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে নির্বাচনী ব্যয় বহন করা হবে। স্ত্রীর প্রত্যাহারে বিজয়ের পথে স্বামী ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (গাসিক) এবারের নির্বাচনে এক ওয়ার্ডে সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বামীকে সমর্থন দিয়ে তার স্ত্রী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে বুধবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। স্ত্রীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় ওই আসনে তার স্বামী একক প্রার্থী হিসেবে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) বিজয়ী হতে চলেছেন। এবার মঞ্জুর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ খালেকের ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে এবার হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। বুধবার এ অভিযোগ দাখিল করেন বলে জানিয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মুন্সী মোঃ মাহবুব আলম সোহাগ। সোহাগ জানান, লিখিত অভিযোগে তালুকদার খালেক উল্লেখ করেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধনকৃত ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের একজন শেয়ার হোল্ডার। তিনি ওই কোম্পানির ১হাজার ৪০০ শেয়ারের মালিক। কিন্তু এই তথ্যটি তিনি তার হলফনামায় গোপন করেছেন। যার ফলে তার মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে তালুকদার খালেক মঞ্জুর মালিকানাধীন খুলনা প্রোপাটিজ লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডারের অনুলিপি সংযুক্ত করেছেন। তালুকদার খালেক তার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জুর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কয়েকজনে মিলে খুলনা প্রপার্টিজ লি. নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান গঠন করি। কিন্তু ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় তা শুরুতেই মৃত্যুবরণ করে। বিএনপি করি বলে কোন ব্যাংক ঋণ দিতে সাহস পায়নি।
×