ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সোচ্চার ব্রিটেন কানাডা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সোচ্চার ব্রিটেন কানাডা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকর্মের স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নিশ্চিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা। কমনওয়েলথ সম্মেলনের এক পার্শ্ববৈঠকে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে কমনওয়েলভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বানও জানানো হয়েছে। কানাডার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিবিসি এ খবর জানিয়েছে। মঙ্গলবার লন্ডনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সম্মেলনের এক পার্শ্ববৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ওই গোলটেবিল বৈঠকের উদ্যোগ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনসন বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তারা আন্তরিক। আর এই প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো নৃশংসতার ঘটনায় একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত করা। জনসনের বিবৃতিতে ফ্রিল্যান্ডকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এই সংকটে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সমর্থনের বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে’। সম্প্রতি ত্রিশটি মানবাধিকার ও মানবিক সহায়তা সংস্থার জোট কানাডার রাজধানী অটোয়ায় এক বৈঠক করে। বৈঠকে তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিশেষ দূত বব রে’র প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। এরপরই মঙ্গলবার এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বব রে তার প্রতিবেদনে বলেছিলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আগ্রহ দেখানোর পাশাপাশি তাদের জন্য মানবিক সহায়তা জোরদারে কানাডার ভূমিকা রাখা উচিত। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার প্রমাণ একসঙ্গে করে সংরক্ষণ করতে সহায়তা করারও সুপারিশ করেন বব রে। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার কয়েকদিনের মধ্যে ওই প্রতিবেদন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফ্রিল্যান্ডকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রে’র সুপারিশ থেকে ‘বেশ কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হবে’। অটোয়ায় বৈঠককারী মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও নৃশংসতায় জড়িতদের বিচারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি কানাডাকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের বর্তমান চাহিদার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কানাডা পরিচালক ফারিদা দেইফ বলেন, আমার মনে হয় প্রমাণ সংগ্রহ ও সরক্ষণ করার কাজটি জটিল। আর ঠিক এখনই কানাডা তদন্তের ভিত্তি রচনা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কাঠামোবদ্ধ উপায়ে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার পর তা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গরা তাদের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ ও প্রচণ্ড যৌন সহিংসতার কাহিনী সবার কাছে তুলে ধরেছেন। তবে মিয়ানমার সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বৈধ লড়াই করার দাবি করে এসেছে। অটোয়ায় বৈঠকে অংশ নেয়া মানবাধিকার সংগঠনের জোটটি এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আওতায় নেয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কানাডাকে প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ মামলায় জড়িত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইন বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহের কৌশল নির্ধারণ করার জন্যও কানাডার প্রতি আহ্বান জানান। যাতে এসব প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা যায়। জোটটি বলেছে, এজন্য প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি ডকুমেন্টশন সেন্টার স্থাপন করা। এদিকে বাংলাদেশে কাজ করে যাওয়া মানবাধিকার সংগঠনগুলো আসন্ন বর্ষাকালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ইউনিসেফ কানাডার সভাপতি ডেভিড মোরলে বাংলাদেশ থেকে সিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি রোহিঙ্গা জনগণ তাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সুরক্ষিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মোরলে বলেন, আজ আপনারা দেখতে পাবেন সব তরুণ পুরুষরা বাঁশ দিয়ে তাদের ঘর মেরামত করছে। এখান সব মানুষ কঠোর পরিশ্রম করছে। তারা কারও নির্দেশের অপেক্ষায় থাকছেন না। মোরলে বলেন, তিনি সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে অনেক ঘটনা শুনেছেন। জীবননাশের আশঙ্কায় তাদের অনেকেই আর মিয়ারমারে ফিরে যেতে চায় না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থাকতে হতে পারে। তাদের আশ্রয়, শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি দরকার।
×