ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহকারীদের মূলহোতা ধরা পড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহকারীদের মূলহোতা ধরা পড়ল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে বিভিন্ন ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সমাধান (উত্তর) সরবরাহকারীদের মূলহোতা পুলকেশ দাস বাচ্চুসহ (৩২) তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অপর দুইজন হলেনÑ মনিরুল ইসলাম (২৩) ও মোঃ ফিরোজ আহমেদ (২৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮টি বিশেষ ডিভাইস ও ১১টি ব্লুুটুথ ইয়ারপিস উদ্ধার করা হয়। এর মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করত তারা। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর রমনাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবির উত্তর বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। পুলিশ জানায়, পুলকেশ পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে থেকে বিশেষ ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তরপত্র সরবরাহ করত। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষা কেন্দ্রের কিছু শিক্ষক পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে ম্যাসেঞ্জারে নিয়ে নিত। তারপর সেগুলোর উত্তর বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকা পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠাত। পুলকেশকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিএমপি জানায়, পুলকেশ বিশেষ এক ধরনের ইলেক্ট্রিক ডিভাইস কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে চীন থেকে নিয়ে আসত। ওইসব ডিভাইস সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করতে করতে সে এক বড় সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এ কাজে সে বেশ কয়েকজনকে সহযোগী হিসেবে কাছে পেয়েছিল। তার মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা। এছাড়াও তার কিছু সহযোগী আছে যারা গ্রামে পরিচিতদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সংগ্রহ করে। সহযোগীদের মধ্যে কেউ কেউ উত্তরপত্র তৈরি, ডিভাইসগুলো পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ ও পরীক্ষার্থীদের শরীরে ডিভাইস স্থাপনসহ সংরক্ষণের কাজ করত। প্রাথমিকভাবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিত। যারা প্রিলিমিনারিতে সফল হতো, তাদের কাছে পরবর্তী সময়ে আরও টাকা নেয়া হতো। উল্লেখ্য, এর আগে গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছিল ডিবি (উত্তর) বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার অসিম কুমার দাস, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার মোঃ সোহেল আকন্দ ও পূবালী ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার মোঃ মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন, মোঃ জহিরল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, নাদিমুল ইসলাম, মোঃ এনামুল হক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্ণব চক্রবর্তী ও আরিফুর রহমান ওরফে শাহিন। তাদের কাছ থেকে খুদে ব্যাটারি, ইয়ারফোন, মোবাইল ফোনের মতো কথা বলার সিমযুক্ত মাস্টারকার্ড জব্দ করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতেই পুলকেশকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষায় জালিয়াতির প্রধান নায়ক হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর মজুমদার ওরফে রুবেল। তারই প্রধান সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করত ব্যাংক কর্মকর্তা ও সাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পুলকেশ দাস ওরফে বাচ্চু। তাদের ডিভাইস দিয়ে সহযোগিতা করত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র কার্জন। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে সুকৌশলে প্রশ্নফাঁস পরবর্তীতে ‘ওয়ান স্টপ সেলে’ উপস্থিত থেকে প্রশ্নপত্রের সমাধান দিতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা আবু জাফর মজুমদার। এ কাজ করে কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ওই প্রশ্নের উত্তরপত্র তৈরি করে পরীক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের হাতে যথাসময়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য চক্রটি ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ গড়ে তুলেছিল। ‘পান্থপথে এ চক্রের একটি ওয়ান স্টপ সেন্টার রয়েছে। সেখানে বসেই ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরপত্র তৈরি করা হতো। এখান থেকে আবার এসব উত্তরপত্র শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সরবরাহ হতো। সব কাজেই হাত ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক জাফরের। এসব কাজের নেপথ্য নায়ক হিসেবে কাজ করত পুলকেশ।
×