ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বছর পর ফের মাঠে গড়াচ্ছে অনুর্ধ-১৮ ফুটবল

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

তিন বছর পর ফের মাঠে গড়াচ্ছে অনুর্ধ-১৮ ফুটবল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটি দেশের ফুটবলারদের গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকে ক্লাবগুলোর। এক্ষেত্রে সে দেশের ফুটবল ফেডারেশনের তেমন কোন বড় ভূমিকা থাকে না। তারা শুধু সেরা খেলোয়াড়দের বাছাই করে জাতীয় দল গড়ে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের বেলাতে বরাবরই হয়ে এসেছে ঠিক এর উল্টোটি। সব দায় যেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। এই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে তারা প্রায়ই হিমশিম খায়। সবচেয়ে বড় সমস্যাÑ ক্লাবগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তারা। বরং মাঝে মাঝেই ক্লাবগুলো জোট বেঁধে বিভিন্ন দাবিতে অনড় হলে বাফুফে হয়ে পড়ে অসহায়। মেনে নেয় তাদের সব ‘অন্যায়’ দাবি। মোট কথা, ক্লাবগুলোকে শায়েস্তা করতে না পেরে বরং বাফুফেই হয়ে পড়ে ‘জিম্মি’। দেখতে দেখতে টানা দশটি পেশাদার ফুটবল লীগ আয়োজন করে ফেললো বাফুফে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি হাতে গোনা দু’একটি ক্লাব বাদে আর কোন ক্লাবই বাস্তবে পেশাদার হতে পারেনি। বাফুফে ২০১৩ সালেই নিয়ম করেছিল পেশাদার লীগের ক্লাবগুলোকে অ-১৬ দল গড়ে টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। সেবার বেশিরভাগ ক্লাব খেললেও অংশ নেয়নি শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব। তাদের যুক্তি ছিলÑ ‘এই টুর্নামেন্ট খেলে কী লাভ?’। বাকি ক্লাবগুলো খেললেও তাদের অনুযোগ ছিল এত অল্প বয়সী খেলোয়াড়কে মূল বা সিনিয়র দলে খেলানো যায় না, কাজেই খেলোয়াড় পাওয়াও মুশকিল। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে পরের বছর (২০১৪) অ-১৬’এর পরিবর্তে অনুষ্ঠিত হয় অ-১৮ আসর। সেই আসরেও বাফুফেকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে শেখ জামাল খেলেনি। ইচ্ছা থাকলেও বাফুফে কোনবারই জামালকে শাস্তি দিতে পারেনি। কারণ বাইলজে এমন কিছু ছিলই না। ফলে আইনের ফাঁক গলে জামাল প্রতিবারই সুনিপুণভাবে ফাঁকি দিয়েছিল। ২০১৩ এবং ২০১৪ আসরে দু’বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহামেডান। কিন্তু এবার আর শুধু জামাল কেন, কোন ক্লাবই আর ফাঁকি দিতে পারবে না। কারণ এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) বাফুফেকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কড়া ধমক দিয়েছে। এ ধরনের কোন টুর্নামেন্টে কোন ক্লাব না খেললে তাদের কড়া শাস্তি পেতে হবে। বাফুফে আবার বিষয়টি ক্লাবগুলোকে অবহিত করলে তারা এবার নড়েচড়ে বসে। পেশাদার লীগের ক্লাবগুলোর বয়সভিত্তিক দল নিয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে ‘ওয়ালটন অ-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্ট’। এ আসরে অংশ নিচ্ছে পেশাদার লীগ খেলা ১২ ক্লাব। মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাফুফের চুক্তি স্বাক্ষর এবং ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্র অনুযায়ী ১২ দলকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। গ্রুপ ‘এ’তে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে আছে শেখ রাসেল ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ‘বি’ গ্রুপে টিম বিজেএমসি, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি এবং শেখ জামাল। গ্রুপ ‘সি’তে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ এবং চট্টগ্রাম আবাহনী। গ্রুপ ‘ডি’তে ঢাকা আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। ওয়ালটনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পেশাদার লীগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এটি বাফুফের বর্ষপঞ্জিকার অবশিষ্ট খেলা। পেশাদার লীগের ১২ দলই এবার অংশ নিচ্ছে। ওয়ালটনকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। টুর্নামেন্টটি পাওয়ার্ড বাই প্রিমিয়ার ব্যাংক, কো-স্পন্সর প্রগতি ইন্স্যুরেন্স এবং আইএসপি পার্টনার আমরা নেটওয়ার্ক।’ সময় স্বল্পতার কারণে এবার টুর্নামেন্ট আকারে ছোট পরিসরে হলেও আগামী বছর থেকে লীগ আকারে হবে অ-১৮ ফুটবল। মূলত প্রতিভাবান ফুটবলার বের করতেই এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে বাফুফে। এ প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এ বছর মূলত রুটিন পালন করছি। আগামী বছর এ টুর্নামেন্ট লীগ আকারে করা হবে। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে ক্লাবগুলোই লাভবান হবে। এখান থেকে প্রতিটি ক্লাব যদি দু’জন করে ভাল ফুটবলারও পায় তবে তাদের অন্তত ৫০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। আর এ কারণে ক্লাবগুলোরই টুর্নামেন্টে আগ্রহ বেশি।’ টুর্নামেন্টের মোট বাজেট ৫০ লাখ টাকা। অংশগ্রহণ ফি বাবদ প্রতিটি ক্লাবকে ২ লাখ টাকা করে দিচ্ছে বাফুফে। চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য থাকছে ৫ লাখ টাকা এবং রানার্সআপের পুরস্কার ৩ লাখ টাকা। টুর্নামেন্ট শেষ হলে ফিফা থেকে ৪০ হাজার ডলার পাবে বাফুফে। টুর্নামেন্টে কোন দল যেন বয়সচুরি বা পাতানো ম্যাচ না খেলতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বাফুফে। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলোকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলেও জানান পেশাদার লীগ কমিটির চেয়ারম্যান। সালাম মুর্শেদী আরও জানান, আগামীবার যখন অ-১৮ ফুটবল শুরু করা হবে তখন জাতীয় দলের কোন খেলা থাকবে না। ১১তম পেশাদার লীগে যে ক্লাবগুলো অংশ নেবে তাদের বয়সভিত্তিক দলগুলো খেলবে ওই লীগে। তাই আগামীবার অ-১৮ ফুটবল হবে আরও জমজমাট।
×