ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মন্টিভিডিও টু মস্কো

বিশ্বকাপকথন-১৪ ॥ দ্বাদশ বিশ্বকাপ স্পেন : ১৯৮২

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

বিশ্বকাপকথন-১৪ ॥ দ্বাদশ বিশ্বকাপ স্পেন : ১৯৮২

একুশতম বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আর মাস দুয়েক বাকি। হয়ে গেছে ড্র, এবারে যে ৩২ দল বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে তাও নির্ধারিত হয়ে গেছে। এ গ্রুপে স্বাগতিক রাশিয়া, সৌদি আরব, উরুগুয়ে ও মিসর, বি গ্রুপে পর্তুগাল, স্পেন, মরক্কো ও ইরান, সি গ্রুপে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও ডেনমার্ক, ডি গ্রুপে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজিরিয়া, ই গ্রুপে ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়া, এফ গ্রুপে জার্মানি, মেক্সিকো, সুইডেন ও দ. কোরিয়া, জি গ্রুপে ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, তিউনিশিয়া ও পানামা, এবং এইচ গ্রুপে পোল্যান্ড, কলম্বিয়া, জাপান ও সেনেগাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। প্রস্তুত রাশিয়ার মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে। ১৫ জুলাই ৮১ হাজার আসনের একই মাঠে সমাপনী (ফাইনাল) ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ কথা সবার জানা, এবারের ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসছে রাশিয়ায়। এবারের ২১তম বিশ্বকাপে ৩২ দল অংশ নেবে। কোন্ ৩২ দল ২১তম বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেবে সেটাও এখন সবার জানা হয়ে গেছে। রাশিয়ার ১২ স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৬৪ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ কথাও সবার জানা, ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসর বসে উরুগুয়েতে। মন্টিভিডিওতে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। মন্টিভিডিও থেকে মস্কো। বিশ্বকাপ ফুটবলের ৮৮ বছরের পথচলা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক আয়োজন ‘বিশ্বকাপকথন’। লিখেছেন...প্রথিতযশা কবি, কথাসাহিত্যিক ও ক্রীড়ালেখক সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ ফিফা সভাপতি জোয়াও হ্যাভালাঞ্জ বিশ্বকাপকে বিশ্বায়নের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয় এ বিশ্বকাপ থেকেই। ফিফা সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পরই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিশ্বকাপকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবেন। সে কারণে এই ব্রাজিলিয়ান সভাপতি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দল সংখ্যা ১৬টি থেকে বাড়িয়ে ২৪টি করেন। অঞ্চলভিত্তিক দলগুলো হলো: ইউরোপ থেকে ইতালি, ইংল্যান্ড, প. জার্মানি, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, স্পেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লাভাকিয়া, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, উ. আয়ারল্যান্ড, যুগোশ্লাভিয়া, অস্ট্রিয়া ও স্কটল্যান্ড; কনমোবল থেকে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু; কনকাকাফ থেকে মেক্সিকো; মধ্য আমেরিকা থেকে হন্ডুরাস; ওশেনিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড; আফ্রিকা থেকে ক্যামেরুন, আলজেরিয়া; এশিয়া থেকে কুয়েত দ্বাদশ বিশ্বকাপে অংশ নেয়। এবারের বর্ধিত আয়োজনের দায়িত্ব পায় ইউরোপের স্পেন। তার মানে ঘুরে ফিরে আবার ইউরোপে। ইউরোপ-আমেরিকার গ-ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারলো না বিশ্বকাপ ফুটবল। কেবলমাত্র দল সংখ্যা বাড়িয়ে ফিফার দায়িত্ব শেষ। বিশ্বায়ন করতে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরেও যে বিশ্বকাপের আয়োজন করা দরকার সেটা নিয়ে ফিফার মতের কোন পরিবর্তন হলো না। আয়োজনের দায়িত্ব পেয়ে পুরো মাদ্রিদ নগরীকে ঢেলে সাজালো স্পেন। নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণসহ অন্যগুলোর সংস্কার করা হলো। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে স্পেনে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা দিল। বার্সেলোনায় আয়োজন করা হয় এক জাঁকজমকপূর্ণ ও নয়নাভিরাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। লাখ লাখ ফুটবলানুরাগীর সমাগম ঘটে সে অনুষ্ঠানে। এতটাই ভিড় ছিল যে ভিড়ের কারণে ফিফা সভাপতি জোয়াও হ্যাভালাঞ্জের পরিচয়পত্রটি হারিয়ে যায়। এ কারণে তিনি বিশ্বকাপের সে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। দেখতে পারেননি স্পেনের সে দৃষ্টিনন্দন অনুষ্ঠান। ৫০ মিনিট ধরে চলে এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। তামাম স্টেডিয়াম ছিল বর্ণিল আলোয় সজ্জিত। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অসংখ্য রঙিন পতাকা স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। মাঠ জুড়ে ছিল ৪০টি মধ্যযুগীয় স্প্যানিশ সাজে সজ্জিত পুতুল। যাদের গায়ে লেখা ছিল ‘এসপেনা ’৮২’। মনোরম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উদ্বোধনী ম্যাচে বেলজিয়ামের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এ ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। চমক দিয়ে ১২তম বিশ্বকাপের সূচনা। সে চমক বজায় থাকে বিশ্বকাপের শেষ অবধি। ফিফার ১৫১টি সদস্য দেশের সম্মতিতে আয়োজক নির্বাচিত হলো আর্জেন্টিনা। এবার দশম বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলল ২৪টি দেশ সে কথা আগেই বলা হয়েছে। এই ২৪টি দেশ নির্বাচন করা হয় বাছাই পর্বের ১০৯টি দেশের মধ্যে থেকে। বাছাই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ৩০৫টি ম্যাচ। আর মূল পর্বে ২৪টি দল খেলল ৫২টি ম্যাচ। স্পেনের ১৪টি স্টেডিয়ামে এই ৫২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। দশম বিশ্বকাপের মতো এবারও আবার গ্রুপিং করা হয়। তবে এবার গ্রুপ পর্বে ১৬টি দলের পরিবর্তে দেশ সংখ্যা ছিল ২৪টি। ফলে ২৪টি দলকে ৬টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক গ্রুপে ৪টি করে দল অংশ নেয়। দশম বিশ্বকাপের নিয়মেই এবারও খেলা হয়। তবে একটু হেরফের ছিল। এবার খেলার নিয়ম ছিল এ রকম, গ্রুপ পর্বের ২৪টি দলের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ ১২টি দল দ্বিতীয় রাউন্ডে আবার ৪টি গ্রুপে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলবে। দ্বিতীয় রাউন্ডের ৪ গ্রুপের বিজয়ী ৪ দল (৪ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন) সেমি-ফাইনাল খেলবে। কোন কোয়ার্টার-ফাইনাল হবে না। সেমি-ফাইনাল বিজয়ী দুই দল ফাইনাল খেলবে। গ্রুপিং ছিল এ রকম : ক গ্রুপ : পোল্যান্ড, ইতালি, ক্যামেরুন ও পেরু; খ গ্রুপ : প. জার্মানি, অস্ট্রিয়া, আলজেরিয়া ও চিলি; গ গ্রুপ : বেলজিয়াম, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি ও এল সালভাদর; ঘ গ্রুপ : ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, চেকোশ্লাভাকিয়া ও কুয়েত; ঙ গ্রুপ : উ. আয়ারল্যান্ড, স্পেন, যুগোশ্লাভিয়া ও হন্ডুরাস; চ গ্রুপ : ব্রাজিল, সো. ইউনিয়ন, স্কটল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। এরপর ছয় গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ ১২টি দল দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। গ্রুপ পর্বে প. জার্মানি ৬-০ গোলে হারায় মেক্সিকোকে, দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনা ৬-০ গোলে পেরুকে নেদারল্যান্ডস ৫-১ গোলে অস্ট্রিয়াকে হারায়। প্রথম রাউন্ডের খেলার পর দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা দলগুলো: গ্রুপ এ : পোল্যান্ড, সো. রাশিয়া ও বেলজিয়াম; গ্রুপ বি : প. জার্মানি, ইংল্যান্ড ও স্পেন; গ্রুপ সি : ইতালি, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা, গ্রুপ ডি : ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও উ. আয়ারল্যান্ড প্রথম রাউন্ডের দেয়াল পার হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলে। দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ এ থেকে পোল্যান্ড; গ্রুপ বি থেকে প. জার্মানি; গ্রুপ-সি থেকে ইতালি; গ্রুপ-ডি থেকে ফ্রান্স গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। ব্রাজিল সি গ্রুপে আবারও রানার্স আপ হওয়ায় ফাইনাল খেলার সুযোগ হারায়। অন্য সব বিশ্বকাপের মতো এবারও ফেবারিট ছিল ব্রাজিল। প্রত্যেক বিশ্বকাপের মতো এবারো ব্রাজিল ঠেকাও আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরি ১০-১ গোলে জেতে এল সালভাদরের বিপক্ষে। এ ম্যাচে হ্যাট্রিক করলেন লাসজারো কিস। বিশ্বকাপের মূল পর্বে এটি বড় জয়। এর আগে ১৯৭৪ সালে যুগোশ্লাভিয়া ৯-০ গোলে হারিয়েছিল জায়ারকে। বেলজিয়ামের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয়ের রেশ কাটতে না কাটতে আলজেরিয়া ২-১ গোলে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে আরেকটি অঘটনের জন্ম দেয়। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জার্মানদের ‘গট আপ’ খেলা দেখে জার্মান সমর্থকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে পোল্যান্ড, প. জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্স গ্রুপ চ্যাস্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনালে উঠে। দ্বিতীয় রাউন্ডের সি গ্রুপকে বলা হয় ‘ডেথ গ্রুপ’। এ গ্রুপে খেলে ইতালির সঙ্গে আরও দুই লাতিন পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। ইতালি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিন সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন ভেস্তে যায়। অপর দিকে বি গ্রুপেও জার্মানরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ইউরোপের দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও স্পেনকে সেমির স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়। গ্রুপ পর্বের ফলাফল : গ্রুপ-এ : ইতালি-০ পোল্যান্ড-০; ক্যামেরুন-০ পেরু-০; ইতালি-১ পেরু-১ পোল্যান্ড-০ ক্যামেরুন-০; পোল্যান্ড-৫ পেরু-১; ক্যামেরুন-১ ইতালি-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : পোল্যান্ড গ্রুপ রানার্স আপ : ইতালি। গ্রুপ-বি : আলজেরিয়া-২ প. জার্মানি-১; অস্ট্রিয়া-১ চিলি-০; প. জার্মানি-৪ চিলি-১; অস্ট্রিয়া-২ আলজেরিয়া-০; আলজেরিয়া-৩ চিলি-২; প. জার্মানি-১ অস্ট্রিয়া-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : প. জার্মানি গ্রুপ রানার্স আপ : অস্ট্রিয়া। গ্রুপ-সি : বেলজিয়াম-১ আর্জেন্টিনা-০; হাঙ্গেরি-১০ এল সালভাদর-১; আর্জেন্টিনা-৪ হাঙ্গেরি-১; বেলজিয়াম-১ এল সালভাদর-০; বেলজিয়াম-১ হাঙ্গেরি-১; আর্জেন্টিনা-২ এল সালভাদর-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : সো, ইউনিয়ন গ্রুপ রানার্স আপ : ফ্রান্স। গ্রুপ-ডি : ইংল্যান্ড-৩ ফ্রান্স-১; চেকোশ্লাভাকিয়া-১ কুয়েত-১; ইংল্যান্ড-২ চেকোশ্লাভাকিয়া-০; ফ্রান্স-৪ কুয়েত-১; ফ্রান্স-১ চেকোশ্লাভাকিয়া-১; ইংল্যান্ড-১ কুয়েত-০; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ইংল্যান্ড গ্রুপ রানার্স আপ : ফ্রান্স। গ্রুপ-ই : স্পেন-১ হন্ডুরাস-১; যুগোশ্লাভিয়া-০ উ. আয়ারল্যান্ড-০; স্পেন-২ যুগোশ্লাভিয়া-২; হন্ডুরাস-১ উ. আয়ারল্যান্ড-১; যুগোশ্লাভিয়া-১ হন্ডুরাস-০; উ. আয়ারল্যান্ড-১ স্পেন-০; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : উ. আয়ারল্যান্ড গ্রুপ রানার্স আপ : স্পেন। গ্রুপ-এফ : ব্রাজিল-২ সো. ইউনিয়ন-১; স্কটল্যান্ড-৫ নিউজিল্যান্ড-২; ব্রাজিল-৪ স্কটল্যান্ড-১; সো. ইউনিয়ন-৩ নিউজিল্যান্ড-০; ব্রাজিল-৪ নিউজিল্যান্ড-০; সো. ইউনিয়ন-২ স্কটল্যান্ড-২; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ব্রাজিল গ্রুপ রানার্স আপ : সো. ইউনিয়ন। সেকেন্ড রাউন্ড : গ্রুপ-১ : পোল্যান্ড-৩ বেলজিয়াম-০; সো. ইউনিয়ন-১ বেলজিয়াম-০; সো. ইউনিয়ন-০ পোল্যান্ড-০; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : পোল্যান্ড গ্রুপ-২ : প. জার্মানি-০ ইংল্যান্ড-১; প. জার্মানি-২ স্পেন-১; ইংল্যান্ড-১ স্পেন-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : প. জার্মানি গ্রুপ-৩ : ইতালি-২ আর্জেন্টিনা-১; ব্রাজিল-৩ আর্জেন্টিনা-১; ইতালি-৩ ব্রাজিল-২; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ইতালি। গ্রুপ-৪ : ফ্রান্স-১ অস্ট্রিয়া-০; উ. আয়ারল্যান্ড-২ অস্ট্রিয়া-২; ফ্রান্স-৪ উ. আয়ারল্যান্ড-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ফ্রান্স। সেমি-ফাইনাল: ইতালি-২ পোল্যান্ড-০; প. জার্মানি-৩ ফ্রান্স-৩; ** টাইব্রেকারে খেলার ফলাফল না হওয়ায় ‘সাডেন ডেথ’ এ প. জার্মানি জয়লাভ করে। তৃতীয় স্থান : পোল্যান্ড-৩ ফ্রান্স-২; ফাইনাল: ইতালি-৩ প. জার্মানি-২ (আলতোবেলি, কসিও, রোসি) (গার্ড মুলার-২) চ্যাম্পিয়ন : ইতালি রানার্স আপ : প. জার্মানি তৃতীয় স্থান : পোল্যান্ড। প্রথম সেমি-ফাইনালে ইতালির ‘সোনার ছেলে‘ পাওলো রোসি একাই সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। তার জোড়া গোলে ইতালি ২-০ গোলে হারাল পোল্যান্ডকে। অপর সেমি-ফাইনালে জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে লড়াই হলো হাড্ডাহাড্ডি। এটিকে বিশ্বকাপের ইতিহাসের তো বটেই, বলা যায় শতাব্দীর ইতিহাসের সেরা ম্যাচ। ৯০ মিনিটে খেলার কোন ফয়সালা হলো না। খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটেও কোন জয়-পরাজয় নির্ধারিত না হওয়ায় শেষ ভরসা টাইব্রেকার। তাতেও খেলা ৫-৫ গোলে অমীমাংসিত থাকলে খেলার নিষ্পত্তির জন্যে প্রয়োজন পড়ে ‘সার্টেন ডেথ’র। শেষ পর্যন্ত ‘সার্টেন ডেথ’এ ৩ (৮)-৩ (৭) গোলে জিতে প. জার্মানি ফাইনালে ওঠে। স্বপ্নের ফাইনালে ইতালির মুখোমুখি জার্মানরা। মাদ্রিদের ফাইনালে রুমেনিগে-ব্রিটনাররা যা পারলেন না রোসি একাই তাই করলেন। আলতোবেলি, কোসিওর সাথে গোল করে ইতালিকে তৃতীয়বারের মতো কাপ জিতিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপের আগে রোসির নাম অতটা পরিচিত ছিল না। বিশ্বকাপের পরে তার নাম সবার মুখে মুখে। ব্রাজিলের জিকো-সক্রেটিস, ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনিরা যা পারলেন না রোসি সেটাই করলেন। বলা হয়, রোসিকে সাজা মওকুফ করে জেল থেকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে খেলানো হয়। তার যোগ্য প্রতিদান দেন তিনি। খল-নায়ক থেকে বনে যান মহানায়কে। ৪০ বছর বয়সী অধিনায়ক গোল-কিপার দিনো জফের হাতে শোভা পায় বিশ্বকাপের ১২তম আসরের শিরোপা। যদিও ডিফিন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়েও বিশ্বকাপের আগে ইতালি অতটা ফেবারিট ছিল না। এ বিশ্বকাপে টপ ফেবারিটের শীর্ষে ছিল ব্রাজিল-জার্মানির নাম। তৃতীয় স্থান পায় পোল্যান্ড। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তারা ৩-১ গোলে হারায় ফ্রান্সকে। দ্বাদশ বিশ্বকাপে ইতালির নেতৃত্ব দেন গোল-কিপার দিনো জফ আর প. জার্মানির কার্ল হাইঞ্জ রুমেনিগে। দ্বাদশ বিশ্বকাপে মোট ১৪৬টি গোল হয়। দ্বাদশ বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোল করেন ইতালির সোনার ছেলে পাওলো রোসি। তিনি এ বিশ্বকাপে ৬টি গোল করে ‘টপ স্কোরার’ হন এবং ‘গোল্ডেন বুট’ লাভ করেন। টুর্নামেন্ট সেরাও হন তিনি। লাভ করেন ‘গোল্ডেন বল’। হ্যাট্রিক করেন জার্মানির রুমেনিগে, হাঙ্গেরির কিস, ইতালির পাওলো রোসি। দ্বাদশ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করেন ব্রাজিলের রেফারি সিজার কোয়েল। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ লেখক পরিষদ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রকাশিত দুই শতাধিক বইয়ের লেখক e-mail : [email protected]
×