এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চকরিয়া মাতামুহুরী নদী থেকে ড্রেজিংয়ের নামে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির হিড়িক পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলেও কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন উত্তোলনকৃত বালু নির্দিষ্ট পয়েন্টে মজুদ না রেখে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে চকরিয়ার প্রতিটি জনপদে মাতামুহুরী নদীর বালু সয়লাব হয়ে পড়েছে। এ কারণে জেলা প্রশাসনের অধীন চকরিয়া উপজেলার অন্তত ১৫টি সরকারী বালু মহালে গত একমাস ধরে বালু বিক্রি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদাররা। এতে করে মহাল ইজারা খাতে জেলা প্রশাসন অন্তত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর নাব্য ফেরাতে পাউবোর পক্ষ থেকে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে চকরিয়া বেতুয়াবাজার ব্রিজ পয়েন্ট থেকে উপরে-নিচের অংশ মিলিয়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় খনন কাজ চলছে। বর্তমানে ঠিকাদারের লোকজন উত্তোলনকৃত বালু নদী থেকে বেতুয়াবাজার-বাঘগুজারা সড়কের পাশে বিশাল জায়গায় মজুদ করছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, ড্রেজিংয়ের নামে সরকারী টাকা খরচ করে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও বেশির ভাগ বালু ফের পানির সঙ্গে নদীতে নেমে যাচ্ছে। তীর এলাকায় শক্তিশালী মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর একাধিক পয়েন্টে ভাঙ্গন সৃষ্টি ছাড়াও ফাটল দেখা দিয়েছে আশপাশের ফসলি জমিতে। উত্তোলনকৃত বালু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রতিদিন ৫০-৬০টি ডাম্পার ট্রাকে করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু বিক্রি করে আসছে। ফলে বালু ভর্তি ভারি ট্রাক চলাচলের কারণে বর্তমানে বেতুয়াবাজার-বাঘগুজারা সড়ক ভেঙ্গে একাধিক খানা-খন্দে ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনগণের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধীনে চকরিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫টি বালু মহাল রয়েছে। তারমধ্যে খুটাখালী ইউনিয়নে চারটি, ডুলাহাজারা তিনটি, পাগলিরবিলে একটি, ফুলছড়িতে একটি, ফাসিয়াখালীতে দুইটি ও কোনাখালীতে একটি। প্রতিবছর জেলা প্রশাসন ওই ১৫টি বালু মহাল ইজারা দিয়ে অন্তত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে থাকে। অনুরূপভাবে গত মাসে এসব বালু মহাল নতুনভাবে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় মাতামুহুরী নদীর তিন কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করতে প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কার্যাদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে গতমাস থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। তিনি বলেন, কার্যাদেশে উত্তোলনকৃত বালু অন্যত্র বিক্রি করার কোন নির্দেশনা নেই। তবে উত্তোলনকৃত বালু ফের যাতে নদীতে নেমে না যায় সেই জন্য অনুকূলস্থল থেকে সরিয়ে অন্যত্র মজুদ করার কথা বলা হয়েছে।
কিছু কিছু বালু বাইরে বিক্রিও করা হচ্ছে দাবি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সয়লাভ হোসেন বলেন, বালু উত্তোলনের পর বাইরে বিক্রি করতে কার্যাদেশে কোন ধরনের নির্দেশনা নেই সত্য। তবে উত্তোলনকৃত বালুগুলো যাতে ফের নদীতে নেমে না যায়, সেইজন্য কোন উপায় নেই দেখে আমরা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরউদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, কার্যাদেশ লঙ্ঘন করে উত্তোলনকৃত বালু বাইরে বিক্রি করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: