ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখেই যমুনায় ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

বৈশাখেই যমুনায় ভাঙ্গন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বর্ষার আগে বৈশাখেই ভাঙনের শব্দ যমুনায়। থাবা পড়েছে চরগুলোতে। নদী ভাঙতেও শুরু করেছে। লোকজন ঘর গৃহস্থালির জিনিসপত্র নিয়ে ছুটছে। আশ্রয় নিচ্ছে কোন শুকনো ভূমিতে। কখনও বাঁধের ওপর। বসতভিটা, জমিজিরাত নদী গিলে ফেললে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আশ্রিতরা একসময় বছরের পর বছর ধরে থেকে যায়। কখনও বাস্তুহারা হয়ে আশ্রয় নেয় অন্য কোথাও। তবে নদীর কাছাকাছি থাকে। প্রতীক্ষায় থাকে নদী কখন চর জাগিয়ে ফিরিয়ে দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই চরভূমি চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে। প্রহরায় থাকে লাঠিয়াল। এক সময়ের জোতদার হয়ে যায় প্রভাবশালীদের প্রজা। যমুনা পাড়ের নিরন্তন চলা এই খেলায় ভাঙন থাবা দিয়েছে বগুড়ার সারিয়াকান্দির দূর্গম চর এলাকা। বর্ষা মৌসুমের আগেই তাদের শঙ্কিত দিনলিপি শুরু। গেল দুই সপ্তাহে কাজলা ইউনিয়নের নদী পাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার অংশজুড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকানোর কোন উদ্যোগ নেই। এলাকাবাসী বলছেন, ভাঙন ঠেকানো না গেলে পাঁচবাড়িয়া ও টেংরাকুড়া চর থাকবে না। ভাঙনের থাবায় পড়ে ইতোমধ্যে উত্তর টেংরাকুড়া চরের প্রায় ২শ’ একর ফসলী জমি ও অন্তত দেড় শ’ বাড়িঘর গিলে ফেলেছে নদী। সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে অন্তত ৫শ’ একর ভূমি ও ৪শ’ বসতভিটা। একইভাবে পাকুড়িয়া চরের দেড় শ’ একর ফসলী জমি ও দুই শ’ বসতভিটা ভাঙনের মুখে। এলাকাবাসী জানালেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে দুর্গম এই চরে ভাঙন লেগেই আছে। কাজলা ইউনিয়নের পাকুড়িয়া চরের বড় একটি অংশ নদীগর্ভে। বেনীপুরপাড়া ও মহুরীর চরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। উত্তর টেংরাকুড়া, পাঁচবাড়িয়া, বেড়ার অর্ধেক আর নেই। কাজলা ইউনিয়নের জামথল খেয়াঘাট সংলগ্ন বেড়া পাঁচবাড়িয়া উত্তরটেংরাকুড়া পাকুড়িয়ায় এলাকায় ভাঙছে নদীর পূর্ব ধারে। জামথলের খেয়াঘাটটি আধা কিলোমিটারেরও বেশি উত্তরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এইসব চরে আবাদী ভূমি ছিল অন্তত ৫ হাজার একর। ভাঙনের থাবায় বাস্তুহারা হয়েছে ২ হাজারেরও বেশি পরিবার। বসতভিটা ও জমিজিরাত হারিয়ে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে। কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছরে মুহুরীর চরের অর্ধেক নদী গর্ভে চলে গেছে। এই চরে তার ৬০ বিঘা, ময়না শেখের ৬০ বিঘা, সিদ্দিক মেম্বরের এক শ’ বিঘা জমি ছিল। এখন এক কানি জমিও নেই। বেড়া পাঁচবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক স্কুলটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোশাররফ জানান, গত পাঁচ বছরে এই এলাকার কয়েকটি চর যমুনার পেটে চলে গিয়েছে। যে হারে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আরও কয়েকটি চরের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, যমুনা নদী কয়েকটি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। বগুড়া সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা দেখভাল করে বগুড়া পাউবো। সারিয়াকান্দিতে যমুনার ডান তীর সংরক্ষণ করে বগুড়া কার্যালয়। ভাঙনের বিষয়টি ওপর মহলে অবহিত করা হয়েছে। জামথল ঘাটটির মূল অংশ পড়েছে জামালপুর জেলায়। পাউবো জামালপুরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পাউবোর উর্ধতন আরেকটি সূত্র জানায়, সারিয়াকান্দির কাজলা ইউনিয়নের ও জামালপুরের বালিজুড়ি ইউনিয়নের ৭ কিলোমিটারেরও বেশি তীর সংরক্ষণের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনও অনুমোদন মেলেনি।
×