ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি পাবনার আহসান শাহ!

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি পাবনার  আহসান শাহ!

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৭ এপ্রিল ॥ পাবনার আলহাজ আহসান উদ্দিন শাহ বিশে^র সবচেয়ে বেশি বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। তার বয়স ১২৬ বছর। বিশে^র সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ব্যক্তি ইন্দোনেশিয়ার সোদিমেদজো গত বছর ৩০ এপ্রিল ১৪৬ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুর পর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বয়সের মানুষ হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠে পোল্যান্ডের ইসরায়েল ক্রিস্টালের, যার বর্তমান বয়স ১১৩ বছর। কিন্তু আহসান উদ্দিন শাহ বয়স ১২৬ বছর। সে হিসেবে বিশে^র সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি আহসান উদ্দিন শাহ দাবি তার পরিবারের। তার বাড়ি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বিএল বাড়ি গ্রামে। আহসান উদ্দিনের জন্ম ১৮৯২ সালে। ১৪ সন্তানের জনক তিনি। তাদের মধ্যে সাতজন ছেলে ও সাতজন মেয়ে। মুক্তিযুদ্ধের আগেই তাঁর প্রথম স্ত্রী মারা যান। ওই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেন চার ছেলে ও চার মেয়ে। পরে তিনি ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত পাঁচ ছেলে ও চার মেয়েসহ মোট নয় সন্তান জন্ম দেন তাঁর দুই স্ত্রী। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি আরও দুই ছেলে ও তিন মেয়েসহ মোট পাঁচ সন্তানের বাবা হন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এখনও বেঁচে আছেন। বয়স জানতে চাইলে আহসান শাহ জানান, ঈশ্বরদীর পাকশীতে যখন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, তখন তার বয়স ১৮-২০ বছর হবে। তিনি জানান, ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের সময় বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে অনেক আড্ডা দিয়েছেন। রেল লাইনের নির্মাণের জন্য যখন মাটি কাটার কাজ শুরু হয় তখন তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে ওই রাস্তার ওপর ডাংগুলি খেলেছেন, সেখানে গরু চরিয়েছেন। জানা গেছে, অবিভক্ত ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তর পূর্ববঙ্গের সঙ্গে কলকাতার সহজ যোগাযোগের কথা বিবেচনা করে ব্রিটিশ শাসিত ভারত সরকার ১৮৮৯ সালে এই অঞ্চলে রেলপথ তৈরির পরিকল্পনা করে। ১৯০৮ সালের দিকে সরকার ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ তৈরির কাজ শুরু করে। ওই বছরই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের মঞ্জুরি লাভ করে। এর পরের বছর ১৯০৯ সালে পদ্মায় পাকশিতে সেতু নির্মাণে জরীপ করা হয়। ১৯১০-১১ সালে প্রথম কাজের মৌসুম শুরু হলে ভয়াল পদ্মার দুই তীরে সেতু রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে মূল সেতুর কাজ শুরু হয় পরের বছর ১৯১২ সালে। এর তিন বছর পরই ১ জানুয়ারি ১৯১৫ সালে এক ডাউন লাইন দিয়ে প্রথম চালু হয় মাল গাড়ি। দুই মাস পরেই ৪ মার্চ ১৯১৫ সালে সেতুর উপর ডবল রেল লাইন দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভারতের গবর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড চার্লস হার্ডিঞ্জ, যার নামে বর্তমানে সেতুটির নামকরণ। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া এ মানুষটির প্রিয় খাবার দুধ কলা দিয়ে ভাত। ছোট বেলা থেকেই তিনি নিয়মিত গরুর দুধ পান করেন। এখনও নিজের হাতে খাবার খেতে পারেন। বয়স্ক এ মানুষটি ইদানীং কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চোখে কম দেখছেন, কানেও তুলনামুলকভাবে কম শুনছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আহসান উদ্দিন জানান, যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখনই তিনি ৮ সন্তানের জনক। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের সহায়তা করেছেন। তার তৃতীয় ছেলে আফজাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধে যায়। সে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। আহসান উদ্দিনের ছোট ছেলে সংবাদকর্মী গোলাম মওলা বলেন, তার বাবা তাঁর দীর্ঘজীবন পরিক্রমায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন যেমন দেখেছেন, তেমনি জীবদ্দশায় ব্রিটিশ শাসিত সরকার, পাকিস্তান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের শাসন দেখে যেতে পারছেন। তার দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি হলো নিয়ন্ত্রিত জীবন ও খাদ্যাভাস।
×