ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নূহ-উল-আলম লেনিনের জন্মদিনে নিবেদিত গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

নূহ-উল-আলম লেনিনের জন্মদিনে নিবেদিত গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনীতির সঙ্গে লেখক জীবনের চমৎকার সমন্বয় ঘটানো এক ব্যক্তিত্ব নূহ-উল-আলম লেনিন। যদিও পরম্পরাগতভাবে স্থির করেছিলেন রাজনীতিই হবে তার জীবনের আধার। মানবকল্যাণ আর সমাজ পরিবর্তনের পথে যাত্রা করা সেই জীবনটিই একসময় ধাবিত হয় সৃষ্টিশীলতার পথরেখায়। রাজনীতিবিদের পরিচয়কে ছাপিয়ে হয়ে ওঠেন কবি। সেই সঙ্গে এগিয়ে যায় প্রবন্ধ ও গবেষণামূলক লেখালেখি। প্রকাশিত হলো তার সেই লেখনীনির্ভর আলোচনামূলক গ্রন্থ ‘বহুমাত্রিক একলব্য লেখক নূহ-উল-আলম লেনিন’। কবি অসীম সাহা সম্পাদিত গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান হলো মঙ্গলবার। একইসঙ্গে দিনটি ছিল নূহ-আলম-লেনিনের ৭১তম জন্মদিন। জন্মদিন উদ্যাপন আর বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান একাকার হয়ে উৎসবে পরিণত হয় আয়োজনটি। গ্রন্থ নিয়ে বিশিষ্টজনদের আলোচনার পাশাপাশি জন্মদিনের ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন লেখক। মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা থেকে বেরুনো বইটিতে লেখকের বিভিন্ন প্রবন্ধ ও কাবগ্রন্থ বিষয়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন লেখকের মূল্যায়ন ও সমালোচনা। একেকজন লেখক নূহ-উল-আলম লেনিনের লেখার একেকটি দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেদিক থেকে জীবিত একজন লেখককে এভাবে মূল্যায়ন করে প্রকাশিত গ্রন্থ একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, বইটির সম্পাদক কবি অসীম সাহা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। অনুভূতি ব্যক্ত করেন নূহ-উল-আলম লেনিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অনন্যার প্রকাশক এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক। অনুষ্ঠানে নূহ-উল-আলম লেনিনের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি ঝর্ণা রহমান। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, নূহ-উল-আলম লেনিন বহুমাত্রিক। তার দুটি দিক আছে। একটি কাজের আরেকটি ভাবনার। এটা খুব বিরল। খুব কম মানুষের থাকে। একসঙ্গে রাজনীতি ও কবিতাকে ধারণ করা খুবই বিরল ঘটনা। তিনি রাজনীতির সঙ্গে লেখালেখিকে সহাবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছেন। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বইটি ব্যতিক্রমী। তাকে নিয়ে স্তুতিমূলক লেখা নয় বরং তার লেখার সমালোচনামূলক আলোচনা উঠে এসেছে বইটিতে। তার সম্পর্কে সবাই যে ভাল কথা বলেছেন তা নয় অনেকে সমালোচনাও করেছেন। লেখকও নিশ্চয়ই এমনটা চেয়েছেন। এ থেকে লেখকের সততার ধারণা মেলে। কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, নূহ-আলম-লেনিন একজন ‘দেশকর্মী’। তিনি জ্ঞান ও কর্মকে একসঙ্গে মিলিত করতে পেরেছেন। যখন তরুণ বয়স তখন থেকেই তিনি লেখায় ও রাজনীতিতে নতুন চমক নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তার প্রেমের কবিতা মাদকতাময়। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম নিয়ে অনেক কবিতা রয়েছে। কিন্তু এখনও তিনি রোমান্টিক কবিতা লিখে চলেছেন। এটা প্রমাণ করে সজীব রয়েছেন প্রাণে মনে এবং লেখনীতে। অনুভূতি প্রকাশ নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশে আমার জন্ম। মা-বাবা দুজনেই কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বিপ্লব করে জীবন কাটাবো এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের যোগদানের পরেও আমি জননেতা হওয়ার দিকে, নির্বাচনের পথে যাইনি। আমি বরং লেখালেখির দিকে পথচলা শুরু করেছি। তিনি বলেন, স্মারক গ্রন্থ তাদেরই হয় যারা অনুসরণীয়। আমি অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব নই। সে জন্য স্মারক গ্রন্থ প্রকাশে রাজি ছিলাম না। কিন্তু অসীমের আগ্রহে ভিন্নধর্মী বইটি প্রকাশিত হলো। এতে আমার লেখালেখি প্রসঙ্গে আলোচনা ও মূল্যায়ন উঠে এসেছে। আমার লেখার দুর্বলতাগুলো জানার পাশাপাশি প্রশংসাও পেয়েছি এসব লেখায়। এর মাধ্যমে আগামীতে আমার লেখালেখি আরও গোছানো হবে। অসীম সাহা বলেন, বাংলা সাহিত্যের পরম্পরাকে ধারণ করে সাহিত্য রচনা করে চলেছেন। তার লেখালেখি অর্ধশতক ধরে ব্যাপ্ত। বাংলাদেশে মৃত্যু পরবর্তী সময়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে থাকে। আমার মনে হয়, লেখকের জীবদ্দশায় এটা হওয়া উচিত। সে কারণেই এ গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ। বইটিতে লেনিনের বিভিন্ন গ্রন্থের ওপর সমালোচনাধর্মী ৩৩টি রচনা স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে যতীন সরকার লিখেছেন ‘সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের স্বরূপ-দর্শন: ইতিহাসের দর্পণে’, মোহাম্মদ জামির হোসেন লিখেছেন ‘বাঙালি সমাজ ও সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ’, মুনতাসীর মামুন লিখেছেন ‘ইতিহাসের দায়পূরণের প্রচেষ্টা’, রতনতনু ঘোষ লিখেছেন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আকরগ্রন্থ’, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী লিখেছেন ‘মানুষের উত্তরাধিকার’, বিশ^জিৎ ঘোষ লিখেছেন ‘নূহ-উল-আলম লেনিনের কবিতা’, জাকির তালুকদার লিখেছেন ‘কালান্তরের অভিযাত্রী’ শুধুই স্মৃতিচারণ নয়’, স্বকৃত নোমান লিখেছেন ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির একটি আকর গ্রন্থ’, পিয়াস মজিদ লিখেছেন ‘স্বপ্নঘন কবিতাগুচ্ছ’ প্রভৃতি। মাসুম রহমানের আঁকা প্রচ্ছদে ২৫৬ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা। মুজিবনগর দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ইতিহাসের পাতায় মুজিবনগর দিবস। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। শিশু একাডেমিতে পিএসটিসির বর্ষবরণ ॥ রবিবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে পপুলেশন সার্ভিসেস এ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেন। বর্ষবরণের এ আয়োজনে সুরতীর্থ এবং পিএসটিসির কর্মীবৃন্দ দলীয়, একক সঙ্গীত এবং সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন।
×